মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে অপ্রয়োজনীয় হর্ন বাজিয়ে শব্দ দূষণ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পৌরশহর কিংবা গ্রামীণ জনপদের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত উচ্চ শব্দে মাইকে নানা প্রচারণা এবং অতিরিক্ত মাইক-সাউন্ড বক্স ব্যবহারের ফলে শব্দদূষণে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে জনজীবন। স্কুল, কলেজ কিংবা হাসপাতালের আশেপাশে হর্ন বাজানো নিষেধ থাকলেও তা মানে না অনেকেই।
শব্দদূষণকে স্বাস্থ্যের জন্য নীরব ঘাতক উল্লেখ করে পরিবেশ অধিদফতরের প্রচার-প্রচারণা থাকলেও তাতে সাড়া দিচ্ছে না কেউই। বরং স্কুল ছুটির সময় কিংবা হাসপাতাল ও ভানুগাছ রোড রেল ক্রসিং এলাকায় যদি যানজট লেগে যায়, তাহলে মাত্রাতিরিক্ত হর্নের আওয়াজে পরিবেশ হয়ে ওঠে দুর্বিষহ।
এমনকি দেখা গেছে বহুসংখ্যক মাইক টাঙিয়ে প্রচার চালানো হয় অনুষ্ঠানস্থল ছাড়াও বাইরে জনাকীর্ণ বাজার বা আবাসিক এলাকায়।
গায়ে হলুদ, কনসার্ট, বার্থ-ডে, খৎনা, ওয়াজ-মাহফিল, কীর্তনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনেও নিয়ম মানার কোনো বালাই নেই। গভীর রাত পর্যন্ত চলা অনুষ্ঠানের মাইকের উচ্চ আওয়াজে মানুষের ঘুমসহ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগীরা।
দেশে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা থাকলেও বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ কর্তৃপক্ষের তেমন তৎপরতা নেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ উপজেলা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে বেপরোয়াভাবে যত্রতত্র হর্ন ও মাইক-সাউন্ড বাজানো হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শহরে সকাল থেকেই নানা প্রচারণা চালানো হয়। মাইকের উচ্চ শব্দে কান ঝালাপালা। সেই সঙ্গে গাড়ির হর্নের শব্দ তো আছেই। আমরা শব্দদূষণের যন্ত্রণার সমাধান চাই।
শহরতলীর মুসলিমবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মুসলিমবাগ এলাকায় প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো অনুষ্ঠান হয়েছে। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক, গায়ে হলুদ, রাজনৈতিক সভা, ওয়াজ-মাহফিল, কীর্তন জন্মদিনসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে সাউন্ডবক্স ভাড়া করে আনা হচ্ছে।
অধিকাংশ অনুষ্ঠান দিন-দুপুরে শুরু হয়ে রাত ১/২টা পর্যন্ত চলে। গভীর রাত পর্যন্ত চলা অধিকাংশ অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত মাইক-সাউন্ড বক্স ব্যবহারের ফলে উচ্চ শব্দে এলাকার হাজার হাজার মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে। আমার ছোট্ট ভাতিজি ও হৃদরোগে আক্রান্ত বাবাসহ এলাকার অনেক শিশু, রোগী ও বয়োবৃদ্ধরা শব্দযন্ত্রণায় নাজেহাল হয়েছেন। এলাকাকাসী শব্দ দূষণ থেকে মুক্তি চায়।
শহরের ব্যবসায়ী ভুক্তভোগী রুহুল আমিন ক্ষোভের সঙ্গে জানান, গাড়ির উচ্চ হর্নে দোকানো বসা দুরূহ ব্যাপার। আবার সকাল থেকেই মাইকে নানা প্রচারণা চালানো হয়। বাসা-বাড়িতে গিয়ে মাইকের উচ্চ শব্দে কান ঝালাপালা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে। মধ্যরাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে অনুষ্ঠান চলে। আমরা মাইকের উচ্চ আওয়াজ নিয়ন্ত্রণ চাই।
শহরের বাসিন্দা আবু সুফিয়ান রায়হান জানান, মাইকের উচ্চ শব্দে রাতের বেলা ঘুমানো খুব কষ্টকর। সম্প্রতি ধর্মীয়-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের নামে চলছে বেশি নৈরাজ্য। গভীর রাত পর্যন্ত চলা এসব প্রচারণা ও অনুষ্ঠানে মাইকের উচ্চ শব্দ নিয়ন্ত্রণে আইনের প্রয়োগ চাই।
৫০ শয্যাবিশিষ্ট শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) ডা. বিশ্বজিৎ দেব কাগজকে বলেন, শব্দ দূষণের কারণে শিশু মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে নবজাতকের ক্ষেত্রে (১-২৮ দিন) শব্দ দূষণ খুব ক্ষতির কারণ। এছাড়া উচ্চ শব্দে মানুষের শ্রবণশক্তি কমে যায়। অতিরিক্ত শব্দে স্ট্রেক, হার্ট অ্যাটাক ও মানসিক অসুখের ঝুঁকি বাড়ায়।
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, সড়কে উচ্চ শব্দে অপ্রয়োজনীয় হর্ন বাজালে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেই। এছাড়া শহর বা আবাসিক এলাকায় কোনো অনুষ্ঠান থেকে অতিরিক্ত মাইক ব্যবহার ও উচ্চ শব্দে কারো ব্যাঘাত ঘটছে এধরণের কোনো খবর পেলে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ওসি আরও বলেন, আয়োজকদের আমরা প্রথমে শব্দ দূষণ আইন সম্পর্কে বুঝিয়ে উচ্চ শব্দ নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলি। কেউ আইনের ব্যত্যয় ঘটালে আইন প্রয়োগ করি। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ ইসলাম উদ্দিন জানান, হর্ন বা উচ্চ আওয়াজে মাইক ব্যবহার করে শব্দদূষণ করা বেআইনি। শব্দ দূষণ রোধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ইউএনও আরও বলেন, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ এর ১৮ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি বিধিমালার বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করে দোষী সাব্যস্থ হলে তিনি অপরাধের জন্য কারাদন্ড বা অনধিক অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবেন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :