‘বঙ্গবাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড নেভাতে যখন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মৃত্যু ঝুঁকি উপেক্ষা করে প্রাণপণ লড়াই করছিলেন, তখন কিছু ব্যবসায়ী ও উৎসুক জনতা বঙ্গবাজারের পাশেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দফতর ভাংচুর করছিল। সদর দফতরের প্রায় সকল সদস্যরা আগুন নেভানোর কাজে অংশগ্রহণ করলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দফতর অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায় এ সুযোগে সেখানে ঢুকে ভাংচুর চালায় ব্যবসায়ীরা। পুলিশের ওপর আক্রমণ করতেও দেখা গেছে অনেককে। অগ্নিকাণ্ডে ছাই হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার দোকান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা, কাজ হারানোর শঙ্কায় অন্তত ৫০ হাজার কর্মচারীর। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিভানোর কাজে অংশগ্রহণ করার পরেও তাদের সদর দফতরে হামলার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর মহাপরিচালক সদর দফতরের হামলায় অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘গত ১ বছরে ফায়ার সার্ভিসের ১৩ জন সদস্য শহিদ হয়েছেন যারা ‘অগ্নিবীর’ খেতাপ পেয়েছেন ও ৩২ জন আহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন ২০১৯ সালের পর এ পর্যন্ত ১০ বার বঙ্গবাজারের ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে নোটিশ দিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় আছে সবই করা হয়েছে—তবুও কেন আগুন লাগার দায়ে তাদের ওপর হামলা হলো? যারা জীবন বাজি রেখে আগুন নেভাচ্ছেন তাদের উপরে কেন হামলা হলো? এই অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণের ব্যাখ্যা কি কারো কাছে আছে?’
‘ভয়াবহ দাউদাউ আগুনের শিখায় যখন একেকজন ব্যবসায়ীর স্বপ্ন ভস্মিভূত হচ্ছিল তাদের শেষ সম্বল, কিছু অক্ষত মালামাল নিয়ে যেতে দেখা গেছে কিছু অসাধু ব্যক্তিদের। ব্যবসায়ীদের মালামাল না নিতে বারবার মাইকে ঘোষণা দিতে হয়েছিল। এ যেন রীতিমত মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। কী নির্মম দৃশ্য! আমাদের বিবেকবোধ বলতে কি কিছুই নেই? সামাজিক মূল্যবোধের কিছুই অবশিষ্ট নেই? এই নির্মম ও নিষ্ঠুরতার শেষ কোথায়?’
‘এত হতাশা, বুকফাটা আর্তনাদ ও আগুনের নির্মম ধ্বংসযজ্ঞের ভিড়েও কিছু দৃশ্য আলাদাভাবে নজর কেড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মচারীদের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের পুকুর থেকে ফায়ার সার্ভিসকে পানি নিয়ে আগুন নেভাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা করা, বিমানবাহিনীকে হেলিকাপ্টারে করে হাতির ঝিল থেকে পানি এনে আগুন নিভানোর চেষ্টা আমাদের মানসপটে গেঁথে রবে অনাদিকাল। ফেসবুকে অনেক খবর ভাইরালের মাঝেও ভাইরাল সেই ছোট্ট অবুঝ শিশুটি তার সহায়সম্বল বলতে দুহাতখানা দিয়ে আগুন নেভাতে পানি নেওয়ার ছিদ্র দু’হাতে চেপে ধরছে। তার চোখেমুখে আগুনের বিভীষিকা নেভানোর অদ্ভুত প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। কখনো কখনো তরবারি ছাড়াও মাঠে যুদ্ধজয় করা যায় সাহস দিয়ে, শক্তি দিয়ে। তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ এই ছেলেটি। সকলের মন জয় করে নিয়েছে এই শিশুটি। উৎসুক জনতা এই অবুঝ শিশুটি থেকে শিক্ষা নিতে পারে!’
লেখক: এমফিল (গবেষক), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
একুশে সংবাদ/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :