AB Bank
  • ঢাকা
  • সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫, ১০ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

দেশে সামগ্রিক অপরাধ বেড়েছে ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ


Ekushey Sangbad
নিজস্ব প্রতিবেদক
০২:২৬ পিএম, ২২ মার্চ, ২০২৫
দেশে সামগ্রিক অপরাধ বেড়েছে ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ

দেশে সামগ্রিক অপরাধের হার ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ডাকাতি, ছিনতাই, দস্যুতা, অপহরণ এবং হত্যার মতো অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে। তবে ধর্ষণ, চুরি এবং সিঁধেল চুরির ঘটনা কমেছে।

গত সাত মাসে এসব অপরাধের মোট ১৩ হাজার ৪৯৬টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি।

২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব অপরাধের ঘটনার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ২০২৩-২৪ সালের একই সময়ে এই অপরাধের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৭১৪টি, যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

আগস্ট মাসে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে, যার ফলে অপরাধের হারও বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ডাকাতি, ছিনতাই, দস্যুতা, অপহরণ, খুন, ধর্ষণ, চুরি, এবং সিঁধেল চুরির মতো অপরাধের প্রবণতা বেশি বেড়েছে।

আইজিপি বাহারুল আলম এই পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, "পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকের মধ্যে পুলিশকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা এবং পুলিশের আইনি নির্দেশনা না মানার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এটাকেও সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা। এ জন্য এখন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা অপরাধ করলেই মামলা হবে, জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। সারা দেশের পুলিশকে এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, "তবে কিছু কিছু অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে। আবার আগের অপরাধের অনেক মামলা অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে হয়েছে, এ কারণেও খুনসহ মামলার সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিটি অপরাধের কারণ বের করা এবং পৃথক ধরনের অপরাধের জন্য পৃথক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।"

পুলিশের কাছে সংরক্ষিত অপরাধ তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই সময়ে ৪২৬টি ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের ১৮২টির তুলনায় ১৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ের মধ্যে দস্যুতার ঘটনা হয়েছে ১,০৩৮টি, যা আগের বছরের ৭৩৫টির চেয়ে ৪১ শতাংশ বেশি।

সর্বশেষ দুই মাসে সারা দেশে ১৪৬টি ডাকাতি ও ৪২২টি দস্যুতা ঘটেছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল যথাক্রমে ৬২টি এবং ২৩৫টি। দণ্ডবিধি অনুযায়ী, দস্যুতা তখনই ডাকাতি হিসেবে গণ্য হয় যখন অপরাধীদের সংখ্যা চারজনের বেশি হয়।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, পুলিশকে অবমূল্যায়ন ও আইনি নির্দেশনা উপেক্ষা করার প্রবণতা বেড়েছে, যা দুষ্কৃতকারীদের অপরাধ করার সুযোগ সৃষ্টি করছে। আইজিপি বাহারুল আলম কে বলেন, এই পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অপরদিকে, উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে অপহরণের ঘটনাও। গত সাত মাসে ৫৪৮টি অপহরণ ঘটেছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৯৪টি—৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি। গত দুই মাসে ২১৫টি অপহরণ ঘটেছে, গত বছর একই সময়ে যা ছিল ৯৪টি। ৫ আগস্টের পর অপহরণের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে, বিশেষ করে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ১৬১টি অপহরণ ঘটেছে।

গণমাধ্যমকে দেয়া এক তথ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস ও ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) মো. রেজাউল করিম বলেন, "অপরাধ এড়িয়ে যাওয়া বা ব্যবস্থা না নেয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এ জন‍্য প্রতিটি অপরাধের ঘটনায় মামলা নিতে মাঠপর্যায়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।"

ঠিক একই সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে খুনের মামলার সংখ্যাও — ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খুনের ঘটনা ছিল ২ হাজার ৮৪০টি, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেশি। আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, এই বৃদ্ধির কারণ হল, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অভ্যুত্থান পরবর্তী অপরাধমূলক ঘটনার ফলে নতুন মামলার সৃষ্টি।

সম্প্রতি সরকারের সাথে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। প্রথমত, কিছু অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, এবং দ্বিতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরোনো বা অন্য দেশের অপরাধের ভিডিও ছড়িয়ে গুজব তৈরির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।

একটি গোয়েন্দা সংস্থা এরই মধ্যে সরকারের নিকট অপরাধ প্রবণতা নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার শূন্যতা এবং রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবলের অভাব অপরাধ বৃদ্ধির মূল কারণ। তৃতীয় কারণ হিসেবে আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা এবং সুবিচারের প্রতি বিশ্বাসহীনতা দেখানো হয়েছে, যা অপরাধীদের সুযোগ করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হত্যা, ডাকাতি, দস্যুতা ও অপহরণের মতো অপরাধ বেড়েছে।

পুলিশের নিকট সংরক্ষিত তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৯৮৬টি খুনের ঘটনায় ৫ আগস্টের পর মামলা হয়েছে। এসব মামলা বাদ দিলে ৫ আগস্টের পর খুনের ঘটনা ১০ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতা, দখল-চাঁদাবাজি এবং প্রতিহিংসা অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে। গোয়েন্দা সংস্থার মূল্যায়নে, রাজনৈতিক সহিংসতা, লুটপাট এবং চাঁদাবাজির কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

সরকার পরিবর্তনের পর অতীতের অপরাধের মামলা পুনরায় উত্তোলন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরাধের ব্যাপক প্রচারণার ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কিছু সুনির্দিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ও অ্যাকাউন্ট থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, যা পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পুলিশের সাইবার ইউনিট ইতিমধ্যেই এসব মিথ্যা তথ্য ছড়ানো কয়েক শ অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করতে কাজ করছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অপরাধের পরিসংখ্যান সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা উচিত। তাঁরা বলছেন, মামলা বেড়েছে নাকি কমেছে, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চলাচল নিরাপদ করার বিষয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করতে পারা। অপরাধ করলে পার পাওয়া যাবে না, সবার মধ্যে এমন ধারণা তৈরি করতে হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, "পরিসংখ্যান দিয়ে সব সময় অপরাধ পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা যা না। কখনো কখনো একটি ঘটনা সব পরিসংখ্যানকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে পারে। এ জন্য মানুষের ধারণাগত মূল্যায়ন বিবেচনায় নিতে হবে। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মামলার এজাহারে দুর্বলতা ও তদন্তে গাফিলতির কারণে অপরাধীরা অনেক সময় পার পেয়ে যায়। এই দুটি জায়গায় তদারকি জরুরি।" সূত্র: প্রথম আলো।

 

একুশে সংবাদ/ব.জ/এনএস

Link copied!