ঢাকার কেরানীগঞ্জের বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত পানগাঁ নৌবন্দরের সার্বিক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল এবং বন্দরটিকে লাভজনক করতে পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রিতা কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি আজ সোমবার (৪ অক্টোবর) পানগাঁ নদী বন্দর, আনন্দ শিপইয়ার্ড এবং নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস (ডিইডব্লিউ) এবং ডেক এন্ড ইন্জিন পার্সোনেল ট্রেনিং সেন্টার (ডিইপিটিসি)এর চলমান প্রকল্প ও কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা ঢাকার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ করে বিআইডব্লিটিসির তত্ত্বাবধানে জেটি এবং পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি নৌপথে ভাসমান রেস্টুরেন্ট ও পর্যটন জাহাজ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন।
পানগাঁ বন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রাজস্ব কর্মকর্তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বন্দরে আমদানিকৃত পণ্য খালাসের নির্দেশনা দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, অবস্হানগত কারণে ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত পানগাঁও একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দর। এ নৌবন্দরকে আরও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে বর্তমান সরকার আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। ইতোমধ্যে পানগাঁও নৌবন্দরের সাথে সম্পৃক্ত সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত সরকারের আমলে চট্রগ্রাম- পানগাঁ নৌরুটে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি সমন্বয় করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, প্রয়োজনভেদে যে সকল পণ্যের ভিজুয়াল ইন্সপেকশনেই সঠিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়, সেসকল পণ্যের জন্য বুয়েট বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার নামে দীর্ঘসূত্রিতা ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা যাবে না।
আনন্দ শিপইয়ার্ড পরিদর্শন কালে উপদেষ্টা বলেন, জাহাজ নির্মাণ শিল্প দেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত।বর্তমান সরকার দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর। আনন্দ শিপ ইয়ার্ড দেশে বিদেশে জাহাজ রপ্তানি করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে ও প্রভূত সুনাম বয়ে আনছে। সরকার জাহাজ নির্মাণ শিল্পে দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
উপদেষ্টা এ সময়ে আনন্দ শিপইয়ার্ডে নির্মানাধীন বিআইডব্লিউটিসিএ এর চারটি সী ট্রাক এবং বিআইডব্লিউটিএ এর একটি সারভে ভেসেল নির্মাণের কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করে চকরার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ গুলো যেমন সন্দীপ হাতিয়া মহেশখালীতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে জনগণের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জনগণের দুর্ভোগ লাগবে সরকার এ সকল রুটে নৌ যোগাযোগ স্থাপন করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বিগত ১৫ বছরে কেবল ব্যক্তি স্বার্থে নৌপথের বিভিন্ন রুটে শুধু বেসরকারি জাহাজ চলাচলের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোন উদ্যোগ ছিল না। কিন্তু আমরা সরকারিভাবে জনগণের চাহিদার কথা চিন্তা করে জনবান্ধব নানা পদক্ষেপ নিয়েছি।
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে অবস্থিত ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস (ডিইডব্লিউ) পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা বলেন, নৌবাহিনী সার্বিক তত্ত্বাবধানে অত্যন্ত সুশৃংখল ও সুন্দরভাবে এ ডকইয়ার্ডটি পরিচালিত হচ্ছে। এটি রাষ্ট্রের একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এখানে বুয়েট এমআইএসটিসহ স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়াররা দক্ষতার সাথে কাজ করছে। এটিকে এগিয়ে নিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। দেশের যেকোনো প্রয়োজনে জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতে ডকইয়ার্ডটি প্রস্তুত রয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘদিনযাবত চট্টগ্রাম বন্দরসহ অন্যান্য বন্দর গুলোতে বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্হাপনা চলে আসছে। বন্দরকেন্দ্রিক নানা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম বন্দরসহ অন্যান্য সকল বন্দর গুলোকে সিন্ডিকেটমুক্ত করা হবে। নিজেদের কাজ নিজেরা করার মত সক্ষমতা বন্দরগুলোর রয়েছে বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। নৌপথে জনসাধারনের যাতায়াতে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হলে প্রয়োজনে নৌপথের নিরাপত্তা জোরদারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উপদেষ্টার পরিদর্শনকালে বিআইডব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, বিআইডব্লিউটিসি এর চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার বণিক, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মকর্তাসহ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :