শারীরিকভাবে নতুন কোনও সমস্যার উদয় না হলে আগামী ২৯ ডিসেম্বর (রবিবার) লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দিনের বেলায় কোনও এক ফ্লাইটে তিনি রওনা করবেন। সঙ্গে যাচ্ছেন তার ব্যক্তিগত ও মেডিক্যাল বোর্ডের কয়েকজন শীর্ষ চিকিৎসক।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ৮টার দিকে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আশা করছি সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২৯ ডিসেম্বর যাবেন। ম্যাডামের সঙ্গে তার চার-পাঁচজন চিকিৎসক যাবেন। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’
চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, সফরকারীদের মধ্যে চিকিৎসকদের প্রাধান্য রয়েছে। এরমধ্যে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ডা. শাহাবউদ্দিন, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন।
দলীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত আগস্টের শুরুতে নবায়নকৃত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) খালেদা জিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর নভেম্বরে তিনি যুক্তরাজ্যের ভিসার কাজ শুরু করেন।
ইতোমধ্যে অন্তত ১৫ জনের একটি সফরকারী টিমের তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যে যাবেন এবং ওই দেশের ভিসা পাওয়ার জন্য সহায়তা দেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সফরকারীদের মধ্যে বেগম জিয়ার পরিবার ও তার সহকারী রয়েছেন।
২০১৭ সালের ১৬ জুলাই লন্ডন যাত্রা করে চারটি মামলার পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ওই বছরের ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া। ওই সময় তিনি যুক্তরাজ্যের ডা. হ্যাডলি ব্যারির চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট সংক্রান্ত দুদকের মামলায় কারাগারে যান তিনি। চলতি বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে পরদিন (৬ আগস্ট) এভারকেয়ারে চিকিৎসাধীন থাকা বেগম জিয়ার মুক্তির আদেশ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
আগামী ২৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াকে কোন বিমানে নেওয়া হচ্ছে, বাংলা ট্রিবিউন তা নিশ্চিত হতে পারেনি। গত ২৯ অক্টোবর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে অধ্যাপক জাহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে প্রথমে ‘লং ডিসটেন্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর সেখান থেকে তাকে তৃতীয় একটি দেশে মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি মেডিক্যাল সেন্টারে নেওয়া হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, তৃতীয় দেশটি আমেরিকা।
তবে জার্মানিতে এ ধরনের সুযোগ থাকায় লন্ডন থেকে সেখানেও যেতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন। রবিবার ডা. জাহিদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সর্বশেষ গত ৭ জুলাই শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এভারকেয়ারে ভর্তি হন। এরপর ২১ আগস্ট সন্ধ্যায় বাসভবনে ফিরে আসেন। এর আগে ১৫৬ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত ১১ জানুয়ারি বাসায় ফেরেন তিনি। হাসপাতালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের সাক্ষাৎ দেন।
এরপর চলতি বছরের সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনাকুঞ্জে আমন্ত্রিত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সেখানে বিপুল সমাদৃত হন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলরা তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। বিগত কয়েক মাসে তিনি ব্রিটিশ হাইকমিশনার, চীন, সৌদি আরব ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে সাক্ষাৎ দেন।
২০১৮ সালে দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দির পর খালেদা জিয়ার শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দেয়। পরে বিশেষ বিবেচনায় তাকে বাসায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। ৭৮ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, লিভার সিরোসিস-সহ নানা রোগে ভুগছেন। ইতোমধ্যে তিনি কয়েক দফা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দফায় দফায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। অনেক আহ্বান জানানো হলেও তা মানেনি সরকার। পরিবার থেকে সরকারের কাছে কয়েক দফা আবেদন করা হলেও অনুমতি দেওয়া হয়নি।’
২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি নেত্রীর রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করানো হয়।
বেগম জিয়া গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বেগম জিয়ার বিদেশ যাত্রা দিনের বেলাতেই হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই নেতাকর্মী ও অনুসারীদের বিষয়টি সামনে রেখে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবার ও চিকিৎসকেরা। দলের সিনিয়র নেতারা বিমানবন্দরে বেগম জিয়াকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার দেশের জনপ্রিয়তম নেত্রী। মানুষের ভালোবাসা সব সময় তার সঙ্গে রয়েছে। নেতাকর্মীরা তার প্রতিটি মুভমেন্টেই অংশগ্রহণ করে আসছেন। তিনি যখন আদালতে গেছেন, মানুষের ঢল নেমেছে, এটা আসলে মানুষের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তবে এবার যেহেতু এটি তার চিকিৎসা সফর, তাই আমাদের দল থেকে কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’
‘নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরে জড়ো হবেন কিনা, এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে কোনও সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা আসেনি’ উল্লেখ করেন আবদুস সাত্তার।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :