মাটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। এটি পৃথিবীর অধিকাংশ জীবের খাদ্য উৎপাদন এবং বসবাসের মাধ্যম। ফসল উৎপাদনে মাটির উপযুক্ত বিকল্প নেই। কৃষিপ্রধান এই বাংলাদেশে প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ খুব একটা বেশি নেই। ফলে এ দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা কৃষি, যা সম্পূর্ণভাবে মাটির ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের ভাগ্যের সঙ্গে জড়িত সোনার চেয়ে দামি এই মৃত্তিকাসম্পদ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, এ মাটির পরিবেশ ও মাটির উর্বরতা আজ হুমকির মুখে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশে যেসব ক্ষেত্রে মন্দা যাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম কৃষিক্ষেত্র। বাড়তি ফসলের আশায় কৃষকেরা মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে খাদ্যের গুণগতমান নষ্টের পাশাপাশি মাটির উর্বরতা শক্তিও নষ্ট করছে। আবার অন্যদিকে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার বাড়িয়ে তুলছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জৈব কৃষি ও জনসচেতনতার বিকল্প নেই।
ফসল উৎপাদন মাটির স্বাস্থ্যের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। মাটি হচ্ছে কৃষির মূল ভিত্তি। উর্বর মাটি না হলে ভালো ফসল উৎপাদন হয় না। তাই সুষম মাটিতে ৫ শতাংশ জৈব উপাদান থাকার কথা। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, মাটিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে দেশের মোট আবাদযোগ্য ১ কোটি ১৪ লাখ ৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৬১ শতাংশে জৈব পদার্থের মারাত্মক ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, জমির উর্বরা শক্তি কমার মূল কারণ হচ্ছে-একই জমিতে বছরে একাধিকবার ফসল চাষ এবং মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে ভেঙে পড়েছে মাটির স্বাস্থ্য। মাটির উর্বরতাশক্তি ও জৈব পদার্থের উপস্থিতি নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট (এসআরডিআই)। `ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন ইন বাংলাদেশ` শীর্ষক এ সমীক্ষায় মাটির উবর্রতা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে মাটিতে জৈব পদার্থের ঘাটতির তথ্য উঠে এসেছে।
সাধারণত ৪৫ শতাংশ খনিজ বা মাটির কণা, ৫ শতাংশ জৈব এবং ২৫ শতাংশ করে পানি ও বাতাস থাকা মাটিকে সুষম মাটি বলা হয়। একটি আদর্শ জমিতে জৈব পদার্থের মাত্রা ৩.৫ শতাংশ থাকা অতি প্রয়োজনীয় হলেও এ দেশের বেশিরভাগ জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ এক দশমিক ১৭ শতাংশ এবং কিছু কিছু জমিতে এর পরিমাণ ১ শতাংশের চেয়েও কম এর মধ্যে ৫৪ লাখ হেক্টর জমিতে ফসফরাস, ২৬ দশমিক ৩০ লাখ হেক্টর জমিতে পটাশিয়াম, ৩৩ দশমিক ৩০ লাখ আট হাজার হেক্টর জমিতে গন্ধক, ২৭ দশমিক ৭ লাখ হেক্টর জমিতে দস্তা সার, ২৩ দশমিক ৯ লাখ হেক্টর জমিতে বোরন সারের অভাব রয়েছে। এছাড়া অনেক জমিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের অভাব। জলবায়ুর পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, একই জমিতে যুগের পর যুগ একই ফসলের চাষ, জমিকে বিশ্রাম না দেওয়া, রাসায়নিক সারের অসম ব্যবহারের কারণে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
বেশি ফলন পাবার আশায় বেশি বেশি রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেন কৃষকরা। এতে জমির জৈব পদার্থ কমে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে জমির উর্বরা শক্তি। জমির উর্বরা শক্তি ঠিক রাখতে প্রয়োজন নানা ধরনের ফসল চাষ। উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ফসল চাষও জমির উর্বরা কমার কারণ। ধাতব পদার্থের কারণে দূষিত হয়ে পড়ছে দেশের উর্বর মাটি। আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, সীসা, নিকেল হচ্ছে ভারি ধাতব পদার্থ। এসআরডিআইয়ের তথ্যমতে, কৃষিজমিতে স্বাভাবিকের তুলনায় দস্তার পরিমাণ কম। এর মধ্যে পদ্মা নদীর অববাহিকার মাটিগুলোয় চুন ও ক্ষারের মাত্রা অনেক বেশি। অন্যদিকে হাওরাঞ্চলের জেলাগুলোয় আবাদি এলাকা নিচু এলাকা হওয়ার কারণে কৃষিজমিগুলো অধিকাংশ সময় জলমগ্ন থাকে। এজন্য এসব অঞ্চলে দস্তার পরিমাণ দিনের পর দিন কমছে। দেশের প্রায় ৫৫ শতাংশ জমিতে দস্তার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমাগত ফসল ফলানোর কারণে দেশের মাটিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণে জৈব পদার্থ নেই। মাটিকে যথাযথভাবে ব্যবহার না করায় উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। অপরিকল্পিত চাষাবাদ, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, শিল্পায়ন, দূষণ, ব্যাপক হারে বনভূমি ধ্বংস এবং অপরিকল্পিতভাবে সারের ব্যবহারের কারণে মাটির উবর্রতা শক্তি হারাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ইটভাটার জন্য মাটির উপরিভাগের অংশ তুলে নেওয়া ছাড়াও মাটির টেকসই ব্যবস্থাপনার অভাবে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির ফলে মৃত্তিকা এখন হুমকির মুখে রয়েছে। এসব কারণে মাটির স্বাস্থ্যহীনতায় এখন প্রতি বছর ফসল উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির মাটির উর্বরতার মাত্রা শতকরা ২ দশমিক ৫ থেকে শতকরা ১ দশমিক ৫-এ দাঁড়িয়েছে। এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর আবাদযোগ্য জমির অর্ধেকই তার উৎপাদনক্ষমতা হারিয়েছে। এর ফলে প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হচ্ছে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি যৌথভাবে এ সমীক্ষা চালায়।
দক্ষিণ এশীয় অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে জমির উর্বরতা হ্রাস পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। জমিতে অধিক মাত্রায় ও নির্বিচারে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলেই মাটির উর্বরা শক্তি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। একই জমিতে বছরের পর বছর ধরে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির বিভিন্ন গুণগত বৈশিষ্ট্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাটির অম্লত্ব পরিবর্তিত হয়ে পানি ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে ও অণুজীবের কার্যাবলি ব্যাহত হচ্ছে। এতে মাটির উৎপাদনশীলতা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
ফসল উৎপাদনের সঙ্গে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদনক্ষমতার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। মাটির উর্বরতা বলতে ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানসমূহ সরবরাহের ক্ষমতাকে বোঝায়। অর্থাৎ মাটিকে তখনই উর্বর বলা হবে, যখন তাতে কোনো উদ্ভিদের পরিপূর্ণ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সব খাদ্য উপাদান সঠিক পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। অনুর্বর মাটিতে ফসলের ফলন হয় কম, আর উর্বর মাটিতে ফলন হয় আশাব্যঞ্জক। সুতরাং অধিক উৎপাদন পেতে হলে মাটির উর্বরা শক্তি বজায় রাখতে হবে। আদিকাল থেকেই মানুষ মাটির উর্বরা শক্তি বজায় রাখার প্রয়াস চালিয়ে আসছে। পশু পালন যুগে মানুষ লক্ষ করে দেখতে পায়, যে স্থানে পশু মল ত্যাগ করে সেখানে গাছ তর তর করে বড় হয়ে ওঠে। এভাবে মানুষ গোবর সারের ব্যবহার শেখে। চীনা কৃষি রেকর্ডে দেখা যায়, প্রায় চার হাজার বছর আগে চীনারা কৃষিতে গাছ ও জীবজন্তুর দেহাবশেষ এবং মানুষের মলমূত্র ব্যবহার করত। আমাদের দেশেও আবহমানকাল থেকে গোবর, খৈল, ছাইয়ের ব্যবহার চলে আসছে।
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে রাসায়নিক সার এ দেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ইদানীং আমরা রাসায়নিক সারের ওপর এতই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি যে জৈব সারের কথা কেউ কেউ ভুলেই গিয়েছি। অবশ্য এখনো কিছু কিছু চাষি রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সার ব্যবহার করছেন। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রেই সার অসম মাত্রায় ব্যবহার করা হচ্ছে। রাসায়নিক সারের অত্যধিক ব্যবহারে কারণে শুধু যে মাটির গুণাগুণ নষ্ট তা নয়, আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশও দূষিত হচ্ছে। পূর্বে শস্য কাটার পর শস্যের যে অবশিষ্টাংশ জমিতে পড়ে থাকত তা পচে জমিতে জৈব সার হিসেবে যোগ হতো। আজকাল তাও আর জমিতে পড়ে থাকে না। কেননা ওগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আজকাল মূল্যবান গোবর সার দিয়ে ঘুটে তৈরি করে রান্নার কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। এক তথ্যে জানা যায়, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ টন গোবর সার এবং ২ দশমিক ৩২ কোটি টন বর্জ্য জ্বালানি হিসেবে উনুনে পোড়ানো হয়। এমতাবস্থায় জৈব সারের ব্যবহার ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
জৈব পদার্থ মাটির প্রাণ। মানবদেহে রক্তের গুরুত্ব যেমন অপরিসীম, মাটিতে জৈব পদার্থের গুরুত্বই তেমনি। তাই বিভিন্ন জৈব সার যেমন গোবর, খামারজাত সার, কম্পোস্ট, বসতবাড়ির আশপাশের পচা আবর্জনা সার, খৈল, সবুজ সার, ছাই, খড়-নাড়া, কচুরিপানা, পচা পাতা ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে মাটিকে জৈব পদার্থে সমৃদ্ধ করে উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করা যায়। উদ্ভিদ যে কয়টি খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে তার প্রায় সবগুলোই জৈব পদার্থে নিহিত থাকে।
কৃষিবিদদের মতে- অধিকাংশ কৃষকই বেশি ফসলের জন্য নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম সার ব্যবহার করেন। অপরিমিত ও মাত্রাতিরিক্ত সার ব্যবহারে মাটির উর্বরা গুণাগুণ হারিয়ে যাচ্ছে। এতে একটা সময় কৃষিতে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। মাটির ঘাটতি কমানোর পাশাপাশি উবরতা শক্তি ধরে রাখতে সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। জীবন ধারণের জন্য উদ্ভিদ মাটি থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য হিসেবে খনিজ পদার্থ ও পানি সংগ্রহ করে। এর অভাব হলে ফসল তথা উদ্ভিদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে ও ফসলহানি ঘটে। দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে গিয়ে শস্যের নিবিড়তা বাড়ছে, এতে মাটির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। টেকসই মাটি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটির উৎপাদনশীলতা, মাটিতে গাছের অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানের মান বজায় রাখতে হবে। কারণ মানুষের জীবন-জীবিকা ও খাদ্যনিরাপত্তা নির্ভর করে টেকসই মাটি ব্যবস্থাপনা ধরে রাখতে হবে। সেজন্য মাটিকে সজীব রাখতে হবে, মাটির গুণাগুণ বজায় রাখতে হবে।
উর্বরা শক্তি ফিরিয়ে আনতে চাষে ভিন্নতা আনতে হবে। একবার ধান করলে পরের বছর ডাল জাতীয় ফসল করতে হবে। আবার দুই ফসল উৎপাদনের পর জমিকে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। গরু-মহিষের বর্জ্য জৈব পদার্থের বড় উৎস্য। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে ফসল চাষাবাদে ভূমি ক্ষয় একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যাকে সামনে রেখে এসআরডিআই বান্দরবানে বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে। ইতোমধ্যে পাহাড়ি এলাকার ভূমি ক্ষয়রোধে কয়েকটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলে ১০ লাখ ৫৬ হাজার জমি লবণাক্ত।
এ বিষয়ে উজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, কৃষিবিদ কপিল বিশ্বাস বলেন, ‘মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জমি তার উর্বরতা হারায়, যার ফলে মাটির পিএইচ-এর মাত্রা কম বেশি হয়ে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে। যার ফলের ধানের পুষ্টিগুণ থাকে না, চিটা বেশি হয়।
তিনি বলেন, বরিশাল অঞ্চলের কৃষকরা, সার ও কীটনাশক ব্যবহারের নিয়ম-কারণ মানছে না। এ অঞ্চলের কৃষকরা একতরফাভাবে ইউরিয়া সার অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করেন, এতে ফসলের গাছ মোটাতাজা হলেও গাছের ইমিনিউ সিস্টেম অথবা রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না। যার ফলে সামান্য ঝড় বাতাসে ধানের গাছ মাটিতে শুয়ে পড়ে এবং ফসল খেতে সহজে পোকামাকড় আক্রমণ করে।
তিনি আরো বলেন, জমিতে ভালো ফসল পেতে হলে পিএইচ-এর মাত্রা ৬ থেকে ৭-এর মধ্যে থাকা উচিত। কিন্তু এ অঞ্চলের মাটিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পিএইচ-এর মাত্রা ৫-এর নিচে নেমে যায়, সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ক্ষারীয় কারণে ফসল নষ্ট হয়, পুষ্টিহীনতায় ভোগে। যার ফলে ফলন ভালো হয় না। এ থেকে উত্তরণ পেতে হলে কৃষককে বিঘাপ্রতি সার ও কীটনাশক গাইডলাইন মানতে হবে। যেমন ৩৩ শতাংশ জমিতে, ইউরিয়া ব্যবহার করতে পারবে ৩২ কেজি- পটাশ ব্যবহার করতে হবে ১৬ কেজি আর জিপসাম ব্যবহার করতে হবে ৭ কেজি। কিন্তু এ অঞ্চলের কৃষকরা ইউরিয়া সার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে। অন্য সারগুলো সমন্বয় করে ব্যবহার করা উচিত- সেটা বুঝতেই চাচ্ছেন না তারা।
এ কৃষিবিদ আরো জানান, এক্ষেত্রে আমাদের কৃষি কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন প্রদর্শনী ও সেমিনারের মাধ্যমে কৃষকদেরকে জৈব সার ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। একই সাথে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের বিষয়ে কৃষকদের হাতেকলমে শিখিয়ে দিচ্ছে। যার ফলে এ বছর ইরির বাম্পার ফলন হয়েছে। মাটির পিএইচ-এর মাত্রা পরীক্ষার বিষয়ে কর্মকর্তা বলেন, যে কোনো কৃষক তার জমির মাটি নিয়ে আসলে, আমরা আমাদের ব্যবস্থাপনায় জেলা কার্যালয়ে থেকে মাটির পিএইচ পরীক্ষা করে থাকি। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরির মাধ্যমেও পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মুরাদুল হাসান বলেন, কৃষকের যেকোনো পরামর্শের জন্য, আমাদের কৃষি বিভাগ সব সময় কৃষকদের পাশে আছে। আমরা রাসায়নিক সার কমিয়ে সবসময় জৈব সার ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি কৃষকদের। কৃষকদের ফসল আবাদের বিভিন্ন পর্যায়েই সচেতন থাকতে হবে। কোন মাটিতে কোন ফসল, কতটুকু সার-কীটনাশক এবং তা কখন প্রয়োগ করতে হবে সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য বর্তমান সরকারের কৃষি বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :