AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ড্রাইভার থেকে যেভাবে ফুলে-ফেঁপে ওঠে আবেদ আলী


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০৮:২৪ পিএম, ৮ জুলাই, ২০২৪
ড্রাইভার থেকে যেভাবে ফুলে-ফেঁপে ওঠে আবেদ আলী

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (বিপিএসসি) ড্রাইভার সৈয়দ আবেদ আলী (জীবন)। তিনি মাত্র ৮ বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে কুলির কাজ করেন। একটা সময় ফুটপথে ঘুমিয়ে নিদারুণ কষ্ট করছেন। এরপর গাড়ি চালানো শিখে পিএসসিতে চাকরি নেন। আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অর্জন করেছেন বিপুল সম্পদ। সঙ্গে ক্ষমতাও। ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

সম্প্রতি আবেদ আলীর বিরুদ্ধে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। ৮ জুলাই জানা গেছে আবেদ আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ১০-১২ বছর ধরে পিএসসির বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের যে তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে, সেই চক্রের অন্যতম সদস্য তিনি। এ চক্রটি এভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

পিএসসির ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য একটি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পিএসসি ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সেই অভিযুক্ত কর্মচারীদের একজন পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী।

May be an image of 2 people, beard and aircraft

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বেতলা গ্রামের বাসিন্দা। আব্দুর রহমান মীরের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আবেদ আলী মেজ। রহমান মীরের বড় ছেলে জাবেদ আলী কৃষি কাজ করেন। ছোট ছেলে সাবেদ আলী এলাকায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

গ্রামে আবেদ আলীর আলিশান বাড়ি। তাতে ঝুলানো ব্যানারে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ভোট চেয়েছেন

আবেদ আলী এলাকার মানুষের কাছে পরিচয় দেন শিল্পপতি হিসেবে। তিনি ঢাকাতে রিয়েল স্টেট ব্যবসা করেন। আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম দামি গাড়িতে চড়ে বেড়ান। আবেদ আলী নিজেও দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। এলাকার কেউ জানেন না তিনি ড্রাইভারের চাকরি করেন। কয়েক বছর ধরে এলাকার মানুষের দান-খয়রাত করে আসছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আবেদ আলীর বিত্তবৈভব ফুলে-ফেঁপে উঠার সঙ্গে সঙ্গে পারিবারিক ‘মীর’ পদবী পাল্টে নামের আগে ‘সৈয়দ’ পদবী ব্যবহার করছেন।

May be an image of 4 people, dais and text that says

আবেদ আলীর উত্থান নিয়ে তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম সম্প্রতি সমাবেশে বক্তব্য দেন। তিনি তার বাবার উত্থানের গল্প বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমার বাবা একদম ছোট থেকে বড় হয়েছেন। আমার বাবার বয়স যখন ৮ বছর, তখন পেটের দায়ে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় গিয়ে কুলিগিরি করে ৫০ টাকা রুজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এখন তিনি লিমিটেড কোম্পানির মালিক। তিনি কষ্ট করে বড় হয়েছেন।’

সম্প্রতি গণমাধ্যমে পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে আবেদ আলীর নাম উঠে আসলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

No photo description available.
বাড়ির সামনে অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকায় ইফতার করাচ্ছেন এলাকাবাসীদের

বছর খানেক পরে ডাসার উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। আর সেখানে আবেদ আলী সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে গ্রামের বাড়ি এসে প্রচারণা শুরু করেছেন। এলাকায় কোটি টাকার গাড়ি হাঁকিয়ে গণসংযোগ করছেন তিনি ও তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। দু-হাতে এলাকায় দান-খয়রাত করছেন। আবেদ আলী গ্রামে কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়ির পাশে মসজিদও করেছেন। অভিযোগ আছে, রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা দখল করে গরুর খামার ও মার্কেট নির্মাণ করছেন। উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামে বিপুল সম্পদ কিনেছেন। তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায়ও তার একাধিক বাড়ি রয়েছে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে রয়েছে থ্রি স্টর হোটেল।

May be an image of 1 person, beard, smiling and car
আবেদ আলীর ছেলে সিয়ামের দামি গাড়ি

একজন ড্রাইভার হঠাৎ করে এমন বিত্তবৈভবের মালিক হওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।

আবেদ আলী পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক এলাকার মানুষ তা জানতেন না। গত কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে এলাকায় এসে ১০০ জনকে এক কেজি করে মাংস বিতরণ করেন। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকের আইডি থেকে।

May be an image of 2 people and text

আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম (ডানে)। তিনি ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি

আবেদ আলীর ছেলে সিয়াম একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। তিনি ভারতের শিলংয়ে ও দেশের একটি নামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। তিনি ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। বাবা ও ছেলে নিজেদের প্রভাব জাহির করার জন্য বড় বড় নেতা ও আমলাদের সঙ্গে ছবি তুলে তা ফেসবুকে প্রচার করেন। আবেদ আলী নিজের ফেসবুক পেজে হোটেল নির্মাণের তথ্য তুলে ধরেছেন। গত ১৮ মে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমাদের নতুন হোটেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম আজ। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা।’

No photo description available.

এ সব বিষয়ে জানতে আবেদ আলীর ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামের মোবাইল নম্বরে একাধিক বার কল দিলেও রিসিভ করেননি। তাদের গ্রামের বাড়িও তালাবদ্ধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আবেদ আলী পরিবারের সকলে আগেই ইউরোপের ভিসা করে রেখেছেন। যেকোনো সময় দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন।

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, যারা অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জন করেছেন, তা নিয়ে সচেতন মহলের প্রশ্ন তোলা উচিত। সরকারের উচিত তাদের সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান করা। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে যারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন, তার যথাযথ তদন্ত হওয়া এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

No photo description available.
প্রশ্নফাঁসের বিনিময়ে অবৈধ অর্থ দিয়ে কেনা কম্বল বিতরণ করছেন আবেদ আলী ও তার ছেলে সিয়াম

দুর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, আবেদ আলীর সম্পদ অর্জন নিয়ে কেউ অভিযোগ দিলে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুসন্ধান করা হবে। 

 

একুশে সংবাদ/এনএস

Link copied!