AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

আ.লীগের ৩০ শতাংশ কর্মী খেয়েছে ‘ডামি নির্বাচন


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০১:৩৩ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
আ.লীগের ৩০ শতাংশ কর্মী খেয়েছে ‘ডামি নির্বাচন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উন্মুক্ত রাখা ও ডামি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার কারণে ভোটের পর আওয়ামী লীগের ৩০ শতাংশ কর্মী-সমর্থক কমে গেছে। সে কারণে জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিরোধের ডাক দিলেও তেমন সাড়া পায়নি সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দলটি। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের ৩০ শতাংশ কর্মী-সমর্থক অভিমান করে দল ছেড়ে দিয়েছেন, এ কথা গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

জানা গেছে, ১ জুলাই থেকে কোটাপ্রথা বাতিলের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলন ১৫ জুলাই পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তখন তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে আন্দোলন করেছেন। তারপর ১৬ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে পাল্টা কর্মসূচি দেয় আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি শুরু হয়। ছাত্রলীগ মাঠে নামায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও জোরালো হয়।

অন্যদিকে আন্দোলন কঠোর হাতে দমন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি ছাত্রলীগসহ সব সহযোগী সংগঠনকে মাঠে নামার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে ছাত্রলীগ প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছে হার মেনে তাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হয়। হলগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন শিক্ষার্থীরা। তারপর আন্দোলন প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়ে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। তাছাড়া দলীয় নেতারা ও সরকার ঘনিষ্ঠ উচ্চ পর্যায়ের আমলারাও গা-ঢাকা দিয়েছেন।

গোয়েন্দা সূত্র মতে, জুলাই মাসে কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রতিরোধ করার জন্য নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের পক্ষ থেকে বারবার আহ্বান করা হলেও নেতাকর্মীদের তেমন সাড়া পায়নি আওয়ামী লীগ। দলের আহ্বানে সাড়া না থাকার কারণ খুঁজতে দায়িত্ব দেওয়া একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে। তারা প্রায় ১০ দিন খোঁজখবর নিয়ে একটি প্রতিবেদন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে ৩ আগস্ট হস্তান্তর করেন। সেখানে কর্মী ও সমর্থকদের নীরব থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।

একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক থাকলেও নির্বাচনটি হয়েছিল উন্মুক্ত। সেখানে নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অন্য প্রার্থীরাও নির্বাচন করেছিলেন। সেই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে গিয়ে সরকার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষেও কাজ করেছিল। যেখানে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিল সেখানে দলীয় প্রার্থীর চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই আসনগুলোর অনেক নেতাকেই স্বতন্ত্র বা ডামি প্রার্থীর পক্ষে গোপনে কাজ করার নির্দেশনা দল থেকে দেওয়া হয়েছিল। সেই কারণে স্থানীয় নেতাকর্মী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যান। ডামি নির্বাচনের পর অনেক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিয়েছিলেন, সেটা প্রায় ৩০ শতাংশ।

আরও জানা গেছে, স্বতন্ত্র ও নৌকার প্রার্থী পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান করায় স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বেকায়দায় পড়ে যান। ভোটে অনেক জায়গায় নৌকার প্রার্থী হেরে যান, সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর দাপটে অনেকেই আওয়ামী লীগ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই আসনগুলো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য ছিল বিরোধী দলের মতো। অনেকের ওপর হামলা-মামলার খড়গও নেমে আসে। সেই কারণে রাগ-অভিমানে দল থেকে ছেড়ে যান। তবে তারা অন্য কোনো দলে যোগ দেননি। ছাত্র আন্দোলনের সময় এসব নেতাকর্মী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। পালন করেননি দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ।

অনেকে মনে করছেন, ডামি নির্বাচনের কারণে জুলাইয়ের আন্দোলন প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। তারা বলছেন, ডামি প্রার্থীরা আওয়ামী লীগকে খেয়ে ফেলেছে।

দলীয় সূত্র মতে, গত ২৩ জুলাই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা কোনো জায়গায় রুখে দাঁড়াতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। দলের হাইকমান্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, সহিংসতার সময় নেতাকর্মীদের মাঠে রাখতে না পারা সাংগঠনিক ব্যর্থতা। সেই বৈঠকে আবার নৈরাজ্য পরিস্থিতিতে যেসব নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি তাদের তালিকা তৈরি করার দাবি জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, বৈঠকে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটা আন্দোলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ব্যর্থতা প্রকাশ পেয়েছে। ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী থাকার পরও রুখে দাঁড়াতে পারেনি, এটা সাংগঠনিক দুর্বলতা। ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি না থাকায়ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সব সংগঠনকে স্ব স্ব সংগঠনের সমন্বয় মিটিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ দূর করে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান দলের সাধারণ সম্পাদক। বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, উত্তরার দিকে গ্রুপিং রাজনীতি চলছে, যাত্রাবাড়ীর দিকে গ্রুপিং রাজনীতি চলছে, যে কারণে সেখানে কেউ রুখে দাঁড়াতে পারেনি। গ্রুপিং রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। দলের মধ্যে যে কোন্দল রয়েছে তা মিটিয়ে ফেলতে হবে।
গোয়েন্দা সূত্র মতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০ থেকে ৫০টি আসনের ডামি প্রার্থী আওয়ামী লীগ বিরোধী ছিল। তারা নিজেদের লোক দিয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন, দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কাজ করেন। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে গিয়ে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। যার ফলে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া স্বতন্ত্র এমপি ও আওয়ামী লীগের হেরে যাওয়া প্রার্থীরা কেউ আন্দোলনের সময় মাঠে ছিল না।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মধ্যে নৌকা প্রতীকে ২২৪টি আসনে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ৬২টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। আর জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে ১১টি আসনে। অন্য দল থেকে জয়ের মুখ দেখেছেন এক প্রার্থী।
এ নির্বাচনে বেশ কয়েকজন মন্ত্রীরও কপাল পুড়েছিল। এ ছাড়া অনেক পরিচিত মুখও নৌকার পাল তুলতে পারেননি। নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছেই তাদের হারতে হয়েছে। তাছাড়া নির্বাচনে যেসব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছিলেন সেই আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়েছিলেন। তার মধ্যে হবিগঞ্জ-৪ আসনে সৈয়দ সায়েদুল হক, ঢাকা-১৯ আসনে মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ঢাকা-১৮ আসনে মো. খসরু চৌধুরী, ঢাকা-৫ আসনে মশিউর রহমান মোল্লা সজল, কুমিল্লা-২ আসনে মো. আবদুল মজিদ, কুমিল্লা-৩ আসনে জাহাঙ্গীর আলম, কুমিল্লা-৪ আসনে মো. আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা-৫ আসনে এম এ জাহের, ফরিদপুর-৩ আসনে আব্দুল কাদের আজাদ, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে মোহাম্মদ ফয়সাল, সিলেট-৫ আসনে মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীসহ আরও কয়েকটি আসনে স্বতন্ত্ররা জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করেছিলেন। সেখানে অনেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কাজ করেছিলেন।

দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, কোটাবিরোধী আন্দোলনকে দমন করার জন্য বারবার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি দলের হাইকমান্ডের বরাত দিয়েও নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে চেয়েছিলেন। শেষমেষ নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে ব্যর্থ হয়ে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী তৃণমূল নেতাকে তিনি নিজে কল করেছিলেন। ফোনেও নির্দেশনা দিয়েছেন, আবার কাউকে ধানমন্ডির দলের সভাপতির কার্যালয়েও সশরীরে ডেকেছিলেন। তার মধ্যে কুমিল্লা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ছিলেন। তাকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রতিরোধ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবীব আহসানকে ওবায়দুল কাদের ফোন দিয়ে রাগ-অভিমান ভুলে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ ছাড়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ঢাকায় ডেকেছিলেন ওবায়দুল কাদের।

 

একুশে সংবাদ/এনএস

Link copied!