বাংলাদেশের ৪২ শতাংশ তরুণ বেকারত্ব নিয়ে খুব চিন্তিত। তারা মনে করেন, বেকার হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, নিয়োগে বৈষম্য এবং পরিবারের সঙ্গে কাজের ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারা। এ কারণে ৫৫ শতাংশ তরুণ বিদেশে যেতে চাচ্ছেন।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের "নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ ২০২৪" নামে এক গবেষণায় এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বুধবার (৭ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের মিলনায়তনে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
এমঅ্যান্ডসি সাচি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসেসের ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক আইবেক ইলিয়াসভ প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন। এর আগে একই শিরোনামে ২০১০ ও ২০১৫ সালে দুটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ব্রিটিশ কাউন্সিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে এবারের গবেষণাটি পরিচালিত হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩ হাজার ৮১ জনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে তরুণদের মধ্যে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ কিছুটা কমে গেছে।২০১৫ সালে ৬০ শতাংশ তরুণ বলেছিলেন, তারা বিশ্বাস করেন দেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে, কিন্তু ২০২৩ সালে এই হার নেমে এসেছে ৫১ শতাংশে।
জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের ৩৭ শতাংশ বলেছেন, বেকারত্বের সবচেয়ে বড় কারণ দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ। ২০ শতাংশ তরুণ নিয়োগে বৈষম্য এবং ১৮ শতাংশ পারিবারিক জীবন ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে না পারাকে দায়ী করেছেন। এছাড়া, ৪৪ শতাংশ তরুণ আগামী এক বছরের মধ্যে নিজের ব্যবসা শুরু করতে চান। তারা মনে করেন, নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য এটি একটি ভালো উপায়।
তরুণদের মধ্যে ৭২ শতাংশ বলেছেন, তারা ৭ জানুয়ারি হয়ে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে আগ্রহী ছিলেন। তবে ৬৫ শতাংশ তরুণ নিজেদের রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন বলে মনে করেন।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, বাংলাদেশে ৬৬ শতাংশ তরুণ নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। তবে নারীদের মধ্যে এই হার কিছুটা কম। ছেলেদের ৭৭ শতাংশ ও মেয়েদের ৫৬ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এছাড়া ২৭ শতাংশ নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ৩০ শতাংশ তরুণ মনে করেন, নারীরা পুরুষের সমান নন। নারীদের ঘরের বাইরে পুরুষের মতো একই স্বাধীনতা পাওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন ২৫ শতাংশ তরুণ।
তরুণরা চান, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আরও উন্নত হোক, বিশেষ করে চাকরির বাজারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পাঠ্যক্রম চালু হোক।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। তিনি বলেন, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থনে যুক্তরাজ্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞরা জানান, এই গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণদের বর্তমান অবস্থা ও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকারের আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :