১১টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে বিজয়ী হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
বুধবার (১ নভেম্বর ২০২৩) নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক কমিটির ৭৬তম অধিবেশনের তৃতীয় দিনে ভোটগ্রহণ হয়। সদস্য দেশগুলো সায়মা ওয়াজেদকে মনোনীত করার পক্ষে ভোট দেয়।
ওই পদের জন্য সায়মা ওয়াজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নেপালের ড. শম্ভু প্রসাদ আচার্য। সদস্য দেশগুলো ৮-২ ভোটে সায়মা ওয়াজেদকেই পাঁচ বছরের জন্য আঞ্চলিক পরিচালক মনোনীত করে বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান।
এসইএআরও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছয়টি আঞ্চলিক অফিসের একটি; সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে এ অফিস গঠিত। বাংলাদেশ, ভুটান, উত্তর কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, তিমুর-লেস্তে এবং মিয়ানমার এ অফিসের সদস্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় ২০২৪ সালের ২২ থেকে ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ডব্লিউএইচওর ১৫৪তম অধিবেশনে এই মনোনয়ন জমা দেওয়া হবে। নবনিযুক্ত আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ আগামী ১ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বিষয়ক বাংলাদেশ জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলেরও সদস্য। বাংলাদেশে অটিজম-আক্রান্ত ব্যক্তিদের মুখপাত্র হিসেবে উদ্ভাবনী কাজের জন্য ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে ‘অটিজম-বিষয়ক শুভেচ্ছা দূত’ হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।
এসইএআরও এর আঞ্চলিক পরিচালক পদে বাংলাদেশ সরকারের মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে এ অঞ্চলের জনস্বাস্থ্য নীতি ও অনুশীলনে তার দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় কাজ করার পরিকল্পনা করবেন তিনি।
গত অগাস্টে চ্যাথাম হাউসের গ্লোবাল হেলথ প্রোগ্রামের একজন সহযোগী ফেলো হিসেবে যোগ দেন সায়মা ওয়াজেদ। ২০২২ সাল থেকে তিনি সেখানে ইউনিভার্সাল হেলথ কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ১৯৭২-এর ৯ ডিসেম্বর সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেন পুতুল। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক, ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ওপর মাস্টার্স এবং পরবর্তী সময়ে ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজিতে বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন।
ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা শুরু করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত হয়।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ২০০৮ থেকে শিশুদের অটিজম ও স্নায়বিক জটিলতা-সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন। এছাড়া বাংলাদেশের অটিজম-বিষয়ক জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের কাজের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পেয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪-এর সেপ্টেম্বরে তাকে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।
মনস্তত্ত্ববিদ সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকস-এর পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি ২০১৩-এর জুন থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হন। সারা বিশ্বেই তিনি অটিস্টিক শিশুদের অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের উদ্যোগে ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজম-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গঠিত হয় ‘South Asian Autism Network (SAAN)’। যার সদর দপ্তর করা হয় বাংলাদেশে। তার চেষ্টাতেই বাংলাদেশে ‘নিউরোডেভলপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি ট্রাস্ট অ্যাক্ট ২০১৩’ পাস করা হয়। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সৃষ্টিশীল নারী নেতৃত্বের ১০০ জনের তালিকায়ও স্থান করে নিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশে অটিজম-বিষয়ক বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছাদূত হিসেবেও কাজ করছেন সায়মা ওয়াজেদ। ২০১৬ সালে তিনি প্রতিবন্ধীদের ডিজিটাল ক্ষমতায়নের জন্য ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ডেও সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। অটিজম নিয়ে আরও ব্যাপক আকারে কাজ করতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে, ঝুঁকিপূর্ণ ৪৮ দেশের জোট সিভিএফ। আর বাংলাদেশ সিভিএফের চেয়ারম্যান। জোটটির চারজন দূত মনোনিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল। অন্য তিনজন হলেন মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদ কামাল, ফিলিপাইনের ডেপুটি স্পিকার লরেন লেগ্রেডা এবং কঙ্গোর জলবায়ু বিশেষজ্ঞ তোসি মাপ্নু। সিভিএফের পক্ষে চার দূত জলবায়ু-ঝুঁকি মোকাবিলায় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বিকাশে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
পরিশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক নির্বাচিত হয়ে বিশ্বদরবারে আরেকবার বাঙালি জাতিকে অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। এই অনন্য অর্জনে বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। এ উপলক্ষ্যে অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির পক্ষ থেকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তাঁর মেধা, মনন, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করবেন। আমি তাঁর উত্তরোত্তর সফলতা ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।
একুশে সংবাদ/স ক
আপনার মতামত লিখুন :