AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গের ভাষণ


Ekushey Sangbad
সৈয়দ আমিরুজ্জামান
০৫:১৯ পিএম, ১৮ নভেম্বর, ২০২৪
আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গের ভাষণ

Government by the people, for the people, of the people—স্কুলে পৌরনীতি বইয়ে গণতন্ত্রের এই সংজ্ঞাটা পড়েছিলাম, সবার মনে আছে নিশ্চয়ই।

প্রজাতন্ত্রবাদ, সম-অধিকার, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রবক্তা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন গণতন্ত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই সংজ্ঞাটা দিয়েছিলেন গেটিসবার্গ ভাষণে। তিন মিনিটের কম সময়ের সেই ভাষণকে বলা হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ভাষণের একটি।

আব্রাহাম লিংকন গেটিসবার্গে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, বিশ্বের রাজনীতি ও সংগ্রামের ইতিহাসে অন্যতম চিরস্মরণীয় কীর্তি।

১৬১ বছর পূর্বে ১৮৬৩ সালের ১৯ নভেম্বর আমেরিকার চরম দুঃসময়ে পেনসিলভেনিয়ার গেটিসবার্গে তিনি এ ভাষণ দিয়েছিলেন।

মাত্র তিন মিনিটে ২৭২ শব্দের ছোট্ট ভাষণটি এতটাই অর্থবহ হয়ে ওঠে যে, যা আজও নীতি-আদর্শের ও শান্তির বারতা হিসেবে বিশ্বের মানুষের কাছে গ্রহণীয় রাজনৈতিক নির্দেশিকা।

আর এই ভাষণই ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের দুঃসময়ে এই ভাষণ হয়ে ওঠে সবার আলোকবর্তিকা।

তখন গৃহযুদ্ধের কারণে আমেরিকা রক্তাক্ত। ১৮৬৩ সালের ১-৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার গেটিসবার্গে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে প্রায় আট হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে।

তাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে যুদ্ধের প্রায় চার মাস পর এক স্মরণসভায় এই বক্তৃতা দেন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। সেদিন অনুষ্ঠানের মূলবক্তা ছিলেন অ্যাডওয়ার্ড এভার্ট অন্য একজন, যিনি প্রায় দুই ঘণ্টা বক্তৃতা করেন। এরপরই আব্রাহাম লিংকন বক্তৃতা শুরু করেন। ফটোগ্রাফাররা ঠিকমতো ক্যামেরা সেট করার আগেই তিন মিনিটের মাথায় তিনি বক্তৃতা শেষ করেন।

এই বক্তৃতার পর বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন উপস্থিত জনতা। এমনকি হাততালি দিতেও ভুলে যান তারা। সেদিনের মূল বক্তা অ্যাডওয়ার্ড এভার্ট দুঃখ করে বলেন, আমি যদি আমার দুই ঘণ্টার বক্তৃতায় লিংকনের তিন মিনিটের বক্তৃতার মূল কথার কাছাকাছি কিছু বলতে পারতাম, তাহলে জীবন ধন্য হতো।

আব্রাহাম লিংকন বক্তৃতার শুরুতে স্মরণ করেন পূর্ব-পুরুষদের, যারা স্বাধীনতা ও সবার মাঝে সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমেরিকা মহাদেশের গোড়াপত্তন করেন। মাঝে তার কণ্ঠে ফুটে ওঠে গৃহযুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির করুণ আর্তনাদ। আর বক্তৃতা শেষ করেন এক ঐতিহাসিক উক্তি দিয়ে, যা গণতন্ত্রের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংজ্ঞা হিসেবে আজও বিবেচিত। তিনি বলেন- ‘জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা সরকার এবং জনগণের জন্য সরকার পৃথিবী থেকে কখনো হারিয়ে যাবে না।’

পূর্ণ ভাষণটি এ রকম :

‘সাতাশি বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই উপমহাদেশে নতুন একটি জাতি সৃষ্টি করেছিলেন, মুক্তির মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে এবং এই প্রতিজ্ঞায় উৎসর্গ হয়ে যে, সব মানুষ সমান।

এখন আমরা এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি, এত সমৃদ্ধ ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এই জাতি কিংবা অন্য যেকোনো জাতি এটি দীর্ঘকাল সহ্য করতে পারে কি না সেই পরীক্ষায় ফেলে। আমাদেরকে এই যুদ্ধের একটি বিশাল ময়দানে মুখোমুখী দাঁড় করানো হয়েছে। আমরা এই ময়দানের একটি অংশ তাদের শয়নের জন্য উৎসর্গ করেছি যারা এজন্য জীবন দিয়েছিলেন যেন এই জাতি বাঁচতে পারে। এটি খুবই যুক্তিসঙ্গত ও সঠিক যে, আমরা তা করব।

তবে, বৃহৎ দৃষ্টিতে, এই ভূমিকে – আমরা উৎসর্গ করতে পারি না- আমরা নিবেদন করতে পারি না- আমরা পবিত্র করতে পারি না। সাহসী মানুষগুলো, জীবিত কিংবা মৃত, যারা এখানে যুদ্ধ করেছেন, এই ভূমিকে পবিত্র করেছেন, আমাদের ক্ষীণ ক্ষমতা খুব সামান্যই তাতে যোগ কিংবা বিয়োগ করতে পারে। আমরা এখানে কী বলছি তার সামান্যই কিংবা কোনো কিছুই হয়ত পৃথিবী মনে রাখবে না, তবে তারা যা করেছিলেন এই ভূমি কখনোই তা ভুলে যাবে না।

আমরা যারা এখন আছি তাদের বরং সেই অসমাপ্ত কাজে নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে হবে যেগুলো এখানে যারা লড়াই করেছেন সেসব লোকেরা এমন মহানভাবে অর্পণ করেছেন। আমাদেরকে বরং সামনে থাকা মহান কাজে উৎসর্গ হতে হবে – যেন যে উদ্দেশ্যে তারা তাদের আত্মত্যাগের শেষ বিন্দু পর্যন্ত দিয়েছেন ওই কাজে ওইসব মহিমান্বিত শহিদদের কাছ থেকে আমরা প্রতিনিয়ত উৎসাহ নিই – যেন আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে পারি যে, এসব শহিদদের মৃত্যু বৃথা না যায় – যেন এই জাতি সৃষ্টিকর্তার অধীনে নতুন স্বাধীনতা লাভ করে – এবং যেন জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা সরকার, জনগণের জন্য সরকার, পৃথিবী থেকে হারিয়ে না যায়।’

আমেরিকার অখণ্ডতা বজায় রাখা,গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামো প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে লিংকন এখনও আমেরিকার আদর্শ হয়ে আছেন যা আমেরিকার মানুষের কাছে তথা বিশ্বব্যাপী মানুষ চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। লিংকন ১৮৬৪ সালে পুনরায় আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু দুঃখজনক যে, মহৎ মনের এই মানুষটি ১৮৬৫ সালের ১৫ এপ্রিল উইলকেস বুথ নামের এক আততায়ীর গুলিতে আহত হয়ে পরের দিন মারা যান।

গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামো প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে লিংকন এখনো আদর্শ। যা যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের কাছে তথা বিশ্বব্যাপী মানুষ চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

 

সৈয়দ আমিরুজ্জামান

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট;

Link copied!