AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

রাজনৈতিক সংকটের অবসান হতে পারে যেভাবে


Ekushey Sangbad
সাব্বির আহমেদ
০৮:৩৭ পিএম, ১৯ জুলাই, ২০২৩
রাজনৈতিক সংকটের অবসান হতে পারে যেভাবে

সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েই মুখোমুখি রাজনৈতিক দলগুলো। এক দল চায় সংবিধান অনুযায়ী; আরেক দল চায় সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচন। পাল্লা দিয়ে চলছে কথার খেলা। আপসের সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি। দেশজুড়ে চলছে ঘন ঘন রাজনৈতিক কর্মসূচি। আরেকদিকে চলছে দল ও জোট ভাঙা-গড়ার খেলা। সবার লক্ষ্য একটাই– নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক আবহাওয়া যতটা সম্ভব নিজেদের পক্ষে নেওয়া।

 

এ খেলা নতুন নয়। আমাদের দেশে এ খেলা চলছে সেই ’৭৫ সালের পর থেকে। ৫২ বছরের বাংলাদেশে সঠিক সময়ে এবং সংবিধান প্রদর্শিত পথে নির্বাচন হয়েছে মাত্র চারটি– ১৯৭৩, ২০০১, ২০১৪ আর ২০১৮ সালে। লক্ষ্য করার বিষয়, এই নির্বাচনগুলোর আগে সরকার পরিচালনা করেছে আওয়ামী লীগ। বাকি সব নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়েছে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেক দূর। শ্রদ্ধা, সম্ভ্রম অর্জন করেছে বিশ্ববাসীর কাছ থেকে। কিন্তু রাজনীতিতে এখনও পিছিয়ে আছে। প্রতিটি নির্বাচনের আগে হাজির করা হচ্ছে এক অযাচিত সংকট।


দেশের রাজনৈতিক সংকটের প্রধান কারণ– আওয়ামী লীগের বিপক্ষে নৈতিকভাবে শক্তিশালী ও দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের অঙ্গীকার এবং জনগণের সেবা করার মানসিকতা নিয়ে কাজ করার মতো কোনো দল নেই। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য প্রধান তিনটি দলের একটির রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা এবং সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী রাজনীতির ইতিহাস। অন্য দল দুটি সামরিক ছাউনিতে জন্ম নেওয়া সাম্রাজ্যবাদীদের পদলেহনকারী।

 

সদ্য সমাপ্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল এবং উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের ব্যাপক আলোচিত সফর আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সাম্রাজ্যবাদীদের নাক গলানোর চেষ্টার ধারাবাহিকতা মাত্র। পশ্চিমাদের এই চেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সামরিক এবং অর্থনৈতিক যুদ্ধে লিপ্ত রাশিয়া, চীন ও ইরান। ভূ-রাজনৈতিক কারণে এবং উঠতি অর্থনীতির দেশ বিবেচনায় বাংলাদেশ সব সাম্রাজ্যবাদীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনীতি এখন স্পষ্টতই কয়েকটি মেরুতে বিভক্ত। আমেরিকা এখন আর পৃথিবীর একক পরাশক্তি নয়। নিজস্ব সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে পশ্চিম শিবিরে তৎপর হয়েছে ফ্রান্স। চেয়েছে নিজেদের সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা; অস্বীকার করেছে আমেরিকার তাঁবেদার হয়ে থাকতে। চেয়েছে ব্রিক্সের সদস্যপদ।

 

দেশের মধ্যে আমেরিকার সেনাবাহিনী থাকায় দাঁত কামড়ে তাদের অনাচার সহ্য করছে জার্মানি। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ এখন আমেরিকার মাতব্বরি থেকে মুক্ত। বিশ্বদরবারে নিজস্বতা নিয়ে স্পষ্ট মার্কিনবিরোধী অবস্থান নিয়েছে আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ। দক্ষিণ আমেরিকায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় ব্রাজিল ও ভেনেজুয়েলা। এমন পরিস্থিতিতে চীনের অগ্রযাত্রা রোধ করতে তাদের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিতে আমেরিকার দরকার ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল। এখানে জোরালো অবস্থান ভারতের। বাংলাদেশ ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেন্টমার্টিন নিয়ে একটি সামরিক ঘাঁটি বানাতে পারলে আমেরিকার অবস্থান অনেক শক্তিশালী হয়। তা যে পাওয়া যাবে না– স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

 

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে আমেরিকা-চীনের দ্বন্দ্বে জড়াবে না; ব্যালেন্স করে চলবে বাংলাদেশ। বাড়তি সুবিধা পাবে না আমেরিকা। জামায়াত-বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে পারলে বাড়তি সুবিধার সুযোগ থাকবে বটে, তবে বিগড়ে যাবে ভারত। সেন্টমার্টিনের চেয়ে বেশি দরকার চীনের বিপক্ষে ভারতকে রাখতে পারা। সামগ্রিক বিবেচনায় এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আমেরিকার নাক গলানোর সুযোগ কম। দু’পক্ষকে চাপে রাখা যায় এমন একটি ভিসা নীতি দিয়ে, দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে মিটিং করে শেখ হাসিনার সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে মানে মানে কেটে পড়েছে ইইউ এবং মার্কিন প্রতিনিধি দল।

 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা বাংলাদেশেরই। অন্য কারও পক্ষে এ সমস্যা সমাধান করে দেওয়া সম্ভব নয়। অতীতে জিমি কার্টার, স্যার নিনিয়ান, তারানকো এসেছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ আর বিপক্ষ শক্তির মধ্যে সালিশি করতে; কেউ সফল হননি। তারা বাংলাদেশের সমস্যা মুক্তিযুদ্ধ, সন্ত্রাস, জনগণ ও গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারের দৃষ্টিতে বিবেচনা না করে দু’পক্ষকে এক পাল্লায় মাপলে সফল হবেন কী করে? একইভাবে দু’পক্ষকে এক পাল্লায় মাপেন এখানকার তথাকথিত সুশীল সমাজ। এই সুশীলরাও পশ্চিমাদের মতো পক্ষপাতদুষ্ট। তারাও একই কারণে ব্যর্থ হচ্ছেন দেশে একটা সুস্থ রাজনীতিচর্চার পরিবেশ সৃষ্টি করতে দু’পক্ষকে বাধ্য করতে।

 

বাংলাদেশের রাজনীতিকে সুস্থ করে তুলতে হলে দরকার রাজনীতি থেকে বাংলাদেশবিরোধী ও সন্ত্রাসী চক্রের চিরবিদায়। এরা যতদিন রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ থাকবে, ততদিন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি তা মেনে নেবে না; রাজনীতিতে সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হবে না; সংকটও নিরসন হবে না। এখন দরকার যোগ্য মানুষদের নিয়ে তৈরি একটি নতুন রাজনৈতিক দলের, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি, জাতির পিতার আদর্শের প্রতি একনিষ্ঠ থাকবে। দেশ ও দশের মঙ্গল চিন্তায় রাজনীতি করবে। আওয়ামী লীগের বিপক্ষে এমন অন্তত একটি রাজনৈতিক দল তৈরি হলে এবং স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি রাজনীতি থেকে দূর হলে বাংলাদেশে ফিরবে সুস্থ রাজনীতি; তার আগে নয়।

 

সুস্থ ধারার রাজনীতিতে ফিরতে হলে এখন থেকেই সে লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্তে চেষ্টা করতে হবে। সে চেষ্টার জন্য প্রথমেই কথায় কথায় সংবিধান বদলানোর মানসিকতা পরিহার করতে হবে। সরকার ও অন্য সংশ্লিষ্টদের অক্ষরে অক্ষরে সংবিধান মেনে চলতে বাধ্য করাই হচ্ছে আজকের সচেতন মানুষের কাজ। নির্বাচনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, নির্বাচনের বিভিন্ন পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ এবং সবাই সচেষ্ট থাকলে সূক্ষ্ম কিংবা স্থূল কোনো কারচুপির সুযোগই থাকে না। এ কাজ করতে গণমাধ্যম এবং বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আন্তরিকতা থাকলে সব সমস্যাই সমাধান করা যায়। রাজনীতিতে স্বাধীনতাবিরোধী ও সন্ত্রাসী চক্রকে বহাল রেখে বারবার সংবিধান বদলে নতুন নতুন আইন করে নির্বাচন করতে গেলে আমাদের গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী হবে না। রাজনৈতিক সংকট লেগেই থাকবে; শেষ হবে না।

 

সাব্বির আহমেদ: চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট

 

একুশে সংবাদ/য/এসএপি

Link copied!