প্রায় দুই দশক পর বাংলাদেশ–পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে এই সভা হতে পারে। সভায় উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানা গেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে।
সূত্রমতে, ইতোমধ্যে ইআরডির কর্মকর্তারা এই সভার আলোচ্যসূচি এবং অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সর্বশেষ জেইসি সভা হয়েছিল ২০০৫ সালে।
জানা গেছে, সভার আলোচ্যসূচি নির্ধারণের জন্য ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র, শিল্প, বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সহ ১৫টি দপ্তরের প্রধানদের কাছে প্রস্তাব চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ইআরডি।
এ বিষয়ে ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, "জেইসির সভা আয়োজনের জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যেকোনো দেশের জিইসি সভার আলোচ্যসূচি ঠিক করার আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে প্রস্তাব চাওয়া হয়। পরে সেই প্রস্তাবগুলো থেকে একটি খসড়া আলোচ্যসূচি তৈরি করা হয় এবং তা সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানো হয়। ওই দেশও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমাদের কাছে প্রস্তাব পাঠায়। দুই দেশের অনুমোদনের ভিত্তিতে সভার চূড়ান্ত সূচি ঠিক করা হয়।"
সবশেষ ২০০৫ সালের ১২-১৩ সেপ্টেম্বর দুই দেশের মধ্যে জেইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওই সভায় পাকিস্তানের বাজারে শতাধিক পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চেয়েছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে পাকিস্তান চেয়েছিল মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ)।
২০০৫ সালের পর জেইসির আর কোনো সভা হয়নি। বিশেষ করে গত আওয়ামী লীগ শাসনামলের ১৬ বছরে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেকটা দূরত্ব বজায় রাখা হয়।
কিন্তু, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর আগ্রহ দেখায় পাকিস্তান। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টাসহ কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। সব সাক্ষাতেই তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়া গত সপ্তাহেই পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফপিসিসিআইয়ের নেতাদের নেতৃত্বে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি আতিফ ইকরাম শেখ। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য জোরদার করতে তখন বিজনেস কাউন্সিল গঠনের বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে এফবিসিসিআই ও এফপিসিসিআই।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এই সভা করতে চেয়েছিল পাকিস্তান, কিন্তু প্রস্তুতি ও সময়ের অভাবে তা হয়নি।
এর আগে, গত মাসে ইআরডির পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জিইসি সভার নতুন সময় নির্ধারণে পাকিস্তানকে অনুরোধ করার কথা জানানো হয়।
ইআরডির তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ১৮টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জিইসি) আছে। দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, ইরান, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), রোমানিয়া, তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
একুশে সংবাদ/আ.ট/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :