লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক আব্দুস সোবহান নানান অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে জেল খেটে পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিধি বহির্ভূতভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সাথে বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি করে বিদ্যালয়ের প্রায় ৪৪ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ এবং নিয়োগ বানিজ্যের মতো নানাবিধ অপকর্ম ছাড়াও বন্যার্তদের সাহায্যের নামে বিদ্যালয়ে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অব্যহতি চেয়ে ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য, অভিভাবক, প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ সর্বসাধাণের স্বাক্ষর সম্বলিত পৃথক পৃথক ৩টি অভিযোগ দিয়েছেন প্রশাসনের উর্ধতন মহলে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ছাত্রীর সাথে অনৈতিক কেলেঙ্কারির মামলায় জেলখাটা হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক আব্দুস সোবহান আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে দলীয় প্রভাবে জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করে বিধি বর্হিভূত ভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম, দূর্নীতি, বিভিন্ন উপায়ে অর্থ আত্মসাৎ, কর্মচারী নিয়োগে বানিজ্য সহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হন। তিনি ক্রীড়া শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকে নানা কৌশলে ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের সৃষ্টি করেন। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অপরাধে এক ছাত্রীর বাবা প্রধান শিক্ষক বরাবরে অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে ওই ছাত্রী হাতীবান্ধা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন যার নং জিআর ১০৫/৯৯ (হাতী)। উক্ত মামলায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহান দীর্ঘদিন হাজত বাসের কারনে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্তের ভিত্তিতে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে বহিষ্কার করেন। অনৈতিক সম্পর্কের একাধিক মামলা থেকে বাঁচতে অপর এক ছাত্রীকে বিয়ে করতে বাধ্যহন তিনি।
পরবর্তীতে আবারও আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহান রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে সহকারী প্রধান শিক্ষক মাহাতাব উদ্দিন সহ শিক্ষক কর্মচারীদের সাময়িক বরখাস্ত করে বেতন-ভাতা বন্ধ ও অসৌজন্য মূলক আচরন করেন। সেই মানসিক চাপে বরখান্ত থাকা অবস্থায় মাহাতাব উদ্দিন গত ২৬ মে ২০২৪ খ্রি. তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যালয়ের বিভিন্ন আয় থেকে উন্নয়ন মূলক কাজ না করে প্রায় ৪৪,০০,০০০/- (চুয়াল্লিশ লক্ষ) টাকা সহ বিদ্যালয়ে ইএসডিও (এনজিও) কর্তৃক প্রাপ্ত ১টি পাওয়ার ট্রিলার ও ১টি জেনারেটর আত্মসাৎ করেন।
এছাড়াও বিজ্ঞ আদালতের আদেশ অমান্য করে বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ থাকার পরেও অতি গোপনে তাদের পরিবর্তে অন্যত্র থেকে কম্পিউটার ল্যাব সহকারি সহ ৩ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ করে যথাক্রমে সাফিয়া খাতুন (আয়া) ইনডেক্স নং- এন৫৬৮৮৪১৫৮, মাশুকুর রহমান (অফিস সহায়ক) ইনডেক্স নং- এন৫৬৮৯১৩২৭ (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের শ্যালক) কে এমপিও ভুক্তি করেছেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গত জাতীয় ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের এজেন্ট হিসেবে তার বাড়ির পাশে মধ্য সিংগীমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ভোট জালিয়াতি করেন। তার দলীয় প্রভাব ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বিদ্যালয়ে সুষ্ঠ পাঠদান বিঘ্নিত হওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫’শ থেকে কমতে কমতে এখন প্রায় ৭’শতে এসে দাড়িয়েছে। সেইসাথে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয় ঘটছে।
অভিভাবক নজরুল ইসলাম জানান, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সাবেক প্রধান শিক্ষক এমজি মোস্তাফাকে বহিস্কার করার পর থেকে স্কুলের এমন বেহাল অবস্থা। আমার মেয়েকে ওই স্কুল থেকে নিয়ে এসে অন্য স্কুলর ভর্তি করে দেই। স্কুলে পড়াশুনা তো নাই, শুধু রাজনীতি।
স্থানীয় আজিবর রহমান বলেন, এই সোবাহান মাস্টার ছাত্রীর সাথে প্রেম করে জেল হাজতে ছিল, পরে আর এক ছাত্রীকে বিয়ে করেছে। এরকম একজন শিক্ষক আওয়ামীলীগের ক্ষমতা দেখিয়ে আগের হেডমাস্টারকে বরখাস্ত করে সে এখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। এতে করে স্কুলের পড়াশুনার পরিবেশ আর নেই।
ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহান বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে শুনেছি, তবে অভিযোগের ভিত্তিতে সত্যতা পেলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নিবেন, তা আমি মেনে নিব।
অভিযোগের বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহান এর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছে। অভিযোগ গুলি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করব। সেখান থেকে তদন্ত পূর্বক ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :