ভারতের পুরির পরে উপমহাদেশে সবচেয়ে বড় রথ টানা হয় ঢাকার ধামরাইয়ে। প্রতি বছর এ রথ টান দেখতে ভিড় করেন হাজারো মানুষ। এ বছরও এ উৎসবকে কেন্দ্র করে উপচে পড়া ভিড় তৈরি হয় ধামরাই বাজার এলাকায়। প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে তৈরি হয় ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড়।
রোববার (৭ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে ধামরাই বাজার এলাকায় মাধব মন্দির প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয় রথটান। রশি টেনে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে যাত্রাবাড়ী জগন্নাথ দেবের মন্দিরে নেওয়া হয় রথটি। এতে যোগ দেন নানা বয়সী হাজারো মানুষ।
এ সময় তারা জয় জগন্নাথ, জয় যশোমাধবসহ নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন।
রথটানে যোগ দিতে ধামরাইয়ের বাইশাকান্দা ইউনিয়নের পাইছাইল এলাকা থেকে এসেছেন কুমার সপ্তর্ষি রায়। তিনি বলেন, বিশ্ব জুড়ে ধামরাই রথযাত্রার পরিচিতি রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এ রথযাত্রায় দেশ বিদেশের বহু ভক্ত ও দর্শনার্থী যোগ দেন। ধামরাইয়ের ইতিহাস ঐতিহ্যের এই নিদর্শন দেখতে প্রতি বছর এখানে আসি।
পার্শ্ববর্তী সাভার থেকে রথটান দেখতে আসা পূজা সাহা বলেন, আমি এবার প্রথমবার এখানে এসেছি। বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এ রথের কথা সবসময় শুনেছি শুধু। এবারই প্রথম এলাম। খুব ভালো লাগছে। ঘুরে ঘুরে রথ দেখলাম।
স্ত্রী ও তিন বছরের শিশু কন্যাকে নিয়ে রথটান দেখতে আসা দেবাশীষ পাল বলেন, গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে এসেছি স্ত্রী ও কন্যাসন্তানসহ। শুনেছি এখানে অনেক বড় রথযাত্রা হয়। অনেক লোকের সমাগম হয়। এসে তেমনই দেখলাম। উৎসব উৎসব ভাব পুরো এলাকায়।
দেশ ছাড়াও দেশের বাইরে থেকেও এ রথটান দেখতে এসেছেন অনেকেই। সঞ্জয় পাল নামে এক ভারতীয় বলেন, আমি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতার শ্যামনগর থেকে এসেছি৷ এ বছর প্রথম বাংলাদেশে রথ দেখলাম। ভারতের অনেক জায়গায় রথ দেখেছি। এখানে একটু অন্যরকম। সকাল থেকে এখানে আছি। দেখে অনেক ভালো লাগছে।
সঞ্চয় গোস্বামী নামে অপর এক ভারতীয় বলেন, ধামরাইয়ের এ রথের কথা অনেক শুনেছি। এবারই প্রথম দেখতে এলাম৷ ভীষণ ভালো লাগছে।
রথটানের এ উৎসবে যোগ দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজির আহমদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় কুমার ভার্মা, ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এমএ মালো, ধামরাই পৌরসভার মেয়র গোলাম কবির, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান, ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খান মো. আব্দুল্লা আল মামুন।
শ্রী শ্রী যশোমাধব মন্দির পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নন্দ গোপাল সেনের সঞ্চালনায় এ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিচালনা কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জীবন কানাই দাস।
শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে প্রতি বছর এ রথটান অনুষ্ঠিত হয়। রথটান শুরুর মধ্য দিয়ে এটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সাত দিন পর আগামী ১৫ জুলাই উল্টো রথের মধ্য দিয়ে এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। আর এ উপলক্ষে মেলা চলবে মাসব্যাপী।
একুশে সংবাদ/ন.ক.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :