টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যার কবলে পড়েছে দেশের ১০ জেলার মানুষ। বন্যা কবলিত জেলাগুলো হলো- সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, জামালপুর, নেত্রকোণা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ।
বন্যার পানি প্রবেশ করায় এইসব জেলার হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। ফলে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে। এতে করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। তারা বলছেন- ক্লাস পরীক্ষা না হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে ছেলে-মেয়েরা।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এ তথ্য জানিয়েছে। এর মধ্যে শুধু সুনামগঞ্জেই ৫৩৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। হাজার-হাজার মানুষ পানিবন্দি। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল। দেখা দিয়েছে নদীভাঙনসহ বিভিন্ন সমস্যা।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি সার্বিকভাবে কমছে, যা শনিবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় এ অঞ্চলের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে হেব।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। আগামী দুই দিন উত্তরের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার এবং উত্তর-পশ্চিমের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে ঝুঁকি বেশি থাকবে। এসব অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে জানিয়েছেন অনেকে।’
এদিকে সুনামগঞ্জের ৫০০ অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি থাকায় শ্রেণি কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গত ৩ জুলাই থেকে বিদ্যালয়ে গেলেও এসব বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী আসেনি। মৌলভীবাজারে কুশিয়ারা নদী (শেরপুর) বিপৎসীমার আট সেন্টিমিটার এবং জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খুরশেদ আলম বলেন, ‘সব প্রাথমিক বিদ্যালয় খুললেও মৌলভীবাজারের বন্যাকবলিত পাঁচটি উপজেলার ৯৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ আছে। পাশাপাশি কিছু বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যায়নি।’
গাইবান্ধা সদরসহ সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাইবান্ধা সদরে ১৭টি, ফুলছড়িতে ১৫টি, সাঘাটায় ২২টি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বিদ্যালয় বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ, দীগলবাক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় ৫০টির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পানি নেমে গেলেও এখনও সেগুলো পাঠদানের উপযোগী হয়নি। জেলার অনেক হাইস্কুলে হয়নি মূল্যায়ন পরীক্ষা।
বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যার কারণে তিন উপজেলার ৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় দুটি, একটি মাদরাসা ও ৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
সিলেট জেলায় অব্যাহত বৃষ্টিপাত কিছু কম থাকায় আগের দিনের তুলনায় শুক্রবার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জেলার নদ-নদীর ১১ পয়েন্টের মধ্যে ৯টি পয়েন্টে পানি কমেছে। সিলেটের জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেটের ৩১ উপজেলার ১০১টি ইউনিয়ন এখনও বন্যাকবলিত। এসব ইউনিয়নের এক হাজার ১৮০টি গ্রামের ছয় লাখ ২৬ হাজার ১৩৮ জন বন্যাকবলিত।
এদিকে টাঙ্গাইলের সব নদীর পানি বেড়ে গতকাল শুক্রবার সকালে চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। জেলার যমুনা ও ঝিনাই নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২০ ও ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। জানা যায়, জেলার নদীগুলোর পানি বাড়ায় ভূঞাপুর, গোপালপুর, কালিহাতী ও সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি। কয়েকটি এলাকায় নদীভাঙনে ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সাপের আতঙ্কে রয়েছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে যমুনা, ঝিনাই, ধলেশ্বরীসহ জেলার সব নদীর পানি বেড়েছে। আরও কয়েক দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। কুড়িগ্রামে বন্যার কবলে দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ১৪৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২০টি মাদরাসা রয়েছে। বন্যায় জেলার ৯টি উপজেলার প্রায় লক্ষাধিকের বেশি মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে গৃহপালিত পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। উপায়ন্তর না পেয়ে গরু-ছাগলের সঙ্গে থাকতে হচ্ছে পরিবারগুলোকে। অনেকে খোলা আকাশের নীচে নৌকায় রাত যাপন করছেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :