রাজশাহীর তানোরে বিএমডিএর অপারেটর নিয়োগ স্থগিতের দাবিতে উত্তেজিত কৃষক ও বিএনপির নেতাকর্মীরা তালা মেরে পথ রোধ করে গাছের ডাল ফেলে আগুন দিয়ে সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর ও তার ভাই রেজা মাস্টার শাস্তির এবং মেকানিক্স মেহেদীর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ গেটের সামনেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। উত্তেজিত কৃষক ও নেতাকর্মীদের থামিয়ে বিএমডিএর ভিতরে প্রবেশ করে লোকজনকে বের করে দিয়ে মুল ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে উপজেলা পরিষদে যান। পরিষদে সমাবেশ করেন। অবশ্য এর আগে মুল সড়কে বিএমডিএর গেটের সামনে গাছের ডাল ফেলে আগুন দিয়ে পথরোদ করে জামিনুরসহ নিয়োগে জড়িতদের শাস্তির দাবিসহ গ্রেফতারের আহবান জানানো হয়। বুধবার (১ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর প্রায় দুটা পর্যন্ত চলে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা। এসব ঘটনার সংবাদ পেয়ে নিয়োগ বানিজ্যের গড ফাদার স্বৈরাচারের দোসর সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর আত্মগোপনে রয়েছেন।
উপজেলা পরিষদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গোল্লাপাড়া বাজারস্থ বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এসে সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক মেয়র জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য মিজানুর রহমান মিজান। আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক সম্পাদক সাবেক চান্দুড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডাকবাংলো মাঠে শেষ করা হয়। সেখানে নেতাকর্মী দের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিজান, তিনি বলেন যে কোন মূল্যে নিয়োগ স্থগিত করতে হবে। বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় গভীর নলকূপ নিয়ে মহা কারসাজি করেছেন আ’লীগের নেতারা। যারা নিয়োগ পেয়েছেন আর যারা পাননি বৃহস্পতিবারে আসবেন। ওই দিন নির্বাহী অফিসারের নিকট স্মারক লিপি দেয়া হবে এবং আগামী রবিবারের মধ্যে স্থগিত না হলে অফিস ঘেরাওসহ অবস্থান কর্মসূচি চলবে। সারা দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচার আ’লীগ নিষিদ্ধ সহ বাংলাদেশে রাজনীতি করতে না দেয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। আর সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ময়না এবং পাঁচন্দর ইউপির চেয়ারম্যান মতিনের দোসর সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর পুনর্বাসন করেছেন। তার সাহস দেখে শুধু তানোর বাসী না বিভিন্ন জেলা উপজেলার প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই হতবাক।
বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক চান্দুড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, কোন সাহসে প্রকৌশলী এত বড় সাহস দেখিয়েছেন। তাকেও আমরা দেখতে চায়। নিয়োগ স্থগিত করে পুনরায় নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া তানোরকে অচল করা হবে। সাধারণ কৃষক ও বিএনপির নেতাকর্মীরা বিগত সময়ে আন্দোলন করে স্বৈরাচার হাসিনা পালাতে বাধ্য করেছে। কিন্তু তার দোসরেরা এখনো বহাল তবিয়তে। যার প্রমান দিয়েছে সহকারী প্রকৌশলী জামিনুর। সে সাবেক এমপি ও সাবেক চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ সহচর। তাকে শুধু বদলি না তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
পৌর বিএনপির আহবায়ক কৃষক একরাম আলী মোল্লা জানান, কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে আ’লীগের নেতাকর্মীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব করেছে সহকারী প্রকৌশলী। তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
কৃষক দলের সাবেক সদস্য সচিব আব্দুল মালেক মন্ডল জানান, প্রকৌশলী জামিনুর ও তার ভাই শিক্ষক রেজা এবং মেকানিক্স মেহেদী মিলে প্রায় কোটি টাকার উপরে নিয়োগ বানিজ্য করে তাদের স্বজনসহ আ’লীগ নেতাদের নামে নিয়োগ দিয়েছে। এসব বানিজ্যের নিয়োগ স্থগিত না করলে লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে এবং জানিনুরকে বরখাস্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তার এত সাহস হলো কিভাবে।
পাঁচন্দর ইউপির কৃষক কামরুন, গাফফার, লাটু জানান, সহকারী প্রকৌশলীর বাড়ি ইউপির যোগিশো গ্রামে। এজন্য সে তার স্বজনদের প্রায় ১৮/২০ গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগ দিয়েছেন। সিংহভাগ তদবির বানিজ্য করেছে রেজা মাস্টার ও মেহেদী গংরা।
নেতারা আরো বলেন, গভীর নলকূপ যে ভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে, সেই ভাবেই পরিচালনা করতে হবে। বিগত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর অপারেটরেরা আত্মগোপনে চলে গেছিল। আমরাই সমিতির মাধ্যমে নিম্ম সেচ হার নির্ধারণ করে সেচ কার্যক্রম চলছে। ওই সময় জামিনুর কোথায় ছিল। তিনি তো একটি নলকূপে গিয়ে কোন ব্যবস্থা করতে পারেনি। তার দপ্তরে শতশত অভিযোগ দিয়েছিল কোন প্রতিকার পায় নি। আর অপারেটর নিয়োগের সময় ভায়ের মাধ্যমে কোটি টাকার বানিজ্য করছেন। আবার আপন ভাইসহ স্বজনদের নিয়োগ দিয়েছেন।
উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে আসার সময় বিএমডিএর অফিসের সামনে সেনা বাহিনীর গাড়ী ছিল। মিছিলে স্লোগান জামিনুরের দুই গালে জুতা মার তালে তালে। বিচার চাই বিচার চাই, স্বৈরাচারের দোসর জামিনুর কে আটক কর করতে হবে।
বিকেল তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে অফিসের মুল গেটের তালা খোলা হয়। তবে বিএনপির নেতা কৃষকরা স্পষ্ট ভাবে বলে দেন নিয়োগ সংক্রান্ত কোন কার্যক্রম করা যাবে না।
অবশ্য গত ৩০ ডিসেম্বর ফলাফল ঘোষণার পর থেকে জামিনুর অফিসে আসেননি। শুধু তাই না অফিসের সরকারী গাড়ী দাবিয়ে বেড়াতেন তার ভাই রেজা এমন ছবিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
এসব বিষয়ে জানতে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরাতো বলেছি সব নিয়োগের বিষয়ে অভিযোগ আছে সে গুলো বাতিল করা হবে। জামিনুরের ভাই ও স্বজনরা কিসের বিনিময়ে নিয়োগ পেলেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সব সর্বনাশ করেছে সে। তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, তদন্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :