AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনা ও করণীয়


Ekushey Sangbad
ড. এস এম জাহাঙ্গীর আলম
০৪:৩৭ পিএম, ৭ আগস্ট, ২০২৩
বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনা ও করণীয়

ডলার-সংকটের কারণে আমরা সময়মতো জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানি করতে পারছি না। এতে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত্ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে জনগণের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। সৌরবিদ্যুত্ এই সমস্যার কার্যকর সমাধান এনে দিতে পারে। কিন্তু দেশে সৌরবিদ্যুতের যে সম্ভাবনা রয়েছে, সে ব্যাপারে আমরা এখনো বলতে গেলে উদাসীন।

 

বাংলাদেশে ৫০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি সৌরবিদ্যুৎ উত্পাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে আমাদের কাজে লাগানো উচিত। জার্মানি ও বাংলাদেশের সৌরশক্তির তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, জার্মানির যে কোনো জায়গায় সূর্য থেকে আসা সর্বোচ্চ সৌরশক্তিও বাংলাদেশের চেয়ে কম বা অর্ধেক। জার্মানি কয়লা ও পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দিয়ে প্রতিদিন ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ সৌরশক্তিসহ অন্যান্য নবায়নযোগ্য উত্স থেকে উত্পাদন করছে। বাংলাদেশ তার চেয়ে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও কেন প্রয়োজনীয় ১০ থেকে ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ সৌরশক্তিসহ অন্যান্য নবায়নযোগ্য উত্স থেকে উত্পাদন করতে পারবে না? দেশে বাতাস থেকে ১ হাজার এবং বর্জ্য থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে মনোযোগ বাড়ালে বিদ্যুত্ উত্পাদনে আমাদের পরনির্ভরশীলতা দূর হয়ে যাবে।

 

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের ব্যবহারও বাড়ছে। এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সৌরশক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ দেশে সারা বছর প্রচুর সূর্যালোক থাকে। এটি সৌরশক্তি উত্পাদনের জন্য সহায়ক ও অনুকূল। উচ্চ সৌর বিকিরণ মাত্রা উন্নত ও দক্ষ এবং উত্পাদনশীল সৌর প্যানেল স্থাপনের বাড়তি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে অফ গ্রিড বাজার রয়েছে, তার সদ্ব্যবহার প্রয়োজন। সৌরবিদ্যুত্ শক্তির টেকসই উত্পাদনক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য সৌরশক্তি বিনিয়োগ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

 

সৌরবিদ্যুতের এত সম্ভাবনার কথা আমরা বলছি এ কারণে যে, সরকার এ ব্যাপারে নানা ধরনের নীতিসহায়তা প্রদান করে চলেছে। এখন আমাদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আশার কথা হলো, কয়েক দিন আগে উদ্বোধন করা হলো দেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুত্ কেন্দ্র তিস্তা সোলার লিমিটেড। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর জিলা স্কুল মাঠের সমাবেশ থেকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেড নির্মিত ২০০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুেকন্দ্র উদ্বোধন করেন। গত ডিসেম্বর থেকে কেন্দ্রটির বিদ্যুত্ যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অনাবাদি চরের সাড়ে ৬০০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় ও এশিয়ার অন্যতম বড় সৌরবিদ্যুত্ কেন্দ্র। তিস্তাপারের লাটশালা এলাকায় বিশাল এই  কেন্দ্রের নির্মাণ শুরু হয় ২০১৭ সালে।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই প্রকল্পে অর্থায়নে আমরা দেশে প্রথম সুকুক বন্ড চালু করি। এই প্রকল্পে আমাদের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আরো সৌরবিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপনের চিন্তা করছি। এই প্রকল্প উত্তরবঙ্গে বিদ্যুত্ সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরিতেও ভূমিকা ও কর্মসংস্থান দ্রষ্টিতেও অবদান রাখবে বলে আমরা মনে করি। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ রক্ষায় সৌরবিদ্যুত্ উত্পাদনে জোর দেওয়া হচ্ছে। উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও জ্বালানি আমদানি কমাতে সরকারও এই খাতে জোর দিয়েছে। উত্তরবঙ্গে আরো একটি সৌর বিদ্যুত্ কেন্দ্র বাস্তবায়ন করছে দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ বেক্সিমকো।

 

সূর্যের আলো পৃথিবীর সমস্ত প্রাণের শক্তির একমাত্র উত্স। সূর্য আয়তনে পৃথিবী থেকে প্রায় ১৩ লক্ষ গুণ বড়। সূর্যের ভর পৃথিবীর ভরের চেয়ে ৩ লাখ ৩০ হাজার গুণ ভারী। সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৬ হাজার ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় ৩ কোটি (৩ কোটি) ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্য পৃথিবী থেকে গড়ে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ কিলোমিটার দূরে। তাই সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে ৮ মিনিট সময় লাগে। সূর্য নিজে থেকেই এক বিশাল এনার্জির উত্স। ৫০০ কোটি বছর থেকে আমাদের এনার্জি সঞ্চার করে আসছে আর নিঃসন্দেহে আরো ৫০০ কোটি বা তার অধিক সময় এনার্জি সঞ্চারিত করেই যাবে।

 

সূর্য থেকে আমরা আলো ও তাপ পাই। আলো আমাদের দৃষ্টি প্রদান করে এবং গাছপালা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলে খাদ্যের জোগান হয়, তাপ আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। সূর্যের তাপ কাজে লাগিয়ে আমরা তৈরি করতে পারি বিদ্যুত্। সরাসরি সূর্যশক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুত্ অফুরন্ত উত্পন্ন করতে পারি। আধুনিক যুগে সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুত্ উত্পাদন করার জন্য যে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করা হয়, তার নাম সোলার প্যানেল। একটি সোলার প্যানেল এমন একটি যন্ত্র, যা পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য সূর্যের শক্তি ক্যাপচার করে। এই প্লেটগুলো বিকিরণকে তাপ বা ফটোভোলটাইক শক্তিতে রূপান্তর করতে পারে । সোলার প্যানেলের মাধ্যমে কৃষিকাজ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, বাড়ি-গাড়ি, ক্যালকুলেটর, হাতঘড়ি, বৈদ্যুতিক বাতি, মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইট ইত্যাদি সূর্য থেকে পাওয়ার নিয়ে কাজ করে।

 

গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের মতো চরম সমস্যা থেকে বাঁচতে সৌরবিদ্যুত্ সত্যিই অনেক কার্যকর উপায়। তাছাড়া আমাদের দেশের বিদ্যুতের যে অবস্থা, এতে নিজের ঘরেই বিদ্যুত্ উত্পন্ন করা ভালো। সোলার সেলের সঙ্গে একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে, প্যানেল থেকে এবং ব্যাটারি থেকে যে বিদ্যুত্ সরাসরি আসে, সেটা ডিসি বা ডাইরেক্ট কারেন্ট। কিন্তু বাড়ির টিভি, ফ্যানসহ প্রায় যেকোনো যন্ত্রপাতি চালাতে প্রয়োজন এসি বা অলটারনেটিভ কারেন্ট। তাই একটি ইনভার্টার লাগানো থাকে, যেটা ডিসিকে এসিতে রূপান্তরিত করে। বেশির ভার ইনভার্টার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। তবে আজকের কিছু লেটেস্ট সোলার মডিউল, যেটার নাম এসি মডিউল; যেখানে বিল্ডইনভাবে ইনভার্টার লাগানো থাকে। তাছাড়া বাইরে সোলার প্যানেলটি ঠিকঠাক মতো সূর্যের দিকে মুখ করে ইনস্টল করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে বাড়িতে সোলার প্যানেল বসানো নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে সোলার বিদ্যুতের সুবিধা ও সম্ভাব্য খরচের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা আমরা দেখে নিতে পারি।

 

সোলার বিদ্যুতের সুবিধা হলো, বিদ্যুত্ উত্পাদনে কখনো ঘটতি হবে না। কারণ সৌরশক্তি অপরিসীম। প্যানেল স্থাপনের পর বিদ্যুতের কোনো বিল দিতে হবে না। বিদ্যুদ্ব্যবস্থা কখনো বিচ্ছিন্ন হবে না। সোলার প্যানেল রক্ষণাবেক্ষণ করা খুব সহজ। পরিবেশ দুষিত করে না। প্যানেলের দীর্ঘস্থায়িত্ব বেশি, তাই অনেক বছর ব্যবহার করা যায়। যেখানে পাওয়ার গ্রিড সম্প্রসারণ ব্যয়বহুল, সেখানে সৌরবিদ্যুত্ ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

যা হোক, দেশে আরো সৌরবিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণ ও সৌরবিদ্যুত্ সুবিধার সম্প্রসারণ প্রয়োজন। মানুষ যাতে সহজে এই বিদ্যুত্সুবিধা পেতে পারে, এর জন্য দরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ। এ সম্পর্কে জনসচেতনারও প্রয়োজন রয়েছে বলে আমরা মনে করি।

 

একুশে সংবাদ/ই.ক.প্র/আ.হ

Link copied!