বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সাবেক সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ কেন্দ্রিক প্রতিবেদন নিয়ে সমালোচনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ সমালোচনা করেন।
প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘দেশের প্রথম সারির সংবাদপত্রগুলো মতিয়া চৌধুরীর দীর্ঘ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোকে সামনে এনে তাকে সম্মান জানিয়েছে। কিন্তু নির্মোহ শোক সংবাদের পরিবর্তে সেগুলোতে মূলত ছিল সাধারণ প্রশংসা, যেন একজন মুরিদ তার পীর সম্বন্ধে লিখছেন।’
বুধবার ৮২ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান দেশের রাজনীতির অন্যতম নামকরা নারী নেত্রী মতিয়া চৌধুরী। এই আওয়ামী লীগ নেতাকে সকালে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তার মৃত্যু হয়। হৃদরোগসহ শারীরিক কিছু জটিলতায় ভুগছিলেন মতিয়া চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার দুই দফা জানাজা শেষে মতিয়া চৌধুরীকে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর স্বামী বজলুর রহমানের কবরে সমাহিত করা হয়। তবে দাফনের আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়া চৌধুরীর প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর কোনো আয়োজন ছিল না বলে তাঁর ভাই মাসুদুল ইসলাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
সাধারণত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়ার নিয়ম আছে। মতিয়া চৌধুরীর ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বেশ সমালোচনাও হয়।
প্রয়াত সাবেক সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ কেন্দ্রিক প্রতিবেদন নিয়ে সমালোচনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘এটা পরিষ্কার যে আমরা ছোট থেকে অনেক সুফি তাজকিরা বিশেষ করে তাজকিরাতুল আউলিয়া এবং তাজকিরাতুল আম্বিয়া পড়ে বড় হয়েছি।’
রাজনীতিবীদ হিসেবে মতিয়া চৌধুরীর ভূমিকা তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, ‘১৯৬০ সালে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা হিসেব তার ভূমিকা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের ইতিহাসের কিছু গৌরবান্বিত অধ্যায়েও তার ভূমিকা রয়েছে। যেমন আইয়ূব খানের আমলে ছাত্র আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে আশির দশকের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন। একজন শোকগাঁথা লেখককে অবশ্যই এই ঘটনাগুলো স্পর্শ করতে হবে।’
প্রেস সচিব আরও লিখেছেন, ‘কিন্তু আপনারা (সংবাদ মাধ্যম) শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনে তার ভূমিকাকে, তিনি কীভাবে ছাত্র আন্দোলনকে দানব আখ্যা দিয়েছেন এবং তিনি কীভাবে একটি ফ্যাসিস্ট শাসনের অংশ হয়েছেন, তা অবজ্ঞা করেছেন। গত ১৫ বছর ধরে চলা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন যে কম গুরুত্ব পাচ্ছে, এটিই আপনারা সামনে এনেছেন। তিনি যেভাবে ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরশাসকের বন্দনা করেছেন, প্রকৃতপক্ষে আপনারা সেটিকেই বৈধতা দিচ্ছেন।’
সমালোচনা করে তিনি আরও লিখেছেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে যুগ যুগ পরেও আমাদের সংবাদপত্রগুলো শোক সংবাদ লেখার শিল্প ধরতে ব্যর্থ। অথবা তারা মৃত ব্যক্তির সমালোচনা না করার ইসলামিক রীতির সমর্থক।’
১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুরে জন্ম নেন অগ্নিকন্যা খ্যাত মতিয়া চৌধুরী। তিনি শেরপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন ৫ বার। দায়িত্ব পালন করেছেন কৃষিমন্ত্রী হিসেবেও।
ইডেন কলেজে পড়াশোনার সময়ে রাজনীতিতে জড়ান মতিয়া চৌধুরী। ১৯৬৫ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হন। ১৯৬৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দেন তিনি। পরে কার্যকরী কমিটির সদস্যও হন। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রচারণা ও মুক্তিযুদ্ধে আহতদের চিকিৎসায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন মতিয়া চৌধুরী।
১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে, বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন এই নেতা। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয়।
মতিয়া চৌধুরীর বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। তার স্বামী খ্যাতিমান সাংবাদিক, প্রয়াত বজলুর রহমান।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৩ দফায় কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মতিয়া চৌধুরী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংসদ বিলুপ্ত হলে এমপি পদ হারান মতিয়া চৌধুরী।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :