বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়াবহতম শিল্প দুর্ঘটনা—রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১২তম বার্ষিকী। ২০১৩ সালের এই দিনে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বহুতল ভবনটি ধসে পড়লে প্রাণ হারান ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত হন প্রায় দুই হাজার মানুষ। এত প্রাণহানির পরও এক যুগ পার হলেও এখনো বিচার হয়নি এই মর্মান্তিক ঘটনার।
ভবন ধসের আগের দিন ভবনটিতে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছিল। তবে সেই সতর্ক সংকেত অগ্রাহ্য করে পরদিনই ভবনের পাঁচটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ভবনটি ধসে পড়ে, সৃষ্টি হয় এক হৃদয়বিদারক মানবিক বিপর্যয়ের।
ঘটনার পাঁচ দিন পর, ২৯ এপ্রিল সোহেল রানাকে ভারতে পালানোর চেষ্টাকালে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এই ঘটনায় চারটি মামলা দায়ের হয়—যার মধ্যে একটি হত্যা মামলা পুলিশ দায়ের করে অবহেলার কারণে মৃত্যুজনিত অভিযোগে। রাজউক একটি মামলা করে নির্মাণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে এবং দুদক আরও দুটি মামলা করে দুর্নীতি ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে।
দীর্ঘ ১২ বছরে কেবল সম্পদের তথ্য গোপনের একটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকিগুলো এখনো বিচারাধীন। হত্যা মামলায় ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৯৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন—কবে বিচার শেষ হবে, তা এখনো বলা সম্ভব নয়। অন্যদিকে, ভবন নির্মাণ আইন লঙ্ঘনের মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে বছরের পর বছর বন্ধ রয়েছে।
রানা প্লাজার ধস ইতোমধ্যেই বিশ্বের ভয়াবহতম শিল্প দুর্ঘটনাগুলোর একটি হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। সস্তা শ্রমের চাপে ঠেলে দেওয়া এই ট্র্যাজেডি আন্তর্জাতিক মহলেও গভীর প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছিল।
রানা প্লাজার নিহত ও আহতদের স্মরণে আজ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকালে সাভারে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। উপস্থিত ছিলেন নিহতদের স্বজন, আহত শ্রমিক এবং মানবাধিকারকর্মীরাও।
একুশে সংবাদ// চ.ট//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :