AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

‘কোটা আন্দোলন‍‍` আলোচনার টেবিলেই সমাধান সম্ভব


Ekushey Sangbad
এসআই শফিক
০৮:০৯ পিএম, ১৪ জুলাই, ২০২৪
‘কোটা আন্দোলন‍‍` আলোচনার টেবিলেই সমাধান সম্ভব

কোটা সংস্কার নিয়ে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা উদ্বেগজনক। হাইকোর্টে যে রায় দেওয়া হয়েছে এবং ছাত্ররা প্রশাসনের কাছে যে দাবি তুলেছে-এমন অবস্থায় আলোচনার টেবিলে বসে সমাধানের চেষ্টা করা সবচেয়ে ভালো উপায় বলে জানিয়েছেন রাজনীতিক নেতারা। তাদের মতে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। 

পাশাপাশি সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে টানা দুই সপ্তাহ সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকরা। এ দুই ইস্যুতে দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।


জানা গেছে, সর্বশেষ রোববার সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, সরকার প্রয়োজনে অথবা চাইলে কোটা সংস্কার করতে পারবে। এরইমধ্যে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি মেনে নিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। 

এছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন কোটা আন্দোলনকারীরা। রোববার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি পেশ করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তবে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে রীতিমতো আরও ‘কঠোর’ অবস্থানের বিষয়টি উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সরকারের কিছুই করার নেই।

এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করার কথা বলছে সরকার। একই সঙ্গে সরকার কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ সমস্যা নিয়ে রাজনীতিবিদরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এর আগে ২০১৮ সালে সরকার হুট করে সমগ্র কোটাপদ্ধতি বাতিল করে দেয়। সরকারের এই সিদ্ধান্ত আমি সঠিক মনে করি না। এটা ছিল আবেগতাড়িত হয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত এবং সংবিধানের নির্দেশনার বাইরে। সংবিধানে বলা আছে, অন্য আইনে যা–ই থাকুক, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ পদক্ষেপ সরকার নিতে পারবে। তবে একটি রাষ্ট্রে কোটাপদ্ধতি অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে না। কোটাপদ্ধতি হলো বৈষম্যবিরোধী পদক্ষেপ। বৈষম্য কমে গেলে কোটা কমে যাবে এবং সেটি একসময় বিলুপ্ত হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ভুল পথে নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ভুল পথে নেওয়ার লোকের অভাব নেই। রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কারা উসকানি দিয়েছে, কারা দায়ী সবগুলো বিষয় তদন্তের পর বলা যাবে। যেহেতু একটি ঘটনা ঘটেছে, সেটি তদন্ত করা হবে। তদন্তের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। তদন্তের আগে আমি কিছু বলতে পারছি না। 

তিনি বলেন, যে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে মামলা করতে পারে। তদন্তের পর যদি এটার মেরিট না থাকে তাহলে অটোমেটিক বাতিল হয়ে যাবে। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের বলেছেন, কোটাব্যবস্থা রাখাটাই অযৌক্তিক। প্রতিবন্ধী, নারী বা সুনির্দিষ্ট কোনো এলাকাকে যদি অনগ্রসর মনে করা হয়, তাকে সমতায় আনার জন্য কিছু কোটা দেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ ন্যূনতম কোটা এটাই সংবিধানের স্পিরিট। মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংবিধান অনুমোদন করে না। মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্ম, যাদের কোটা দেওয়া হয়েছে, এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এটা বংশপরম্পরায় সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে এবং এই বৈষম্যের কারণে সমাজটা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, কোটাবিরোধী আন্দোলনকে একটা রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। ছাত্ররা রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করছে না। এটা তাদের কৌশল। আমি ধারণা করি, দেশের ৯৯ শতাংশ জনগণের মতামত হলো, কোটাপদ্ধতি দরকার নেই। এটা বৈষম্য সৃষ্টিকারী, মেধাবিকাশের এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

এ বিষয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, শিক্ষার্থীরা কোটাপদ্ধতির সংস্কারের বিষয়ে আন্দোলন করছেন, কোটাপদ্ধতি বাতিল চাননি। কোটাপদ্ধতি সংস্কারের বিষয়টি এমন কোনো বিষয় নয়, যেটির জন্য মারামারি বা লাঠালাঠি করতে হবে। এই আন্দোলনের যৌক্তিক পরিণতি আলোচনার টেবিলেই হতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন হাসানুল হক ইনু।

 তিনি বলেন, এখন কোটাপদ্ধতি সম্পূর্ণ বাতিল বা সম্পূর্ণ বহাল কোনোটিই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। এখন কোটার সংস্কার প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকারের উচিত এখনই কোটা সংস্কার কমিশন গঠন করা। এই কমিশনের কাজ হবে প্রতিবন্ধী, নারী, আদিবাসী ও মুক্তিযোদ্ধা-কাদের জন্য কত হারে কোটা থাকলে যৌক্তিক হবে, সেটি প্রস্তাব আকারে তুলে ধরা। পাশাপাশি কমিশন অংশীজনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে কোটা সংস্কার এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর বিলুপ্তির বিষয়ে একটি কাঠামো তৈরি করবে। সেখানেই উল্লেখ থাকবে, কত সময়ের মধ্য দিয়ে কীভাবে কোটা ধীরে ধীরে কমে আসবে এবং বিলুপ্ত হবে। এটি রাষ্ট্রের নির্বাহী আদেশেই করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আইন করার প্রয়োজন নেই।

এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আদালতের ওপর দায় না রেখে মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানের আলোকে কোটা সমস্যার সমাধানে সরকারেরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এ দায়িত্ব সরকারের। কারণ, কোটাব্যবস্থায় সংস্কারের দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের বা সরকারের। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়েও কোটা সংস্কারে সরকারের দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও সংস্কারের কথা বলছেন। এখানে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই যৌক্তিকভাবে সংস্কার চাইছে। ফলে এখন অপেক্ষায় না থেকে সরকার উদ্যোগ নিতে পারে। আমি মনে করি, কোটা পুনর্বহাল বা বাতিল নয়; নারী, প্রতিবন্ধী, অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান বিবেচনায় কোটা সংরক্ষিত রেখে কোটাব্যবস্থার যুক্তিযুক্ত সংস্কারই বাঞ্ছনীয় হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলন অত্যন্ত ন্যায্য। ২০১৮ সালে যদি সরকার একটি জাতীয় কমিশন করে সবার মতামত নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করত, তাহলে আজকের এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এখন উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা আবার আন্দোলনে নেমেছেন। কোনো ধরনের দীর্ঘসূত্রতা না করে সরকারের উচিত দ্রুত এটি সমাধান করা। এ ক্ষেত্রে সরকার যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে, উচ্চ আদালত সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেবেন বলে মানুষ প্রত্যাশা করে।

তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানদের জন্য কোটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা আপত্তি নেই। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও এই বিশেষ সুযোগ কতটা যৌক্তিক, সে প্রশ্ন উঠেছে। ছাত্রদের এই ন্যায্য আন্দোলনকে সরকার দেখছে রাজনৈতিকভাবে। তারা এখানে বিরোধী দলের উসকানি খুঁজছে। জনগণের ভোটের ওপর দাঁড়িয়ে নেই বলে তারা যেকোনো আন্দোলনে ভয় পায়, উসকানি খোঁজে।

উল্লেখ্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে অচলাবস্থা চলছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যয় নিয়ে শিক্ষকরা যখন সর্বাত্মক কর্ম-বিরতিতে ঠিক তখন সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সমাধান চেয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সারা দেশে বিক্ষোভ ও ব্লকেডের মতো কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

দুইপক্ষের এমন আন্দোলনে স্থবির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। শিক্ষাসূচিতে লেগেছে বড় ধাক্কা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু করা যায়নি প্রথম বর্ষের ক্লাসও। তবে সরকার কোটার বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন বিষয় বলে এড়িয়ে গেলেও শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে কোনো ধরনের ভ্রূক্ষেপ করছে না।

পহেলা জুলাই থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি চললেও এখনো পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি। এমনকি দুই মন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার আলোচনার সময় ঠিক হলেও শেষ পর্যন্ত আলোচনায় বসতে পারেননি শিক্ষকরা। এমতাবস্থায় শিক্ষকদের আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। 

সর্বাত্মক কর্মবিরতি কতদিন করবেন শিক্ষকরা, সমাধান না হলে কী করবেন-এসব প্রশ্ন সামনে আসছে। শুধু তাই নয়, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বাত্মক কর্মবিরতির কারণে সেমিনার, লাইব্রেরি, প্রশাসনিক কার্যক্রমের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গগুলো বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট শাখা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

 

একুশে সংবাদ/ এসএডি

 

 

Link copied!