দুদককে ঢেলে সাজাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সংস্কার কমিশন। নিরপেক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া, অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির লাগাম টানাসহ আইন সংস্কারের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই পৌঁছাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে। কমিশন প্রধান বলছেন, সব অংশীজন ও বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতেই প্রস্তুত করা হয়েছে আগামী দিনের দুদক পরিচালনার খসড়া রূপরেখা।
দুদকের হওয়ার কথা ছিল দুর্নীতিবাজদের জম। কিন্তু বাস্তবতা হলো- নখদন্তহীন কাগুজে বাঘে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সত্যিকারের দুর্নীতিবাজদের ধরার পরিবর্তে বিরোধী মতের রাজনৈতিক নেতা, বিশিষ্টজনদের সম্মানহানিই যেনো একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো সংস্থাটির।
পতিত সরকারের শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ কমিশনের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেসিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কাজ করেনি কমিশন। অন্যদিকে, বিরোধী মত দমনে সরব ছিল সংস্থাটি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে হয় ধারাবাহিক হয়রানিমূলক মামলা। তলবসহ নানাভাবে হয়রানি করে মামলার ফাঁদে জড়ানো হয় নোবেলজয়ী ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূসকে। অথচ দুর্নীতিবাজ রথী মহারথীরা ছিলেন পর্দার আড়ালে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর তার কিছু কিছু সামনে আসছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, দাবির মুখে প্রথম ধাপের সংস্কার কমিশনের সঙ্গে গঠিত হয় দুদক সংস্কার কমিশন। যার প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুর্নীতিবিরোধী সংগঠক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে। প্রায় ৩ মাস অংশীজনদের সঙ্গে বসে অকার্যকর দুদকের প্রাণ ফেরানোর প্রস্তাবনা তৈরি করেছে কমিশন। সময় সংবাদকে তিনি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা নিয়েই বেশি ভাবছেন তারা।
‘দুদকের জন্মলগ্ন থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে এক ধরনের দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব ছিল। যার করণে দুদক রাজনৈতিকভাবে জিম্মি দশায় ছিল। এরই মধ্যে খসড়া করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা ২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি জমা দিতে পারবো বলে আশা করি,’ বলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।
রাজনীতি, আমলাতন্ত্র এবং ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে দুদককে অকার্যকর করা হয়েছে বলে মত সংস্কার কমিশনের।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সিভিল সার্ভিস অ্যাক্টের বিষয়টা আছে, কর আইন আছে, অ্যান্টি মানি লন্ডারিং আইনের কিছু কিছু ধারা আছে যার কারণে দুদক তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে না। এখন যে বিশেষ শ্রেণি আছে, আমলাতন্ত্র আছে সেখান থেকে দুদককে মুক্ত করতে হবে।’
এদিকে দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মো. মইদুল ইসলাম বলছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে কার্যকর করতে সঠিক নেতৃত্ব বাছাইয়ে হতে হবে নিরপেক্ষ।
তিনি বলেন, এমন মানুষ আছেন, যারা কারো প্রভাব ছাড়াই নিজেরাই প্রভাবিত হয়ে পড়েন তাদের দুর্বলতার কারণে। দুদকের জন্য একটি আলাদা আদালত এবং একই সঙ্গে আলাদা অ্যাপিলেট আদালত আলাদা করা। বিচারের দৃশ্যমান সাজা হলে দুদকের কাজের সুফল পাওয়া যাবে।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :