ভারতের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর একটি হচ্ছে আদানি গ্রুপ। ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় সম্প্রতি আদানি গ্রুপ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ভার নিয়েছে। গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হওয়ার ফলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদাও অনেকাংশে পূরণ হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি জ্বালানি নিরাপত্তায় এই নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংযোজন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদারকরণের সম্ভাবনার দ্বার আরো প্রসারিত হবে।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি
ক্রমবর্ধিষ্ণু জনসংখ্যা এবং বিস্তৃত অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এক দীর্ঘকালীন বিদ্যুৎ সংকট চলমান। গোড্ডায় অবস্থিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অত্যাবশ্যক এ চাহিদার যোগান দিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বদ্ধপরিকর। কেন্দ্রটির রয়েছে ১,৬০০ মেগাওয়াট ধারণক্ষমতা। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় এটি একটি উল্লেখযোগ্য অবদান। এছাড়াও জ্বালানির ঘাটতি পূরণে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র কার্যকর হবে।
নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী বিদ্যুতের যোগান
ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় নির্মিত আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশকে বিদ্যুতের নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী একটি উৎস প্রদান করবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অভাবনীয় সব প্রযুক্তির বাস্তবায়ন ঘটবে। এখানে দক্ষ ও পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হবে।
আমদানিকৃত জ্বালানির উপর থেকে বাংলাদেশের নির্ভরতা কমিয়ে আনতেও এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভূমিকা রাখবে। এছাড়া দেশ জুড়ে বিদ্যুতের দাম স্থিতিশীল রেখে শিল্পখাত, বাণিজ্য এবং ঘরোয়া পরিসরে উন্নয়ন ঘটাতেও সহায়ক হবে এই প্রকল্পটি।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতেই এ যৌথ উদ্যোগ কাজ করে যাবে। কোম্পানিটির চেয়ারম্যান গৌতম আদানি বিশ্বাস করেন, “বড় মাপের চিন্তা। ভালো মানের কাজ’ – এই মূলনীতিতে। ভারতের সমৃদ্ধির পাশাপাশি এখন এই দর্শন বাংলাদেশকেও আরো উন্নতি পথে অগ্রসর করবে।
জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদারকরণ
বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার করতে জ্বালানি উৎসগুলোর বহুমুখীকরণের মধ্য দিয়ে আদানি গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যাত্রা বেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ বহুলাংশে নির্ভর করে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর। আর এ কারণেই বাংলাদেশের বিদ্যুতের যোগান ও দাম ওঠানামার এর প্রভাব লক্ষণীয়। তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লাভিত্তিক উৎপাদনের সাথে জ্বালানির ভারসাম্য বজায় থাকায় সুযোগ রয়েছে। এতে করে যোগানের সময় অস্থিতিশীলতা রোধ করবে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে।
শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধ প্রতিযোগিতা
বাংলাদেশের শিল্পখাতের সমৃদ্ধির জন্য নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ যোগান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আদানি গ্রুপ কর্তৃক পরিচালিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি শিল্পখাতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎ যোগান দেবে। এতে করে সর্বোচ্চ সক্ষমতায় কাজ করা যাবে এবং উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পাবে। একইসাথে দেশের শিল্পখাতে সুফল বয়ে আনার পাশাপাশি বিনিয়োগ আনয়ন ও বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির সম্ভাবনাও জোরদার হবে।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক
ভারত-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমন্বয়ের যাত্রায় গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি অন্যতম মাইলফলক। আদানি ও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যকার এ সম্পৃক্ততা শুধু দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই জোরদার করে না বরং শক্তি খাতে এক দৃষ্টান্তমূলক ভবিষ্যৎ অংশীদারিত্বেরও পূর্বাভাস দেয়। এমন সব সমন্বয়ের ফলে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি– সকল ক্ষেত্রেই উন্নয়ন ঘটবে এবং এভাবেই দুই দেশের মধ্যে লাভবান সম্পর্ক সৃষ্টি হবে।
টেকসই উন্নয়ন উদ্যোগ
টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশগত দায়িত্ববোধের বিষয়ে আদানি গ্রুপ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দ্বারা পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনতে চায়। এসব উদ্যোগের মধ্যে ক্ষতিকর নির্গমনের নিয়ন্ত্রণও রয়েছে। কার্বন নিঃসরণ রোধে জাতীয় উদ্যোগের সাথে বাংলাদেশে গৃহীত এই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ও অবদান সমান্তরাল ভূমিকা রাখে। এছাড়াও দূষণমুক্ত শক্তি উৎসের এগিয়ে যাওয়াতেও এটি সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
এই সমন্বিত উদ্যোগের ক্ষেত্রে টেকসই হতে পারা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। কোম্পানিটির চেয়ারম্যান প্রকৃতার্থে বিশ্বাস করেন যে টেকসই চর্চার মধ্য দিয়েই সমৃদ্ধি আনয়ন সম্ভব। গৌতম আদানি মনে করেন যে এমন সমৃদ্ধি যখন আসে, তখন এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হয়। তাই ভারত ও বাংলাদেশ এ ধরনের টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে আরো আশাবাদী হতে পারে।
শেষ কথা
বাংলাদেশের জন্য আদানি গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে একটি বিশাল সম্ভাবনার আবির্ভাব ঘটেছে। জ্বালানি বিষয়ক সকল প্রতিবন্ধকতা রোধে, জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকা গতিশীল করতে এখন দেশীয়ভাবেই অনেক উদ্যোগ নেয়া যায়। নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ যোগানের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্পখাত সমৃদ্ধ হতে পারে। এই প্রকল্প একইসাথে টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশগত দায়িত্বকে প্রাধান্য দেবার মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের এই দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সমন্বয়ের প্রচার করে।
একুশে সংবাদ/এসএপি
আপনার মতামত লিখুন :