একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মজিবর রহমান মাস্টার আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টায় রংপুর শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মজিবর রহমান মাস্টার দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
মজিবর রহমান মাস্টারের দুই ছেলে মোস্তাফিজার রহমান মজনু ও মোস্তাকুর রহমান শিক্ষক ও প্রকৌশলী। মেয়ে মোনসেফা খানম গৃহিণী। বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মলিহা খানম মজিবর মাস্টারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, রংপুরের ভাষাসৈনিক মজিবর মাস্টার ১৯৩৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের খিয়ারপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সেরাজ উদ্দিন ও মায়ের নাম আলিমন নেছা। ১৯৪৮ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হন মজিবর রহমান। ১৯৫২ সালে দশম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় ভাষার দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত থাকায় তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার সময় মজিবর মাস্টার শ্যামপুর হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
১৯৭১ সালে গঠিত বদরগঞ্জের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক হন। মজিবর রহমান মুক্তিযুদ্ধে ৬ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে অংশ নেন। ১ এপ্রিল সৈয়দপুর সেনানিবাস থেকে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের নেতৃত্বে ৩ শতাধিক আনসার, পুলিশ ও সেনা সদস্য বদরগঞ্জে আসেন। তিনি ওই বহরে অংশ নেন। তারপর বদরগঞ্জ থেকে তারা দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে যান। সেখানে তাদের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ৬নং সেক্টরের কমান্ডার ক্যাপ্টেন নোয়াজেসের সঙ্গে তিনি নীলফামারীর চিলাহাটির তিনটি স্থানে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন।
পরে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের সঙ্গে কলকাতায় দেখা করেন। তার নির্দেশে তিনি ভারতের কুচবিহারের টাপুরহাট যুব ক্যাম্পে সহকারী রিক্রুটিং অফিসার হিসেবে যোগ দেন।
ভাষা সৈনিক মজিবর রহমান ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বদরগঞ্জের কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া কয়েক বছর বিসিআইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্কাউটস আন্দোলনে যুক্ত থেকে রাষ্ট্রপতি পদকও লাভ করেন মাস্টার মজিবর রহমান।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :