প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স যখন বলেছি, তখন এটা করেই ছাড়ব। আপন-পর জানি না, দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাত যখন দিয়েছি, আমি ছাড়ব না। যেখানে হোক, যেই হোক, আমি তাকে ধরবই।
রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে গণভবনে চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হয়েছি বলেই, দুর্নীতিবাজ ধরা পড়ছে। অনিয়ম-জঞ্জালগুলো পরিষ্কার হচ্ছে। এজন্য আমার ইমেজ নষ্ট হলে হোক, আমি তাদের ছাড়ব না। এই কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে, এখানে কোনো দ্বিধা নেই।
তিনি বলেন, যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিসিএসে পাশ করেছেন তাদের খুঁজে বের করতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ব। তিনি বলেন, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমার অফিসের একজন পিয়ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। সে ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। তাকেও বের করে দিয়েছি। আমি যখন দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স বলেছি তা করেই ছাড়ব।
সরকার প্রধান বলেন, ২৪তম বিসিএসের মাধ্যমে দুর্নীতি শুরু করেছে বিএনপি। তবে, আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। অনেকে বলে আওয়ামী লীগের ইমেজ খর্ব হচ্ছে; আমি তা মনে করি না। আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখব। আর আমরা অভিযান চালাচ্ছি বলেই আপনারা জানতে পারছেন। সাংবাদিকরা খুঁজে বের করুক। আমরা ব্যবস্থা নেব।
কোটা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, যারা আন্দোলন করছে, তারা আইন মানে না। সংবিধান চেনে না। সরকার কিভাবে চলে, তা নিয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই। আদালত তো রায় দিয়েছে, এখানে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। এটি আন্দোলনকারীদের বুঝতে হবে। কোটা আন্দোলন এর পরেও চালিয়ে গেলে তারা চালাবে। তবে জানমালের ক্ষতি হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবার তারা (শিক্ষার্থীরা) এ ধরনের আন্দোলন করছিল। আন্দোলন তো না সহিংসতা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছিল। তখন আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম সব কোটা বাদ দিয়ে দিলাম। তখনই বলেছিলাম যে কোটা বাদ দিলে দেখেন কী অবস্থা হয়। এখন দেখেন কী অবস্থা তৈরি হয়েছে?
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? তা তো আমরা দিতে পারি না।
এসময় সমালোচনাকারীদের মানসিকভাবে অসুস্থ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন তারা মানসিকভাবে অসুস্থ। মানসিক অসুস্থতা থেকে কিছু মানুষ বারবারই অপপ্রচার করে। তারা কি জেনে-বুঝে এসব করছেন? নাকি শুধুই আমাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে? ভারত সফরের পর বলা হলো- দেশ বেচে দিয়েছি, এখন বলছে চীন কিছু দেয়নি। এগুলো যারা বলেন, তাদের মানসিক অসুস্থতা আছে৷ তাছাড়া, এভাবে এসব নিয়ে বানোয়াট প্রশ্ন তোলার কথা না।
এ সময় সফর সংক্ষিপ্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রচণ্ড জ্বরের কারণে পুতুল আমার সঙ্গে চীনে যেতে পারেনি৷ মাত্র ছয় ঘণ্টা আগে দেশে ফিরেছি বলে এত সমালোচনা-তোলপাড়। অফিসিয়াল কাজ শেষ হলে, সফরে গিয়ে শপিং বা ঘোরাঘুরি করি না। এবারই প্রথম না, এর আগেও অনেকবার এভাবে সফর শেষ করে চলে এসেছি বলে জানান তিনি।
দেশে ৩টি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠা ও সেখানে বিনিয়োগে চীনা ব্যবসায়ীরা আগ্রহী বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক সফরে আমি গত ৮ থেকে ১০ জুলাই চীন সফর করি। ৮ জুলাই বেইজিং পৌঁছালে বিমানবন্দরে আমাকে লাল গালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। ৯ জুলাই সকালে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। আমি এআইআইবিকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নদী খনন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ উপযোগী খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। এরপর আমি দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না- শীর্ষক একটি ব্যবসায়িক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করি। সেখানে বাংলাদেশ ও চীনের ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।
সরকারপ্রধান বলেন, সম্মেলনে আমি চীনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বিশ্বের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাই। এ সময় অবকাঠামো, আইসিটি, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ জ্বালানি খাত, জলবায়ু-সহনশীল স্মার্ট ফার্মিং, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবুজ প্রযুক্তি ও উন্নয়ন খাতে বৃহত্তর বিনিয়োগের আহ্বান জানাই।
তিনি বলেন, চীনে বাংলাদেশ দূতাবাস, বিডা, বিএসইসি এবং চায়না ওয়ার্ল্ড সামিট উইং আয়োজিত এ সম্মেলনে চীনের ভাইস মিনিস্টার অব কমার্স লি ফেই, চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওয়াং টং ঝু, এইচএসবিসি চায়নার প্রেসিডেন্ট ও সিইও মার্ক ওয়াং, হুয়াওয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন লিন বক্তব্য দেন এবং তাদের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন। এই সম্মেলনে বাংলাদেশের ১০টি কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে চীনের বিভিন্ন কোম্পানির ১৬টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে তিনটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ও সেখানে চীন রিয়েল এস্টেট এবং হসপিটালিটি খাতে বিনিয়োগের সুযোগের কথা উল্লেখ করলে চীনের ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ দেখান। একই সঙ্গে এআইআইবিকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নদী খনন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ উপযোগী খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি।
একুশে সংবাদ/ন.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :