AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী
একুশের চেতনায়

বাংলা ভাষার শব্দসম্ভার ও আমাদের আঁতকে ওঠা


Ekushey Sangbad
বাবুল চন্দ্র সূত্রধর
০৮:২৩ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
বাংলা ভাষার শব্দসম্ভার ও আমাদের আঁতকে ওঠা

বাঙ্গালীর সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা, যা সম্ভব হয়েছিল ত্রিশ লক্ষ বাঙ্গালীর রক্তের বিনিময়ে। স্বাধীনতার যে সংগ্রাম তা একদিনে গড়ে ওঠেনি। তিল তিল করে সংগঠিত হওয়া এই সংগ্রামের মূল পটভূমিকায় ছিল ভাষা আন্দোলন। তাই ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে আমাদের গর্বের অন্ত নেই। বস্তুত মায়ের ভাষার সম্মান রক্ষার্থে বাঙ্গালীর এহেন আন্দোলন বিশ্বের বুকে একটি অনন্যসাধারণ ঘটনা। এই ভাষার প্রতিটি শব্দ ও শব্দাংশ কিংবা ধ্বনি আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধার সম্পদ, যেগুলোর সার্বিক ব্যবহার ভাষাকে আরোও মহিমান্বিত করে তুলতে পারে।

 

বাংলা ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক বিবেচনাযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের প্রায় সাড়ে তিনশত গাড়ীর মধ্যে ২/১ টি ব্যতীত সবকটির ই নাম রেখেছেন বাংলায়। উদয়ন, পারাবত, নীলসাগর, সুবর্ণ, সোনার বাংলা, এগারো সিন্দুর, উপকুল, পাহাড়িকা, প্রভাতী, গোধূলি, অগ্নিবীণা, বরেন্দ্র, ধূমকেতু, বনলতা শন্দগুলো শ্রুতিমাধুর্য়ের দিক থেকে তো বটেই, অর্থের দিক দিয়েও এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। দেশের নদীগুলোর নামও কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিবেচনা পেয়েছে; যেমন, পদ্মা, কর্ণফুলী, সুরমা, তিস্তা, চিত্রা, কপোতাক্ষ, করতোয়া, রূপসা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কালনী, তিতাস, মধৃমতি প্রভৃতি। এগুলো নিজস্ব ভাষার শব্দ ছাড়াও এক একটি এলাকার প্রতিনিধিত্¦ করে, যা অন্য ভাষার শব্দ দিয়ে কোনভাবেই পূরণীয় নয়, সম্ভব নয়।  

 

বাংলাদেশের ছোট-বড় সকল প্রতিষ্ঠানের এহেন দায়িত্ব পালনের যথেষ্ট সুযোগ ছিল ও আছে। ক্রিকেেেটর কথাই ধরা যাক। বিপিএল (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ) দিয়ে যদি শুরু করি তাহলে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর নামের সাথে যুক্ত বিশেষণগুলোর দিকে তাকালে আমরা কি দেখি? ডমিনেটর, সিক্সার, স্ট্রাইকার, বুল, ফরচুন, চ্যালেঞ্জার, ভিক্টোরিয়ান, রাইডার, সানরাইজার, রেঞ্জার- এগুলোই তো। জেলা, বিভাগ বা এলাকা তথা দলকে চেনা যায়, এমন বাংলা শব্দ কি আসলে নেই? আমার তা মনে হয় না। বরং অনুসন্ধান করলে এগুলোর চেয়ে অনেক সুন্দর ও অর্থপূর্ণ শব্দাবলী বাংলা অভিধানে পাওয়া যেতে পারে। প্রয়োজন শুধু নিখাদ অঙ্গীকারের, ভাষার প্রতি মমত্ববোধের। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান- সকলকেই যার যার অবস্থান থেকে এ অঙ্গীকরের আওতায় আসা আবশ্যক বলে মনে হয়।

 

বাংলা ভাষা ব্যবহারের দিক থেকে বিশ্বে পঞ্চম স্থানের অধিকারী, সবচেয়ে শ্রুতিমধুর ভাষা, বাংলা ভাষার সংগ্রামকে ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উৎপত্তি, একুেেশ ফেব্রুয়ারী দিবস পালন প্রভৃতিতে আমাদের উচ্ছাসের কোন কমতি নেই। কিন্তু ব্যবহারের দিকটিতে আমরা বড় উদাসীন ও নিস্পৃহ। এই দ্বৈততা থেকেই তো সৃষ্টি লাভ করেছে আমাদের আঁতকে ওঠার প্রবণতা। সাধারণ্যে তো বটেই  শিক্ষিত মহলেও একটু কঠিন ও সচরাচর অপ্রচলিত শব্দ শুনলেই আশ্চর্যান্বিত হয়ে ওঠার ভাব লক্ষ্য করা যায়। একটি দৃষ্টান্তই দেওয়া যাক।

 

‘সায়ন্তনী’ নামের বাংলাদেশের এক মেয়ে বাংলাদেশেরই একটি স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর তার নাম নিয়ে সহপাঠী ছাড়াও শিক্ষকদের সিকট থেকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন তাকে হতে হয়েছিল। নামের অর্থ জানার পরও ‘এত কঠিন নাম কেন’ এই মন্তব্য শুনতে হয়। এর মূল কারণ আর কিছু নয়, ভাষার শব্দাবলীর ব্যবহারে আমাদের যে কৃপণতা, এক কথায় সেটিই।

 

কঠিন, সহজ, ছোট, বড়. প্রচলিত, অপ্রচলিত- কোন অভিধা বা মোড়কে আবৃত না করে বাংলা ভাষার সকল শব্দকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে সশ্রদ্ধভাবে- এ দায়িত্ব সকল বাংলা ভাষাভাষীর। নতুবা ভ্ষাা সঙ্কোচিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের নিজস্ব অনেক সম্পদের মধ্যে ভাষার স্থান অনন্য। আমরাই পারি আমাদের মাতৃভাষার সম্মানকে সমুন্নত রেখে বিশ্বমঞ্চে আমাদের স্বকীয়তাকে তুলে ধরতে। আমাদের ভাষার ব্যবহার থেকে অন্যান্য ভাষাভাষী জাতিগোষ্ঠী নিজ নিজ ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধি করুক, ভাষাকে শ্রদ্ধা করতে শিখুক, বাঙ্গালী মাত্রেরই এ দায় রয়েছে বলে আমার একান্ত ধারণা। বাংলাদেশ, বাঙ্গালী ও বাংলা ভাষার জয় হোক।

 

একুশে সংবাদ/মু.হো.প্রতি/এসএপি

Link copied!