পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এবং তার স্ত্রী জীশান মীর্জা ও ছোট মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব।
এই আদেশটি বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া হয়। আদালতে দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সংস্থাটির উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন আসামিদের আয়কর নথি জব্দ চেয়ে আবেদন করেন।
বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এসব সম্পদ তার এবং তার স্ত্রী ও তিন সন্তানের নামে নিবন্ধিত রয়েছে।
দুদকের নথিতে দেখা যায়, বেনজীর ও তার পরিবার ৮৩টি দলিলের মাধ্যমে ১১৪ একর জমি কিনেছিলেন। ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বেনজীর আহমেদ পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে মোট ১১২ একর জমি কিনেছিলেন তারা।
এছাড়া দুদক আরও জানতে পেরেছে, ২০১৪ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার থাকাকালে পাঁচটি দলিলের মাধ্যমে এক দশমিক ৭৫ একর জমি অধিগ্রহণ করেন বেনজীর আহমেদ, যার বেশির ভাগ জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল তার স্ত্রী জিসান মির্জার নামে।
জীশান মীর্জার আয়কর জব্দের আবেদনে বলা হয়, তিনি মিথ্যা তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে ১৬ কোটি এক লাখ ৭১ হাজার ৩৩৬ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে এবং ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৯ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এছাড়া বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জীশান মির্জাকে এসব অপরাধে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে জীশান মীর্জার আয়কর রিটার্নসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র জব্দ করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
অন্যদিকে, তাহসীন রাইসার আবেদনে বলা হয়, তাহসীন রাইসা ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৫ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়া, বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশ ও র্যাবের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাহসীন রাইসাকে অপরাধে সহায়তা করেছেন, যা দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাহসীন রাইসার আয়কর রিটার্নসহ সংশ্লিষ্ট নথি জব্দ করে পর্যালোচনা করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
এদিন, দুদকের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। পরে আদালত তাদের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দেন।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :