সরকারি চাকরির সব পদে কোটা সংস্কারের দাবিতে এবং সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিক্ষোভ মিছিল করছেন আন্দলোনকারীরা। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ফের শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন তারা। এতে শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়েছে।
শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ অবরোধ করেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শাহবাগ মোড়ে যায়।
শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা সেখানে বসে পড়েন। এরপর শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা’, আপস না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আঠারোর পরিপত্র-পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক-মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘সারা বাংলায় খবর দে-কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নেই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে-ছাত্রসমাজ জেগেছে’, —ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, পুলিশ দিয়ে এ আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। প্রশাসনকে যৌক্তিক জবাব দিতে হবে। কোটা সংস্কারের পরই তারা আন্দোলন থেকে সরে আসবেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। কোনোভাবেই যাতে আন্দোলনকারীরা বাংলামোটরের দিকে এগোতে না পারে সেটি নিশ্চিতের চেষ্টা করছেন তারা।
এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের এক দফা দাবি এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, বিক্ষোভ ও সমাবেশ করতে বিকেল ৪টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হচ্ছেন বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি জায়গায় হামলার শিকারও হন তারা। তবে শাহবাগ মোডে ব্যারিকেডে আন্দোলনকারীদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশ সদস্যদের ঠেলে শাহবাগ মোড় ও মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পিছু হটতে বাধ্য হন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় কিছু শিক্ষার্থীকে পুলিশের সাঁজোয়া যানের ওপর উঠে উল্লাস করতে দেখা যায়। বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
অবরোধ কর্মসূচি শেষে রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘সারাদেশের যেখানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে, তার নিন্দা জানাচ্ছি আমরা। ১৮-এর পরিপত্র দিয়ে হাইকোর্টকে সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। এবার আর সেই সুযোগ আন্দোলনকারীরা দেবে না। আইন করে কোটার সমাধান করতে হবে। এই আন্দোলনের শুরু থেকে হাইকোর্টকে ঢাল বানিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে টালবাহানা করছে সরকার। নিজেদের কাজ তারা না করে আদালতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
সংসদের জরুরি অধিবেশন ডেকে আইন পাসের কথাও জানান কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। নাহলে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। আর শুক্রবার সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে বিকেল ৪টায় ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হবে।
আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তখন সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল ৩০ শতাংশ। এছাড়া ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা ছিল। সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ।
কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর রুল দেন হাইকোর্ট। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন চেম্বার আদালতে হয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে ৪ জুলাই। রিট আবেদনকারীপক্ষ সময় চেয়ে আরজি জানালে সেদিন আপিল বিভাগ শুনানি পিছিয়ে দেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। এ অবস্থায় কোটা পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে গত মঙ্গলবার আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থী।
দুই শিক্ষার্থী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য বুধবার (১০ জুলাই) আপিল বিভাগে ওঠে। শুনানি শেষে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। কিছু পর্যবেক্ষণ, নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেয়া হয়। এই স্থিতাবস্থা চার সপ্তাহের জন্য উল্লেখ করে আপিল বিভাগ আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :