বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আগামীকাল রবিবার (১০ মার্চ) জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস ২০২৪ পালিত হবে। ১৯৯৭ সাল থেকে মার্চের শেষ বৃহস্পতিবার সারাদেশে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালিত হয়ে আসছে। এরপর দিবসটিকে ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত করে ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।
এভাবে চলে আসার একপর্যায়ে মার্চের শেষ সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে মহান স্বাধীনতা দিবস পড়ে। একই দিনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস পড়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয় সংশ্লিষ্টদের জন্য।এ কারণে ওই বছর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিশেষ সম্মতিতে ৩১ মার্চ জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদের ওই সম্মতিপত্রে সুবিধাজনক অন্য কোনো তারিখে দিবসটি পালন করার ব্যাপারে অনুশাসন দেওয়া হয়।২০১৬ সালে যাচাই-বাছাইয়ের পর জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালনের জন্য ১০ মার্চ নির্বাচন করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। কারণ এদিন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কোনো দিবস নেই। ওই বছর থেকে ১০ মার্চ জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালিত হয়ে আসছে।
প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বেসরকারি সংস্থা, সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করাই এই দিবসটি পালনের লক্ষ্য।আর ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে প্রতি বছরই বাংলাদেশে মার্চ মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে থাকে। সঠিক সময়ে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা গেলে এসব দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করে জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। এইজন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। উপকূলীয় বনায়নের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র এবং মুজিব কিল্লা নির্মাণের কাজও তখন থেকে শুরু হয়েছিল। তিনি (বঙ্গবন্ধু) ১৯৭৩ সালে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচিকে (সিপিপি) সরকারের অন্যতম একটি কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, যা আজও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের ক্ষেত্রে বিশ্বে একটি উত্তম চর্চা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।তাই বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই বর্তমান সরকার দুর্যোগ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের টেকসই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে এবং দুর্যোগ প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে গ্রামীণ রাস্তায় সেতু-কালভার্ট নির্মাণ, গ্রমীণ মাটির রাস্তাসমূহ টেকসইকরণের লক্ষ্যে হেরিংবোন বন্ডকরণ, উপকূলীয় এলাকায় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, জেলা ত্রাণ গুদাম-কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ, ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগকালে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে । ,এসব কার্যক্রমের প্রতিটি ধাপে সম্পদের সুষ্ঠু ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্ব দিতে হবে।তাই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যথাযথ পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি ও ঝুঁকি হ্রাসে বাংলাদেশ উল্লেযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, ঘুর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমরা সার্বিকভাবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের রোল মডেল। এর ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার সক্ষমতা আমাদের কাছে। তবে ভূমিকম্প বাংলাদেশের জন্য নতুন এক দুর্যোগ। এটাকে আমরা কমাতে পারবো যদি আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি থাকে। ভূমিকম্প মানুষ মারে না। বিল্ডিং ধসের মাধ্যমে মানুষ বেশি মারা যায়। তাই আমাদের বিল্ডিং করার সময় ভালোভাবে ডিজাইন করে করতে হবে। ভূমিকম্পের সোর্সগুলো নিয়ে আমাদের বেশি করে গবেষণা করতে হবে। ভূমিকম্পের সোর্স কত দূরে সেই ক্যালকুলেশন করে বিল্ডিং। যদিও বাংলাদেশ ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা থেকে অনেক দূরে। তারপরও এ বিষয়ে অনেক সতর্ক থাকতে হবে। তাহলে ক্ষয়ক্ষতির হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
লেখক, কলাম লেখক ও সংগঠক
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :