দেশের জ্বালানি সংকট পুঁজি করে কুইক রেন্টালের নামে লুটে নেয়া হয়েছে এক লাখ কোটি টাকা। এমন সমালোচনার মধ্যেই কুইক রেন্টালকে সুরক্ষা দেয়া আইনের দুটি ধারা বাতিল করেছেন উচ্চ আদালত। শুধু ধারা নয়, পুরো আইনই বাতিল চায় কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
বিদ্যুৎ সমস্যার দ্রুত সমাধানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন ২০১০ তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এই আইনের অধীনে, ৭২টি রেন্টাল ও আইপিপি কেন্দ্রের অনুমতি দেয়া হয়।
এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বড় অংশই পান তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা। শুরু থেকেই সমালোচিত কুইক রেন্টাল। এই আইনের পরিকল্পনা ও প্রচার সংক্রান্ত ধারা ৬ এর ২ ও কুইক রেন্টাল কার্যক্রমকে জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে রাখতে করা ৬ এর ৯ ধারাকে গেল বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন উচ্চ আদালত।
গেল বছর বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ-আইএমইডির এক প্রতিবেদনে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ আইনকে কালো আইন উল্লেখ করার পর বরখাস্ত হয়েছিলেন বিভাগটির উপ-সচিব মোহাম্মদ মাহিদুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব এস এম হামিদুল হক।
জ্বালানি খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিম্মি হয়ে পড়া জ্বালানি খাতকে মুক্ত করতে দু-একটি ধারা নয়, পুরো আইনটিই বাতিল করা উচিত।
গবেষণা সংস্থা সিপিডির তথ্য, কুইক রেন্টাল চালাতে গিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে ১৪ বছরে জনগণের পকেট থেকে হাওয়া হয়ে গেছে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। যদিও শিল্পের সমস্যা সমাধানে তেমন কাজেই আসেনি সরকারের দেয়া বিশাল অংকের ভর্তুকি। এ অবস্থায় সরকারকে ভিন্ন পথে হাটার পরামর্শ দিচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘পারমানেন্ট লো কস্ট এনার্জির দিকে অনেক আগে চলে যাওয়া উচিত ছিল। আমদানি নির্ভর জ্বালানি না হয়ে, কিছু কয়লা কিছু গ্যাস কিছু তেল দিয়ে মিশ্র এনার্জি সোর্স আরও আগেই দেয়াটা প্রয়োজন ছিল।’
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রফতানি খাতের এক নম্বর চ্যালেঞ্জ জ্বালানি সংকট এবং সঙ্গে বিদ্যুৎ।
অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘জ্বালানি সংকট একটি ভয়াবহ সংকটে রূপ নিতে পারে, যদি আমরা এটিকে ম্যানেজ করতে না পারি।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, ‘যে দুই ধারা অসাংবিধানিক বলা হয়েছে, সেগুলো বাদ হলে আইন বৈধ হয়ে যায় না। পুরো আইন বাতিল দরকার। যেসব কার্যক্রম দ্বারা আমাদের জ্বালানি অধিকার খর্ব করা হয়েছে, যে প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার কোটি টাকা দেড়দশক ধরে লুণ্ঠন হয়েছে, পাচার হয়েছে, সেই কার্যক্রম অবৈধ হবে না যদি পুরো আইন বাতিল না হয়।’
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ‘বিদ্যুৎখাতে কিছু সুখবর আছে। একটা সুখবর হচ্ছে- সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছিল আইনের মাধ্যমে। ২০১০ সালে এই আইন করা হয়েছিল। এটি হলো দ্রুত লেনদেনের আইন। এটা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ হয়েছিল। হাইকোর্ট আইনটিকে সংবিধানবিরোধী বলেছেন। আপনারা জানেন আমাদের চুক্তিগুলো আন্তর্জাতিক চুক্তি। চাইলেই বা সহজেই বের হওয়া যায় না। এজন্য আমরা ধীরস্থিরভাবে এগুচ্ছি।’
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :