সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে নারীদের পোশাক ও চলাফেরাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিব্রতকর পরিস্থিতির খবর সামনে এসেছে। এর মধ্যেই রাজধানীর মেট্রোরেলে নারী ও শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, এই ঘটনা ঘটেছে নারীদের জন্য সংরক্ষিত বগিতেই।
চিকিৎসক নিলুফার পারভিন মিতু ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন, যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়টি মেট্রোরেল পরিচালনা কর্তৃপক্ষেরও নজরে এসেছে। তারা বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখার কথা জানিয়েছে।
মতিঝিল থেকে উত্তরাগামী একটি মেট্রোরেলে নারীদের জন্য সংরক্ষিত বগিতে উঠে পড়া পুরুষ যাত্রীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশুদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন চিকিৎসক নিলুফার পারভিন।
বুধবার (৫ মার্চ) বিকেলে “বাংলাদেশ মেট্রোরেলওয়ে ইনফরমেশন” নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে তিনি বিষয়টি তুলে ধরেন।
ফেসবুক পোস্টে নিলুফার পারভিন জানান, বুধবার বিকেলে তিনি ফার্মগেট স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে নারীদের জন্য সংরক্ষিত বগিতে। তবে নারীদের জন্য সংরক্ষিত একমাত্র বগিটিতে সেই সময় ১০-১২ জন পুরুষ ছিলেন। তার অভিযোগ, বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে ওই পুরুষ যাত্রীরা এক শিশু ও নারীদের শ্লীলতাহানি করেন।
বিষয়টি নিয়ে নিলুফার পারভীনের সঙ্গে কথা বলেছে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিলুফার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফার্মগেট স্টেশন ছাড়ার পর এক নারী কাঁদতে কাঁদতে দরজার দিকে এসে ট্রেন থেকে বের হওয়ার জায়গা দিতে বলেন। সেসময় কারণ জানতে চাইলে ওই নারী ও তার শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা বলেন।”
নিলুফার বলেন, “ওই নারী বলছিলেন, তার মেয়ে ও তাকে বাজেভাবে অ্যাবিউজ করা হয়েছে। প্রথমে বুঝতে পারিনি নারীদের কামরায় কীভাবে সম্ভব। পরে ওই নারী পেছনের দিকে দেখান, সেখানে ১০-১২ পুরুষ যাত্রী ছিল। তারাই মেয়েদের হয়রানি করছিলেন।”
নারীদের ওই কামরায় থাকা আরেক যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী প্রভা মাহবুব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কারওয়ানবাজার থেকে ট্রেনে ওঠার পর তিনি ওই বগিতে কয়েকজন পুরুষকে দেখতে পান। ফার্মগেট স্টেশন পার হওয়ার পর একটি মেয়ে চিৎকার করে উঠলে তার মা বিষয়টি নিয়ে অন্যদের কাছে নালিশ করেন।
প্রভা মাহবুব বলেন, “ওই ঘটনার পর পর বাচ্চাটির মা-ও কান্নাকাটি শুরু করেন। তখন সবাই মিলে ওই বগি থেকে পুরুষদের নেমে যেতে বলেন। আগারগাঁও থেকে দুজন তিনজন করে তারা নেমে গেছেন, সবার শেষে মিরপুর ১০ নম্বরে যারা ছিলেন, তাদের অন্য কম্পার্টমেন্টে পাঠানো হয়।”
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চিকিৎসক নিলুফার আরও বলেন, “আমিসহ এক সাংবাদিক বান্ধবী সেই বগিতে ছিলাম। বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করলে সবার আগে শিশুকে যে নিপীড়ন করে, সে দ্রুত নেমে যায়। আর হয়রানির শিকার নারী তার মেয়েকে নিয়ে আগারগাঁও স্টেশনে নেমে যান। প্রচণ্ড ভিড় থাকায় তাদের নাম-পরিচয় বা মোবাইল নম্বর তারা রাখতে পরিনি।”
এ বিষয়ে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ট্রেনের যাত্রীদের নিরাপত্তায় গত তিন দিন ধরে পুলিশ আছে। বিষয়টি জানার পর আমরা ইনভেস্টিগেশন করছি। তবে কোন স্টেশনের ঘটনা, কোন স্টেশনে গিয়ে উনারা অভিযোগ করেছেন, সেটা পোস্টে না থাকায় বিস্তারিত জানতে পারছি না।”
তিনি আরও বলেন, “তারা যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাহলে হয়ত পুরো বিষয়টি জানা যাবে। এ নিয়ে আমি এমআরটি পুলিশের ডিআইজির সঙ্গেও কথা বলেছি।”
নারীদের জন্য সংরক্ষিত বগিতে পুরুষ ওঠা নিষেধের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “নিষেধাজ্ঞা না মানা দুঃখজনক। এটা মেনে চলা উচিত। কিন্তু আমাদের অনেকের ক্যারেক্টারই হয়ে গেছে আইন অমান্য করা। এমন হলে আমরা কীভাবে চেইঞ্জ করব! মেট্রোরেলে পুলিশ এরই মধ্যে দায়িত্ব পালন করছে। তারা যেন নারীদের নির্ধারিত কামরার পাশের কামরায় অবস্থান করেন সেই নির্দেশনা দিচ্ছি।”
একুশে সংবাদ/ঢ.ট/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :