AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ভোটের হাওয়া ও ইশতেহারে বেকার ভাতা


Ekushey Sangbad
প্রফেসর ড. মো. ফখরুল ইসলাম
০৫:৪৬ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
ভোটের হাওয়া ও ইশতেহারে বেকার ভাতা

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছে। এই ইশতেহারে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘স্মার্ট সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। এই ইশতেহারে তরুণদের দাবিদাওয়ার কতটা প্রতিফলন ঘটেছে তা জানার চেষ্টা করেছি। তরুণ-যুবসমাজের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, দেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে তাদের সম্পৃক্ত করা হবে। কর্মক্ষম, যোগ্য তরুণ ও যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ করা হবে। একই সঙ্গে জেলা ও উপজেলায় ৩১ লাখ যুবকের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা প্রদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

এদিকে ভোটের দিন ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনি এলাকায় কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে ব্যালট পেপার পাঠানো শুরু হয়েছে। বাস্তবতা হলো, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে সারা দেশে ভোটের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। কোনো কোনো নির্বাচনি এলাকায় এই উত্তাপ এত বেশি যে, সেটা স্বাভাবিক নির্বাচনি সমীকরণকে পরিবর্তন করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলেছে। কিছু এলাকায় প্রার্থীরা ফুরফুরে মেজাজে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। কোথাও ছাদখোলা গাড়িতে চড়ে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ভোটারদের। আবার কোথাও কোথাও ছাদখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে অথবা সেখান থেকে শরীর হেলিয়ে গলা এগিয়ে দিয়ে মৌসুমি গাঁদা ফুলের মালা গ্রহণ করছেন। সেসব ফুলের মালা এত বেশি যে, গাড়ির বনেট মালায় মালায় ঢাকা পড়ে গেছে।

আবার কোনো কোনো নির্বাচনি এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা তেমনভাবে জমে ওঠেনি। সেখানে কোনো কোনো প্রার্থী আক্ষেপ করে বলছেন, শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকলে প্রচারণা জমে কীভাবে? অনেক ভোটার আবার এলাকার কাকে সমর্থন করে, কার মিছেলে অংশগ্রহণ করবেন, সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না। তবে প্রার্থীদের পাশাপাশি এবারের ভোটের প্রচারণায় গণমাধ্যমের তত্পরতা চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে, নির্বাচনি প্রচারণার মঞ্চের পাশে গিয়ে টিভি ও ইউটিউবারদের ছবি তোলার হিড়িক ও প্রতিযোগিতা আগের অন্য যে কোনো ভোটের প্রচারণার চেয়ে শতগুণ পেরিয়ে গেছে। বিশেষ করে, এবারের মনোনয়ন লাভে সিনেমার নায়ক, নায়িকা, গায়িকা, জাতীয় দলের বাঘা বাঘা খেলোয়াড় সবার আগে এগিয়ে থেকে সাড়ম্বরে জমকালো নির্বাচনি প্রচারণায় নেমে পড়ায় তাদেরকে সামনাসামনি একনজর দেখার জন্য উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের ক্রেজ তৈরি হয়েছে। তাদের এই ক্রেজ ছাপিয়ে সেটা ইউটিউবারদের কনটেন্ট তৈরি ও লাইক বাড়ানোর ক্ষেত্রে খোড়াক জোগানোর উপাদান হিসেবে দেখা দিয়েছে। এসব কিছুই সব ধরনের দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় সারা পৃথিবীর মানুষ ঘরে বসে দেখার সুযোগ পেয়ে গেছে।

তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোথাও কোথাও যে সহিংসতা চলছে এবং নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তা কাম্য নয়। এই নির্বাচন নিয়ে শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের মধ্যেও কৌতূহল বেড়েছে বহুগুণ। বিশেষ করে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রতিপক্ষের কার কত টাকা-সম্পদ, তার কাহিনি মানুষ নতুন করে জানছেন। বেকারদের মনেও কৌতূহল বাড়ছে। তারা বহুদিন ধরে বেকার ভাতার কথা বলে আসছেন। এর বাস্তবায়ন কতটা হবে, তা এখন বলা সম্ভব নয়। নির্বাচনের সময় আমরা কেবল প্রতিশ্রুতির কথাই বলতে পারি।

ভোটের মাত্র কয়েক দিন আগে প্রার্থীদের নানা চমকপ্রদ কাহিনি, গল্প ও বক্তব্য ইন্টারনেটে ভেসে বেড়াচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন সুবিধাভোগী দরিদ্র ভোটারদের ভোট দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করা হচ্ছে কোথাও কোথাও। বয়স্ক ভাতাগ্রহীতাসহ বিভিন্ন উপকারভোগীর কাছ থেকে জোর-জবরদস্তি করে কার্ড জমা নেওয়া হচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে, নির্বাচনে জিততে না পারলে কার্ড ফেরত দেওয়া হবে না। ভোট না দিলে ভাতা ও রিলিফ বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিশেষ করে, একই এলাকার একই দলের সরকারি প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এসে বারবার হুমকি-ধমকি দিয়ে ভোট চাইতে আসায় এসব উপরভোগী কার্ডধারী দরিদ্র মানুষ বিপদে পড়েছেন। তারা কেউ কেউ নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কারণ ভোটের পর একই মতাদর্শের একজন হেরে গেলে অন্যজন কীভাবে তাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে আসবেন, সেই ভয় জেঁকে বসেছে এখন থেকে। এই ক্ষতিকর প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসা প্রয়োজন।

এ বছর এমন একটি সময়ে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন আমন ধান ও সবজির মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও বাজারে নিত্যপণ্যের দামে এখনো তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। এই সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত বার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিরাজ করছে। ফলে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ ন্যূনতম পুষ্টিমানসম্পন্ন খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাছাড়া বর্তমানে দেশে শিক্ষিত বেকারের হার ৪০-৪২ ভাগ। শিক্ষিত বেকাররা জানেন না তারা কখন ও কীভাবে নিজেদের কর্মসংস্থান করতে পারবেন। ধারাবাহিকভাবে প্রবাসী আয় কমেই চলেছে। বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভের চাপও বাড়ছে। ব্যাংকিং সেক্টরে তারল্য সংকটসহ নানা অস্থিরতা বিরাজ করছে। নির্বাচনের পর এইসব সমস্যার সমাধানে মনোযোগ দিতে হবে। বেকারত্ব দূরীকরণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

আমার জানা মতে, এবারের দেশে শিক্ষিত বেকারদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের কথা ততটা অগ্রাধিকারের সঙ্গে কোনো প্রার্থী প্রচার করছেন না। তবে একটি ছোট দল ইতিমধ্যে তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে বেকারদের জন্য ভাতা প্রদানের কথা উচ্চারণ করেছেন। এটা একটি সাহসী উচ্চারণ। কিন্তু বাংলাদেশের মতো আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা প্রদানের কথা বেশ চমকপ্রদ শোনালেও তার বাস্তবায়ন কতটা করা যাবে সেটাই প্রশ্ন।

 

একুশে সংবাদ/স.ট.প্র/জাহা

 

Link copied!