আগুন লাগা বা বিস্ফোরণ, আঘাত লাগা বা ডিভাইসের ক্ষতির মত ঘটনা প্রতিরোধ করতে নিতুলিখিত সতর্কতা মেনে চলুনঃ ডিভাইসটির গায়ে আঘাত লাগতে বা ক্ষতিগ্রস্থ হতে দেবেননা। শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যাটারী, চার্জার এবং ক্যাবল ব্যবহার করুন। ডিভাইসটি ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা থেকে ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ব্যবহার করুন এবং ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা থেকে ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার সংরক্ষণ করুন। প্রথম ব্যবহারের পূর্বে কমপক্ষে ৮-১০ ঘন্টা চার্জ দিন। ত্রুটিপূর্ণ ব্যবহার বিধি বা তৃতীয় কোন পদ্ধতির মাধ্যমে ডিভাইসটি গ্রাহকের নিকট থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে বা ক্ষতিপূরণ নিতে বাধ্য নয়। এই কথাগুলো সাধারণত আমরা ১০০ থেকে শুরু করে ১০০০০০ টাকা বা বিভিন্ন দামের পণ্যের সাথে থাকা ম্যানুয়াল বা ব্যবহার বিধিতে দেখতে পাই। যে গুলো অনুসরণ করলে পণ্যটি দীর্ঘ সময় ধরে কান্তশিত সেবা দিয়ে থাকে বা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুস্বরণ করেও যদি কোন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়মানুযায়ী ওয়ারেন্টি বা ক্ষতিপূরন দেয়। সাধারণ মূল্যের ডিভাইসগুলোর সাথে যদি ম্যানুয়াল বা ব্যবহার বিধির বই দেওয়া থাকে এবং সেই ম্যানুয়াল বা ব্যবহার বিধি অনুযায়ী ডিভাইসটি ব্যবহার না করলে ব্যবহৃত ডিভাইস বা পশ্যটি বা পদ্যটির মালিক ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং উক্ত মালিক ক্ষতিপুরন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে ১৮০০০ মামলুকাতের শ্রেষ্ঠ বা আশরাফুল মাযলুকাত মানুষের ক্ষেত্রে কি হতে পারে।
নিশ্চয় এই আশরাফুল মাখলুকাত এর যিনি খলিক বা সৃষ্টিকর্তা তিনি মানুষকেও একটি ব্যবহার বিধি বা ম্যানুয়াল দিয়ে পাঠিয়েছেন এই দুনিয়ায় আর সেই ব্যবহার বিধি বা ম্যানুয়াল হলো মহাগ্রন্থ আল-কুরান যেটি কুরানুল হাকিম, কুরানুল কারীম, কুরানুল মাজীদ আল-ফুরকান যথাক্রমে বিজ্ঞানময় কুরান, মহিমান্বিত করান, • মর্যাদাবান্বিত কুরান, সত্য-মিথ্যার প্রভেদকারী ইত্যাদি নামে সমধিক পরিচিত। এই ব্যবহার বিধি মহাগ্রন্থ আল-কুরানকে জীবন, সমাজ, রাষ্ট্র বা সংস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বা ব্যবহার করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা, ব্যক্তি বা রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং ক্ষতিপূরণও পাওয়া যাবেনা এটি আমরা সামান্য ব্যবহৃত পণ্যের মাধ্যমে অনুধাবন করতে পারলাম। এই ব্যবহার বিধি বা মহাগ্রন্থ আল-কুরান অনুযায়ী জীবন, সমাজ, রাষ্ট্র বা সংস্থা পরিচালনার জন্য মহাগ্রাস্থ আল-কুরানের ভাষা বুঝতে পারা আমাদের জন্য কেননা কোন বিষয় বা বস্তুর ব্যবহার বিধির ভাষা বুঝতে না পারলে ঐ ব্যবহার বিধি অনুযায়ী বিষয় বা বস্তুটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা অসম্ভ এবং বিষয় বা বস্তুটি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
আমরা পবিত্র রমজানুল কারীম অতিবাহিত করছি। এ মহিমান্বিত মাসে সিয়াম সাধনার সাথে সাথে আরেকটি ইবাদত রয়েছে সেটি হলো পবিত্র ঈদুল ফিতরের সালাত আদায়ের পূর্বে ফিতরা আদায় করা সামর্থবান ঈমানদারদের জন্য আবশ্যক। এছাড়া মুমিনগন সাধারণত এই মহিমান্বিত মাসে তাদের উপর ফরজ থাকাত প্রদান করে থাকে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ১৪৪৪ হিজরী সনের সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৬৪০ টাকা সদকাতুল ফিতর এর পরিমান নির্ধারণ করেছে। তাই আমাদের এই ফিরা বা যাকাত প্রদানের সঠিক খাত জানা আবশ্যক।
আমরা এখন একটু লক্ষ্য করি শুধু ফিতরা বা যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে এই মহাগ্রন্থ বা জীবন বিধানে কি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আমাদের সমাজের মানুষ সেই নির্দেশ কিভাবে অনুস্মরণ করছে এবং তার ফলাফল কি? এই ম্যানুয়াল তথা মহাগ্রন্থ আল-কুরানের সূরা আত্-তাওবার ৬০ নং আয়াতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা দান-সদাকার খাত ঘোষণা করে বললেন- “দান-সদকা শুধু নিঃশ্ব, অভাবগ্রস্থ, যাকাত বা দান-সদাকা ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত কর্মী, ইসলামের প্রতি অনুরাগী, দাসমুক্তি, গ্রন্থ এবং আল্লাহর পথে জিহান ও সফরকারীদের জন্য এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিধান। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ এবং আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা দান-সদাকার জন্য এই ৮টি যাততে নির্ধারিত করে নিলেন কিন্তু সমাজের মানুষ নিজেরাই দান-সদাকার জন্য নতুন খাত তৈরি করে প্রতিযোগিতায় লিঙ্ক হয়েছে।
আমরা একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাই মানুষ যেসব খাতে দান-সদকা করার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত সেগুলোর অগ্রভাগে রয়েছে মসজিদ, মাজার, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি। আরেকটু পর্যবেক্ষণ করলে এসকল খাতে বেশি বেশি দান করার কারণ হিসাবে পরিলক্ষিত হয় দুটি বিষয় তাহলো- ১. 2. সামাজিক মর্যাদা কারো কারো ক্ষেত্রে বিপরীত ক্রম ও দেখা যায়। সামাজিক মর্যাদা পাওয়ার জন্য দান-সদাকা করা হলে সেটি "রিয়া" হয় আর "নিয়া" কারীদের জন্য আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরানের সূরা মাউনে ধ্বংসের কথা ঘোষণা করেন- সমস্ত সালাত আদায়কারীদের জন্য ৫. যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে নির্বোধ ও যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে। আবার বিশ্বনবী (সঃ) দান-সদকাকে গোপনে করার জন্য তাকিল নিয়ে বলেছেন- "দান এমনভাবে করবে যেন ডানহাত দ্বারা দান করবে কিন্তু বাম হাত জানতে পারবেনা"।
আবার নিঃস্ব, অভাবগ্রস্থদের খাওয়ানো একটি উত্তম এবং সওয়াবের কাজ কেননা দান-সাদাকার জন্য যে ৮টি খাত আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করেছেন তার মধ্যে এই দুইটি খাতের স্থান সর্বামে রয়েছে। কিন্তু আমরা সমাজের দিকে একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাই কোন ব্যক্তি মারা গেলে কুলখানীর আয়োজন করা হয় এবং সেখানে বড় বড় ব্যবসায়ী, সমাজপতিদের অধিক পরিমাণে সমাদর করা হয় এবং অনুষ্ঠানস্থল এমনভাবে সাজসজ্জা করা হয় যেন শোকানুষ্ঠান আনন্দদান অনুষ্ঠানে পরিণত হয় ফলে যারা নিঃশ্ব, অভাবগ্রস্থ বা প্রকৃতপক্ষে এই খানা পাওয়ার হকদার তাদের উক্ত অনুষ্ঠানে প্রবেশাধিকার সীমিত হয় অবশেষে অর্থ-সম্পদ, সময়, শ্রম ইত্যাদি ব্যয় করেও সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ অর্জনের আশংকা করা হয় যেটি কখনো কামা হতে পারেনা।
মসজিদ বা মাজারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দান করে আলিশান করা জরুরী নয় কেননা মসজিনের বা মাজারে যিনি শায়িত আছেন তার বাদ্যের বা পোষাকের প্রয়োজন হয়না বরং মসজিদে যারা সালাত আদায় করেন বা মাজারে শায়িত মৃত্যুব্যক্তির নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেন তাদের প্রয়োজন। মাজারে শায়িত মৃত্যুব্যক্তির সাহায্য করার কোন ক্ষমতা নেই সেই ক্ষমতা শুধুমাত্র এক আল্লাহ তায়ালার ই আছে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা নান করার যে ৮টি খাতের উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে মসজিদ বা মাজারে সওয়াবের আশায় দান করার কথা উল্লেখ করেননি। বরং নামাজের ওয়াক্ত হলে মসজিদের সামনে যে সকল চিক্ষুক নামাজের জন্য অপেক্ষা না করে একটু সহানুভূতির জন্য অপেক্ষা করে তাদেরকে ঐ দানের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে যেন তারা আর্থিক সাহায্য পাওয়ার জন্য নয় নামাজের জন্যই মসজিদে আসতে পারে। আর মসজিদ মাটির তৈরি হলে এবং সেখানে ইবাদত বন্দেগী করলে সওয়াবের কোন কমতি হয়না। বরং সালাত আদায় করার পর রসুল (সঃ) এর কপালে এবং হাটুতে পাথরের নাগ পরিলক্ষিত হতো। রসুল (সঃ) এর সময়কার মসজিদগুলো এমনই ছিল আজ আমাদের অতিশয় বাড়াবাড়ির কারণে বর্তমানে অধিকাংশ মসজিদগুলো আলিশান ভবনে পরিণত হয়েছে কিন্তু মসজিদ হারিয়েছে তার সূচনালগ্নের চরিত্র।
আমাদের দেশের মসজিদগুলোর বর্তমান কমিটির সদস্যগন বিলাসী দানবক্স তৈরি করে মানুষকে লজ্জায় ফেলে দিয়ে চাঁদা তুলে উন্নত মানের টাইলস দিয়ে নামি দামি এসি সেট করে বাহ্যিক দৃশ্য পরিবর্তন করে বিলাসি করার প্রতিযোগিতায় শিল্প। যদিও আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা মসজিদ কমিটির সদস্য কারা হবেন সদস্যদের বৈশিষ্ট্য কেমন হবে তা পবিত্র কুরানের সূরা আত-তাওবার ১৮ নং আয়াতে ঘোষনা করেছেন- "নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামাজ ও আদায় করে থাকাত: আল্লাহ ব্যতিত আর কাউকে ভয় করেনা। অতএব আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে। বর্তমান মসজিদের কমিটিগুলোর সদস্যরা যদি এমন বৈশিষ্ট্যাবলীর অধিকারী হতেন তাহলে তাঁরা মসজিদের বাহ্যিক সৌন্দর্য নয় বরং মসজিদ এবং সমাজের আভ্যন্তরীন সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজে বেশি প্রতিযোগিতা করতেন। ফলে মসজিদের সাথে সাথে সমাজও সুন্দর হয়ে যেত সেখানে বিশৃঙ্খলা, বৈষম্য, অভাব অনটনের স্থানে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হতো। কেননা একটি সমাজ মসজিদ কে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। সঠিক খাতে দান-সদকা না করার ফলে এবং সঠিক লোককারা মসজিদ পরিচালিত না হওয়ার ফলে বর্তমান সমাজে পরিলক্ষিত হচ্ছে মসজিদ বা সামাজিক প্রতিষ্ঠান বাহ্যিকভাবে যতই ধনী বা পাকা হচ্ছে মুছল্লিরা আভ্যন্তরীনভাবে ততই কাঁচা হচ্ছে বা সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রের কথা যদি বলি সেক্ষেত্রে শ্রীলংকার উদাহরণ নেওয়া যেতে পারে। অনুমাত্র সূদভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে এবং বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের অভাবের কারণে কিভাবে একটি আধুনিক রাষ্ট্র ২০২২ সালে দেওলিয়া হয়ে গেল? ফলে জনগন রাজায় এসে বাই প্রধান, সরকার প্রধান কে দেশত্যাগে বাধ্য করল এবং সরকারের অন্যান্য সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করল। যদি বিশ্বের ধনী দেশগুলো তাদের দান-সাদাকা বা যাকাতের অর্থ শ্রীলংকার মতো গরীব দেশগুলোকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসত তাহলে বিশ্বভ্রাতৃত্ব বন্ধন আরো সুদৃঢ় হতো এবং বিশ্ব থেকে এই মারামারি হানাহানি দূর হয়ে যেত। ইসলাম কোন সংকীর্ণতা বা জাতীয়তাবাদী চেতনায় নয় বরং সার্বজনীনতায় বিশ্বাস করো।
অন্যান্য যে খাতগুলোর কথা মহান আল্লাহ তায়াল পবিত্র কুরানে উল্লেখ করেছেন সেগুলো সহ সকল খাতে দান-সদাকা সঠিকভাবে প্রদানের মাধ্যমেই কেবল আমাদের ব্যক্তি জীবনে, সামাজিক জীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে বৈষম্য এবং বিশৃঙ্খলা পূরিভীত করে ইহলৌকিক শান্তি এবং পরলৌকিক মুক্তি আসবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে তাঁর সকল হুকুম যথাযথভাবে বুঝার এবং পালন করার তৌফিক দান করুন।
লেখক- এমফিল গবেষক (এবিডি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
একুশে সংবাদ/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :