বঙ্গোপসাগরে মাছের প্রজনন মৌসুমে মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে আজ (১৪ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল শুরু হচ্ছে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা। চলবে আগামী ১১ জুন পর্যন্ত। নতুন সময়সীমা অনুযায়ী, প্রতিবছর ১৫ এপ্রিল থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে বলে জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রীষ্মকালীন এই সময়টি সামুদ্রিক মাছ, বিশেষ করে ইলিশের প্রধান প্রজননকাল। মাছগুলো উপকূলবর্তী এলাকায় ডিম ছাড়ে। এ সময়ে অধিক হারে মাছ ধরা হলে প্রজনন ব্যাহত হয় এবং পরবর্তী মৌসুমে উৎপাদনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
২০১৫ সাল থেকে এই গ্রীষ্মকালীন নিষেধাজ্ঞা চালু করে সরকার, যার আওতায় সমুদ্রগামী সব প্রকার মাছ ধরা বন্ধ থাকে।
পটুয়াখালী জেলার মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, “এই সময়ে মাছগুলো নিরাপদে ডিম ছাড়ে ও বংশবৃদ্ধি করে। দুই দেশের সমন্বিত নিষেধাজ্ঞা বঙ্গোপসাগরের মৎস্যসম্পদ রক্ষায় যুগান্তকারী উদ্যোগ।”
তবে জেলেরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার সময় জীবিকা নিয়ে তাদের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। গলাচিপার এক জেলে জানান, “সরকার সহায়তার চাল দেয় বললেও অনেক সময় আমরা তা পাই না। আবার যাঁরা সত্যিই মাছ ধরেন, তাঁদের অনেকেই তালিকার বাইরে থাকেন।”
স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠনগুলোর অভিযোগ, সহায়তার তালিকায় অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি রয়েছে। প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক সংযোগ থাকা ব্যক্তিরাই সুবিধা পান, প্রকৃত জেলেরা থেকে যান বঞ্চিত।
বিশ্লেষকদের মতে, নিষেধাজ্ঞা একটি বৈজ্ঞানিক ও সময়োপযোগী উদ্যোগ হলেও এর কার্যকারিতা নির্ভর করে জেলেদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা ও বিকল্প জীবিকাব্যবস্থার ওপর।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রজননকালে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে ইলিশ উৎপাদন প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
এ বছর বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত এবং ভারতের ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ফলে পুরো বঙ্গোপসাগরের একটি বড় অঞ্চল এ সময় কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকবে মাছ ধরার জন্য, যা মৎস্যসম্পদ টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
একুশে সংবাদ// আ.ট//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :