খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আনিসুর রহমান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
রোববার দুপুর ১টা ১০ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুল জলিল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আনিসুর রহমানের বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার কারণে তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন এবং তার দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন আব্দুল জলিল। আনিসুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা বিদেশে থাকেন।
আব্দুল জলিল জানান, স্যার বেশ কয়েক বছর ধরেই অসুস্থ ছিলেন এবং বিছানায় থাকতে হতো। শনিবার থেকে তার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং রাতে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ভোর ৪টার দিকে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে দুপুরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের সদস্যরা দেশে এসে দাফনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন, এ কথা জানিয়ে আব্দুল জলিল বলেন, মরদেহ বর্তমানে বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়া আনিসুর রহমান শিক্ষকতা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী এবং গবেষক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন এবং ছায়ানটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি বিস্তর লেখালেখিও করেছেন।
‘পথে যা পেয়েছি’ নামে দুই খণ্ডে তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ প্রকাশ করেছে অ্যাডর্ন পাবলিকেশন।
অধ্যাপক আনিসুর রহমানের জন্ম ১৯৩৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়ায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই ‘পথে যা পেয়েছি’তে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭৭ সালে আনিসুর রহমান আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর আমন্ত্রণে জেনেভায় যোগদান করেন। সেখানে তিনি গ্রামীণ উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণের ওপর একটি বিশ্বব্যাপী প্রোগ্রাম সৃষ্টি করেন এবং ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই প্রোগ্রাম পরিচালনা করেন। ১৯৯১ সালে দেশে ফিরে আসেন। অংশীদারি গবেষণা এবং আত্মনির্ভর অংশীদারি উন্নয়নের দর্শন ও পদ্ধতিগত বিষয়ে তাঁর অবদান বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং বিভিন্ন দেশে তার চিন্তা ও রচনাবলি এই কাজে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
অধ্যাপক আনিসুর রহমান শুধু সমাজ ও উন্নয়ন দর্শনে নয়, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী এবং গবেষক হিসেবেও উভয় বাংলায় পরিচিত ছিলেন।
অধ্যাপক আনিসুর রহমান ছিলেন আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি ও গণগবেষণার অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি গুণী রবীন্দ্রসংগীতশিল্পীও ছিলেন। তাঁর গবেষণামূলক কাজ এবং উন্নয়ন দর্শনে অসামান্য অবদান রেখেছেন।
অধ্যাপক রহমানের বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে ‘উন্নয়ন জিজ্ঞাসা’, ‘যে আগুন জ্বলেছিল: মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ’, ‘মাই স্টোরি অব ১৯৭১’, ‘অপহৃত বাংলাদেশ’ ইত্যাদি।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :