AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

জলবায়ুর তাপদাহ ও জনস্বাস্থ্য সতর্কতা


Ekushey Sangbad
মুশতাক হোসেন
০২:৩৬ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩
জলবায়ুর তাপদাহ ও জনস্বাস্থ্য সতর্কতা

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। ৫৮ বছরের ইতিহাসে দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নেপথ্যে মানবসৃষ্ট কিছু কারণও রয়েছে। নদী, খাল, পুকুর, দিঘি– এক কথায় জলাধার ভরাটের কারণে পরিবেশ উষ্ণ হচ্ছে। নগরীতে যেভাবে সামাজিক বনায়ন করা দরকার, সেখানেও আমরা পিছিয়ে রয়েছি। দেশের অনেক স্থানে বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে। পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে গেলে প্রকৃতি এর জবাব দেবেই। ঢাকা শহরের যানজট নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এই যে দিন দিন যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে, এতে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইঞ্জিনের কালো ধোঁয়া শুধু পরিবেশেরই ক্ষতি করে না; যানবাহনের ইঞ্জিনের তাপও শহরের বাতাসকে উত্তপ্ত করছে।

 

গরম থেকে স্বস্তি পাওয়ার জন্য আমরা বাসাবাড়ি, অফিস এমনকি গাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র এসি ব্যবহার করছি। এতে কিছু মানুষ স্বস্তি পেলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আশপাশের পরিবেশের ওপর। নাগরিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও দায়িত্বে অবহেলা করছে। বিদেশে নিয়মিত পানি ছিটিয়ে রাস্তাঘাট ধুলাবালিমুক্ত রাখা হয়। আমাদের সিটি করপোরেশন মাঝেমধ্যে এ ধরনের পদক্ষেপ নিলেও তা পর্যাপ্ত নয়। সড়কের পাশে যেভাবে বৃক্ষরোপণ করা দরকার, তা আমরা কতটুকু করছি– সে প্রশ্ন আসে। আমরা এখনই সাবধান না হলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতে পারে।

 

মরুভূমির মতো আবহাওয়ায় বিপর্যস্ত দেশের মানুষ। তীব্র গরমের কারণে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি রয়েছে। প্রতিবেশী ভারতের মহারাষ্ট্রে একটি অনুষ্ঠানে এরই মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশেও একটি কারখানায় ইফতারের পর কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। তাই গরমের তীব্রতা অবহেলা করার সুযোগ নেই। এ সময় শরীরে পানিস্বল্পতার সৃষ্টি হয়। ফলে মাথা ঘুরতে পারে। এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। শরীরে কোনো ধরনের অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অন্যথায় প্রাণহানি ঘটতে পারে। তাই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এড়াতে সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পানি রাখতে হবে। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। শরীরে পুষ্টি না থাকলে ছোট রোগও বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

দেশের বেশিরভাগ মানুষ কর্মজীবী। তাই জীবিকার প্রয়োজনে তাদের ঘরের বাইরে বের হতেই হবে। কাজের পরিবেশ নিরাপদ করতে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারে। রাস্তায় বের হলে ছাতা ব্যবহার করা উচিত। সঙ্গে খাবার পানি ও তরল খাবার রাখতে পারলে ভালো। এখন রমজান মাস চলছে। তাই রোজাদারদের অধিক সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যাঁরা ক্যান্সার, কিডনি, লিভার, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত, তাঁদের যত্নবান হতে হবে। এমনিতেই তাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এর ওপর পানিস্বল্পতা ও পুষ্টিহীনতা যুক্ত হলে পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে। দুর্বল স্বাস্থ্য যাঁদের, তাঁদের উচিত রোদ এড়িয়ে চলা; সবসময় সহনশীল পরিবেশে থাকা। ইসলামে অসুস্থ লোকদের রোজা রাখার ব্যাপারে যে বিধান রয়েছে, তা অনুসরণ করলে বিপদ হওয়ার কথা নয়।

 

 

শিশু ও অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য এই তীব্র গরম বিপদ ডেকে আনতে পারে। শিশুর শরীরে পানিস্বল্পতা হলে সে বলতে পারে না। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই শিশুদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষ পর্যাপ্ত পানি পান করতে পারলেও চাহিদামতো পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে না। গরমের সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে লবণপানি বের হয়ে যায়। ফলে শরীরে খনিজ পদার্থের অভাব দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পানি পান করলে খনিজের ঘাটতি পূরণ হবে। একসঙ্গে অনেক পানি পান না করে কিছুক্ষণ পরপর পান করতে হবে। দরকার হলে খাবার স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এ জন্য মায়ের সুস্থতা জরুরি। তাই মাকে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রে পরিবারের অন্য সদস্যদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। রান্না করতে গিয়ে চুলার গরমে যেন তাঁরা অসুস্থ না হয়ে পড়েন। শুধু অন্তঃসত্ত্বা নয়; সবার জন্য খোলামেলা রান্নাঘর নিশ্চিত করা দরকার।

 

 

গরমকালে বায়ু তো দূষিত হয়ই, পানিও দূষিত হয়। শুরুতেই জলাধার ভরাটের কথা বলেছি। দূষণের কারণেও অনেক জলাধার জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। দূষিত পানি পান করার কারণে পেটের রোগ যেন না হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে। গরমের সময় খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। বাসি ও পচা খাবার খেয়ে কারও যেন পেটের পীড়া দেখা না দেয়। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। শরীরে পানিস্বল্পতার সৃষ্টি হলে সামান্য ভেজাল খাবারেই পেটে পীড়া দেখা দেয়। তাই বারবার বলছি– পানিস্বল্পতার ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে হবে।

 

ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবিলা করতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিরাপদ খাবার নিশ্চিতের পাশাপাশি অসুস্থ হলে রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সামাজিকভাবে খেয়াল রাখতে হবে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়– এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। যেখানে সেখানে ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। বনায়নের প্রতি নজর দিতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে নগরীকে ঠান্ডা রাখতে যা করা দরকার তা করতে হবে। বিদ্যুতের ব্যবহার সীমিত করতে হবে।

 

গরমের সময় প্রায়ই অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। তাই সবাইকে সাবধান হতে হবে। কোথাও আগুন লাগলে তা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এবং দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সে জন্য ব্যক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে উদ্যোগ নিতে হবে।

এরই মধ্যে ঈদে ঘরমুখো মানুষ রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে। এ সময় যাত্রীদের সঙ্গে পর্যাপ্ত খাবার পানি ও পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে। গরমের কারণে খাবার রাখা চ্যালেঞ্জিং। কারণ এ সময় খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই শুকনো খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ফলমূল রাখা যেতে পারে। বাতাসের প্রত্যাশায় লঞ্চের ছাদে ওঠা যাবে না। লঞ্চ ও ট্রেনের ছাদে উঠে যাত্রাকে অনিরাপদ করা উচিত হবে না। লঞ্চ, বাস ও ট্রেনের ইঞ্জিন যেন হঠাৎ গরম হয়ে দুর্ঘটনার কারণ হয়ে না দাঁড়ায়, তা চালককে নিশ্চিত করতে হবে।

 

ডা. মুশতাক হোসেন: রোগতত্ত্ববিদ; সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)

 

একুশে সংবাদ.কম/স.ল.প্র/জা.হা

Link copied!