বাংলাদেশে শিঘ্রই ভয়াবহ ভূমিকম্প হতে যাচ্ছে। আপনারা নিশ্চিত থাকুন, ভূমিকম্পে আপনাদের চারপাশে লাশ আর লাশ পড়ে থাকবে। ভবনের নিচে লাশ পঁচে গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে শহরজুড়ে। লাশের গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়বে ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষ। তারাও সঠিক চিকিৎসার অভাবে অবশ্যই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে। এই ভূমিকম্প সমগ্র দেশটাকে পরির্বতন করে ফেলবে। সমগ্র বিশ্ব বাংলাদেশের করুন অবস্থা দেখে দুঃখ প্রকাশ করবে। সমগ্র বিশ্বের সুপরিচিত সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হবে এই বাংলাদেশের ভয়াবহ ভূমিকম্পের কথা।
আমার লেখার কথাগুলো পড়ে কপালে হাত আর চিন্তায় পড়ে গেলেন? হ্যা, তুরস্কের ভয়াল ভূমিকম্পের পর এমন আলোচনা এখনো চায়ের দোকানে, কফি হাউস কিংবা ছোটবড় যেকোনো আড্ডায় উঠে আসছে।
ধরুন আমার আমার লেখাটা সম্পূর্ণ সত্য নয়, তারপরও এমন ঘটনা ঘটতে কতক্ষণ? আপনার কাছে অসত্য মনে হলেও সত্য এটাই যে, সত্যি সত্যি দেশে ভয়াবহ ভূমিকম্প হতে যাচ্ছে। সিলেট থেকে কক্সবাজারে যে কোন সময় আট মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হতে পারে অর্থাৎ তুরস্কের চেয়েও ভয়াবহ ভূমিকম্প থাবা বসিয়ে দিবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে। এই ভূমিকম্প আজ এমনকি এই মুহুর্তেও হতে পারে। আবার ১০০ বছর পরেও হতে পারে। যত সময় যাবে, ভুমিকম্পসের সঞ্চিত শক্তি ততটাই বাড়তে থাকবে।
সিলেট থেকে কক্সবাজারের পাহাড়ি অঞ্চল পর্যন্ত বাংলাদেশের নিচে যে ফল্টলাইন আছে, সেই এলাকায় আট মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি তুরস্কের চেয়ে ভয়াবহ মাত্রায় হবে। ভূমিকম্পে ঢাকা মেট্রোপলিটানের এক শতাংশ ভবনও যদি ধ্বংস হয় তাহলে ৬,০০০ ভবন বিধ্বস্ত হবে। যার ফলে অন্তত তিন লাখ মানুষ সরাসরি হতাহত হবেন। আর অপরিকল্পিতভাবে তৈরি শহরে ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার ও সেবার কাজ পরিচালনা বাধাগ্রস্থ হওয়ায় আরো বহু মানুষের জীবনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
২০০৯ সালে সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) ও জাইকার যৌথ জরিপে বলা হয়, ঢাকায় সাত বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হলে, শহরের ৭২,০০০ ভবন ভেঙে পড়বে এবং এক লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৈরি হবে সাত কোটি টন কনক্রিটের স্তূপ। বাংলাদেশে ভবন তৈরির ক্ষেত্রে জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করা, ভবনের নকশা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন বা অঞ্চল পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না নেয়ার মত- নানা অনিয়মের চিত্র উঠে আসে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ২০২০ সালের এক গবেষণায়।
বস্তুত: তুরস্কের নগর পরিকল্পনাবিদ ও ভূমিকম্প বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চলে বিল্ডিং কোড না মেনে বহু ভবন নির্মাণ করায়- এত বৃহৎ পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়েছে।
১৯৯৯ সালে তুরস্কে বড় ধরণের একটি ভূমিকম্প হয়। ঐ ভূমিকম্পের পর তুরস্কের সরকার ভূমিকম্প মোকাবেলায় তহবিল গঠনসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু সেসময় যারা নিয়ম না মেনে ভবন তৈরি করেছিল, তাদের শাস্তির আওতায় না এনে অল্প কিছু জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়। যার ফলে প্রায় ৬০ লাখ ভবন অপরিবর্তিত অবস্থায় থেকে যায়। সরকারের এই দুর্নীতি আর অনিয়মের ফলেই সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে ব্যাপক আকারে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে বলছেন তুরস্কের বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশেও বাণিজ্যিক বা আবাসিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কোনো বিষয় নয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই ভবন তৈরির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অনিয়মের অভিযোগ উঠে থাকে।
অপরিকল্পিতভাবে বহু ভবন তৈরি হওয়ায় ঢাকায় ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজ চালানো কঠিন হতে পারে বলে মনে করেন আমাদের বিশেষজ্ঞরা অতএব দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে এখন থেকেই ভূমিকম্প প্রতিরোদ ও ভুমিকম্পের পরবর্তি সময়ে উদ্ধার কাজ কতটা সুনিপুনভাবে রা যায়। তার জন্য এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করা। সরকারের হস্তক্ষেপে এখনই জনগনকে সচেতনসহ ভুমিকম্পের পরে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করার জন্য দক্ষ একটি দল তৈরি করাসহ উদ্ধারের যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা। একটি দলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য ও দক্ষ উদ্ধারকর্মিতে রুপান্তরিত করা। যাতে করে ভুমিকম্পের আগে ও পরে মৃত্যুর হার কমানো যায়।
জীবন মানে যুদ্ধ, অর্থাৎ সচেতন হয়ে যুদ্ধ করে এই পৃথিবীতে টিকে থাকতে হয় তাই ঘটনা ঘটার আগেই আমরা প্রস্তুত হতে পারলে- ইনশাল্লাহ দেশ ও দেশের মানুষেরই মঙ্গল হবে।
একুশে সনবাদ/রা.ব.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :