কুরবানির পশুর হাটে প্রয়োজন সতর্কতা অবলম্বন
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
কোরবানি বান্দা কর্তৃক মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও আত্মত্যাগের অনন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ঈদুল আজহার দিন থেকে, অর্থাৎ ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোরবানির দিনগুলোতে নির্দিষ্ট ধরনের গৃহপালিত পশু জবেহ করাই হচ্ছে কোরবানি।
আগামী ১৭ জুন (সোমবার ২০২৪) দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। এই মাসে ঝড়-বৃষ্টি বেশি হয় বলে ঈদযাত্রা থেকে শুরু করে কোরবানির পশু নিয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। আর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। তাই ঈদুল আজহার আমেজ আসে কোরবানির পশুর হাট ঘিরে। পরিবারের সদস্যরা মিলে হাটে যাওয়া, দরদাম করে পশু কিনে বাড়ি ফেরা, পথে মানুষের জিজ্ঞাসা ‘দাম কত হলো,’ এসব আলাদা মাত্রা যোগ করে ঈদের আমেজে।
আর মনের পশুকে কোরবান করা হয়। কাজেই উপলব্দিকে উপলক্ষ করে মানুষ পশু কিনতে বাজারে যায়। নিজের পছন্দে নিজেই কিনে আনে বলে কুরবানির হাট কিংবা বাজার, অন্য অনেক থেকে আলাদা। কাজেই, এ বাজারে পুরাতন বিক্রেতার সাথে নতুন ক্রেতার দেখা হয়, পুরাতন দালালের সাথে নতুন ক্রেতার ভণিতার সখ্য হয়। গরু পৌঁছে দেওয়ার সহকারীর কাছে একশত টাকা থেকে হাজার টাকার দফারফায় লক্ষ টাকার গরু বা পশু তুলে দিতে হয়। তাই কানকে খরগোশের মতো খাড়া করে, চোখকে মাছির মতো সচল রেখে, বাজারে বা হাঁটে ঢুকতে হয়। অস্থায়ী মানুষের অস্থায়ী হাট ক্ষণস্থায়ী বলে পদে পদে বিপদ সাথে সাথে ঘুরে। এজন্যই এ বাজারে অধিক সতর্কতার সাথে পশু কিনতে হয়। চোখকে টর্চলাইট, কানকে এন্টেনা, মনকে রাডার মানিয়ে চলতে হয়।
যদিও কুরবানি ভালো ও সুস্থ পশু ছাড়া হয় না। তাই নতুন ক্রেতা পুরাতন বিক্রেতার কাছে যায়। ফাঁদ পাতা জালে আটকা পড়ে বেশি। সারা বাংলাদেশে আবার ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে দুই ধরণের কাস্টমার বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে। এর একজন বিদেশ থেকে ডলার, পাউন্ড নিয়ে আগত। আবার অন্যজন ভাই, বোন বা আত্মীয় পরিজনের টাকার পশু কিনতে আগত কাস্টমার। বিক্রেতারা এ দুই ধরণের কাস্টমার কে গুরুত্ব বেশি দিয়ে আবার দুই ধরণের দাম হাঁকায়। বিদেশীকে পশুর দাম থেকে ৩ থেকে ৫ গুণ বাড়িয়ে বলে অনড় থাকা। আবার বিদেশী টাকায় দেশি কাস্টমারকে ৩ থেকে ৪ গুণ দাম বাড়িয়ে বলা। দেখা গেছে, যিনি ডলার বা পাউন্ড নিয়ে এসেছেন তিনি পাউন্ড বা ডলারকে চোখ বুজে টাকায় রূপান্তর করে বেশ সস্তায় কিনতে পারছেন মনে করে বেশি দামে কেনেন। আবার পরের ধনে পৌদ্দারী করা কাস্টমার, বেশি দামদর না করেই পশু কিনে নেন। তারা পশুর দাম যাচ্ছে তাই হাঁকাতে শুরু করে। আটকে দেয় তাদের- যারা ঘুষের টাকা গরিব মারার টাকায় কিনতে আসেন না।
বাজারের নিয়মিত পদ্ধতি হচ্ছে, আপনি যা কিনতে বা ক্রয় করতে যাচ্ছেন তার সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিয়ে যাওয়া। এতে যদি কোন রাস্তা না থাকে, তাহলে একজনের কাছে দাঁড়িয়ে হঠাৎ দাম করে না কিনে বাজারে দর দাম যাচাই করে কেনা। ফলমূল, তরিতরকারি, আসবাব কিংবা জমি কেনার মতো কিনতে কিনতে ক্রেতা হওয়ার মতো বাজারে অভিজ্ঞ ক্রেতা সেজে ঢুকুন। ঠকবেন না। ইদানিং একটি কথা প্রচলন আছে বাজারে- সেটি মোটাতাজা পশু। সম্পূর্ণ না জেনে। না প্রশিক্ষণে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পশু মোটাতাজা করে বাজারে বিক্রি। দেখা গেছে, মোটাতাজা করা কৃত্রিম পশুর মাংস খেয়ে কুরবানির দিনেই অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে মোটাতাজা গরু কিনবেন, কিনুন, পরীক্ষা করে।
পশুর হাট বা বাজারের হালচাল ভালো থাকে না। দেখা গেছে বিক্রেতা পশু বিক্রি করে ফেলেছেন- ক্রেতা জাল নোট ধরিয়ে দিলো। দিতেই পারে। তাই বিক্রেতার কাছে পশু হস্তান্তরের পূর্বে হাটে কিংবা পশুর বাজারে অবস্থিত ব্যাংকের অস্থায়ী বুথে জাল নোট শনাক্ত করে টাকাগুলো গুনে, বুঝে, তারপর পশু হস্তান্তর করুন। মনে রাখবেন, যারা জাল নোট বহন করে তারা মারাত্মক অপরাধী। এদেরকে পুলিশের হাত ছাড়া কারো হাতে দেবেন না।
অননুমোদিতভাবে রাস্তাঘাট, ফুটপাত, খেলার মাঠ কিংবা রাস্তায় চলমান বিক্রেতার কাছ থেকে পশু কিনবেন না। এতে বোর্ডার পাস করা, কারো জমি থেকে হারিয়ে যাওয়া, গোয়াল ঘর থেকে খোয়া যাওয়া পশুও কিনে ফেলতে পারেন। কাজেই অনুমোদন প্রান্ত পশুর হাঁট বা বাজার থেকে পশু কিনুন।
অনেক সময় ক্রেতার সরলতার সুযোগ নিয়ে বিক্রেতারা পশুর শরীরে কৃত্রিম রঙ মাখিয়ে, বয়স লুকিয়ে, পশুর দাঁত প্রদর্শন না করে, নেশা খাইয়ে পশুর পায়ে প্যারেক গেঁথে, লেজে আলপিন মেরে, অসুস্থ পশুর শরীরে চিরুনি দিয়ে নিঁজন দিয়ে বিক্রি করতে পারে। তাই ভ্রটিগুলো মেপে অসুস্থ কি-না মলত্যাগের রাস্তা পরখ করে কিনতে হবে।
বাজারের হালচালে আরেকটা অবৈধ উৎপাতের নাম দালালো উৎপাত। এদের লড়াইয়ে চলা ই বাজারের ধরণ। লক্ষ্য করলে দেখবেন, যে লোক একবার আপনার পক্ষে আরেকবার বিক্রেতার পক্ষে কথা বলছে, বুঝ নেবেন এর পার্স নেই। লোকটি এখানকার দালাল। আবার ক্রেতা সাজিয়ে আরো দু’চারজনকে এতে আপনার করা দামের চাইতে বেশি দামে পশু কিনতে হচ্ছে, তখন বুঝে নেবেন লোকটি ফড়িয়া।
অনেকে কেনা পশু বাসা বাড়িতে পৌঁছে দেবার সাহায্যকারী নেন। কিন্তু সাহায্যকারীর কোন পরিচয় রাখেন না। বুঝে নেবেন হয়তো ফাঁকফোকরে আপনার পশু খোয়া যেতে পারে। তাই সাহায্যকারী নেবার পূর্বে সাহায্যকারীর আসল পরিচয় জানতে তার রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল নম্বর। জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদের কপি রাখুন। একান্ত অপারগ হলে হাতে থাকা ক্যামেরাযুক্ত মোবাইলে ছবি তুলে রাখুন। হাঁটুন তার সাথে সাথে।
পশু কিনতে বা ক্রয় করতে গেলে সাথে টাকা থাকে, তা অন্ধ চোর বা কানা ছিনতাইকারী জানে। কাজেই সতর্ক থাকুন। পাশাপাশি না হেঁটে পাশের জনকে নিয়ে ভিড়ে ভিড়ে আগে পিছে করে হাঁটুন। কাউকে সন্দেহ হলে, সন্দেহ নিশ্চিত হলে, পুলিশ কিংবা ভালো পথিককে জানিয়ে রাখুন। পাশের জন যাকে আপনি সাথে এনেছেন, তাকে আপনার পেছনে গিয়ে আপনাকে চোখে চোখে রাখতে বলুন। সাবধানে টাকা রাখুন। সাধুবেশে চোর। ভদ্র বেশি ছিনতাইকারী। মিষ্টভাষী কপট মানুষ এখন পায়ে পায়ে হাঁটে। পশু কিনে বা ক্রয় করে রশিদ নেন। মনে রাখবেন, রশিদ হচ্ছে নিরাপত্তার পাস। মনে রাখবেন যে রশিদটি নিচ্ছেন তার মধ্যে ক্রেতার ও বিক্রেতার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, প্রযোজ্যক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদ নম্বর থাকে। আরো থাকে ক্রয়কৃত পশুর বিবরণ ও হাট বা বাজারের নাম। কাজেই চোরাইপশু কেনার হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার এটিও এক মোক্ষম সুযোগ। একে হাতছাড়া করতে নেই।
কেনার পর পশুর গলায় বাঁধা দড়ি পরীক্ষা করবেন। দড়িটি শক্ত কি না। মাথা থেকে দড়ি বের হয়ে যাচ্ছে কি না। পাটের দড়ি হলে ভালো। নাইলনের দড়ি হলে টানতে টানতে পশুটি ফাঁস লাগালো কি না নজর নেবেন। তবেই হয়তো দড়িটি নিরাপত্তার কাজে বেশি সহযোগিতা করতে পারে। নতুবা দড়ি ছিঁড়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার মতো পশুর কথাও অনেকে বলে থাকেন। এবার আসুন, অন্য আরেক কথা বলি-
রাস্তার ধারে, অনুপযুক্ত স্থানে, ময়লা ড্রেনের পাশে পশু জবাই করবেন না। যেখানে সেখানে জবাইকৃত পশুর রক্ত, নাড়িভূড়ি ফেলবেন না। রক্ত পরিস্কার করুন। আবর্জনা মাটির নিচে পুতে দিন। বিগত ৪ বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গবাদিপশু বিক্রয় কার্যক্রম চলবে। এক্ষেত্রে অনলাইনে প্রতারণা রোধে অনলাইনে আপলোড করা পশুর মালিকের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, পশুর বয়স, ওজন, মূল্য ও ছবি সংযোজন করতে হবে। মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাবস পরুন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। মনে রাখবেন পশু কুরবানি নিজের জন্য, কিন্তু মাংস গরিব মানুষ, আত্মীয় স্বজনের চাওয়া। এ থেকে এদের বঞ্চিত করা অনুচিত।
> পশুর যেসব দোষ থাকলে কুরবানি হবে না
কুরবানির পশু দোষত্রুটিমুক্ত হতে হবে। পশুর মধ্যে কিছু ত্রুটি থাকলে কুরবানি দেওয়া যাবে না। সেগুলো হচ্ছে-১. দৃষ্টিশক্তি না থাকা। ২. শ্রবণশক্তি না থাকা। ৩. অত্যন্ত দুর্বল ও জীর্ণ-শীর্ণ হওয়া। ৪. এই পরিমাণ ল্যাংড়া যে, জবাই করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে অক্ষম। ৫. লেজের বেশিরভাগ অংশ কাটা। ৬. জন্মগতভাবে কান না থাকা। ৭. কানের বেশিরভাগ কাটা। ৮. গোড়াসহ শিং উপড়ে যাওয়া। ৯. পাগল হওয়ার কারণে ঘাস-পানি ঠিকমতো না খাওয়া। ১০. বেশিরভাগ দাঁত না থাকা। ১১. রোগের কারণে স্তনের দুধ শুকিয়ে যাওয়া। ১২. ছাগলের দুটি দুধের যেকোনো একটি কাটা। ১৩. গরু বা মহিষের চারটি দুধের যেকোনো দুটি কাটা। অর্থাৎ কুরবানির পশু বড় ধরনের দোষত্রুটি থেকে মুক্ত হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কুরবানি জায়েজ হবে না-অন্ধ, যেটার অন্ধত্ব স্পষ্ট। রোগাক্রান্ত, যার রোগ স্পষ্ট। পঙ্গু, যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট ও আহত-যার কোনো অঙ্গ ভেঙে গেছে।’ (ইবনে মাজা : ৩১৪৪)
> যেসব দোষ থাকলেও কুরবানি দেওয়া যাবে
পশুতে কিছু ত্রুটি থাকলেও কুরবানি দেওয়ার সুয়োগ রয়েছে। সেগুলো হলো-১. পশু পাগল, তবে ঘাস-পানি ঠিকমতো খায়। ২. লেজ বা কানের কিছু অংশ কাটা, তবে বেশিরভাগ অংশ আছে। ৩. জন্মগতভাবে শিং নেই। ৪. শিং আছে, তবে ভাঙা। ৫. কান আছে, তবে ছোট। ৬. পশুর একটি পা ভাঙা, তবে তিন পা দিয়ে সে চলতে পারে। ৭. পশুর গায়ে চর্মরোগ। ৮. কিছু দাঁত নেই, তবে বেশিরভাগ আছে। স্বভাবগত এক অ-কোষের পশু। ৯. পশু বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাচ্চা জন্মদানে অক্ষম। ১০. পুরুষাঙ্গ কেটে যাওয়ার কারণে সঙ্গমে অক্ষম। তবে উত্তম হচ্ছে ত্রুটিমুক্ত পশু দিয়ে কুরবানি দেওয়া। পশু কেনার সময় এসব বিষয় বিবেচনা করা কর্তব্য।
> গত (১৬ মে বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানায়, এবার কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সর্বোচ্চ সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৭ লাখ ২ হাজার ৩৯৪টি। চাহিদার তুলনায় এ বছর গবাদিপশুর উদ্বৃত্তের সংখ্যা ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৭৩টি।এবার কোরবানিতে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর আরও জানায়, এর মধ্যে গরু-মহিষ রয়েছে ৫৩ লাখ ৬০ হাজার ৭৯৬টি। এ ছাড়া ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ৭৬ লাখ ১৭ হাজার ৮০১টি। আর উটসহ কোরবানিযোগ্য অন্যান্য পশু রয়েছে ১ হাজার ৮৫০টি।
প্রাণিসম্পদ অধিফতর জানায়, গত বছর ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ সারা দেশে জবাই করা গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি।প্রাণিসম্পদমন্ত্রী জানান, আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর কোনো সংকট হবে না এবং কোরবানির পশুর সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনায় সরকারের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি আছে।কোরবানির পশুর জন্য অতীতে পর-মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হত। কিন্তু আমরা এখন দেশে উৎপাদিত পশু দিয়েই কোরবানি সম্পন্ন করতে পারছি।দেশে অবৈধভাবে গবাদিপশুর অনুপ্রবেশ যেন না ঘটতে পারে, সেজন্য সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানান মন্ত্রী।তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আমাদের প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা, খামারি ও উদ্যোক্তারা সম্মিলিতভাবে কাজ করায় প্রাণিসম্পদ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এ খাতে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার আহবান জানিয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, রোগাক্রান্ত পশু হাটে বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হবে। হাটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও কোনো খামারি নিজ বাড়ি থেকে পশু বিক্রি করলে তাকে হাসিল দিতে হবে না। কোনো খামারি তার পশু দূরবর্তী হাটে নিতে চাইলে রাস্তাঘাটে জোর করে নামাতে বাধ্য করা যাবে না।
মন্ত্রী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় সরকারের ইউনিট তথা পৌরসভা, উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন এ বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
“হাটে আনার পথে কেউ প্রাণী বিক্রি করলে তার কাছ থেকে ইজারা গ্রাহক জোর করে চাঁদা বা হাসিল গ্রহণ করতে পারবে না। এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই।”
নগদ টাকা বহন না করে যথাসম্ভব বিকল্প উপায়ে ‘স্মার্ট পদ্ধতিতে’ আর্থিক লেনদেন করার জন্য তিনি খামারিদের পরামর্শ দেন।
গত কয়েক বছরের মত এবারও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সারাদেশে কোরবানির পশু বিক্রির ব্যবস্থা চালু থাকবে। লাভের আশায় কোরবানির অনুপযুক্ত পশু বা রোগাক্রান্ত পশু যাতে কেউ বিক্রির চেষ্টা না করে, সে বিষয়ে সতর্ক করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রতিটি নির্ধারিত কোরবানির পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম থাকবে। কোরবানির পশু নিরাপদ ও কোরবানি উপযোগী কিনা বা তাদের শরীরে ‘দূষিত পদার্থ’ প্রবেশ করানো হয়েছে কিনা তারা সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।
“মহাসড়কে বা যেখানে হাট বসালে যান চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমন কিছু যাতে না হয়, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে। সড়কে বা সেতুতে কোরবানির পশুবাহী গাড়িকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, যাতে রাস্তায় পশু আটকে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না হয়।”
এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (হট লাইন-১৬৩৫৮) চালু থাকবে। পশুর হাটে কোনো রকম সমস্য হলে হটলাইনে কল করলে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।
> পশুহাটে স্বাস্থ্য পরামর্শ :-
হাটে গেলে মাস্ক: হাটে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই মনের অজান্তেই কথাবার্তা বলার সময় নাকের ওপর থেকে মাস্ক সরিয়ে ফেলি। কেউ আবার নাক-মুখ খোলা রেখে থুতনির ওপর মাস্ক পরেন। যথানিয়মে মাস্ক না পরা ভাইরাসকে নিজ দেহে আমন্ত্রণ জানানোর নামান্তর মাত্র।
সঙ্গী হোক স্যানিটাইজার: হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলে কিছুক্ষণ পরপর হাত ধুয়ে নিন। অন্যথায় স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। হাট থেকে বের হওয়ার সময় হাত জীবাণুমুক্ত করুন। বাসায় ঢুকে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশার আগে সাবান মেখে গোসল সেরে ফেলুন।
নিরাপদ দূরত্বে থাকুন: ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা স্বাস্থ্যসম্মত। দীর্ঘ সময় উচ্চ স্বরে দাম-দর না করে অল্প কথায় গরু-ছাগল কেনার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, যত কথা বলবেন ততই ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা বেড়ে যাবে।
গরমে পানির বোতল: এবার প্রচণ্ড গরমের মাঝে হাটে যেতে হবে। দীর্ঘ সময় গরমের মাঝে অবস্থান করলে পানি শূন্যতা হতে পারে। সে জন্য হাটে গেলে বোতলে করে প্রয়োজনীয় নিরাপদ পানি সঙ্গে রাখুন। বিক্রেতা হিসেবে যাঁরা দীর্ঘ সময় হাটে অবস্থান করছেন, তাঁদের অবশ্যই এদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
পায়ের যত্ন নিন: গোবর, চোনা, কাদা একাকার হয়ে প্রায়ই হাট নোংরা হয়ে থাকে। হাটে খালি পায়ে কিংবা স্যান্ডেল পরে হাঁটা অনুচিত। যাঁদের পায়ের ক্ষত রয়েছে কিংবা যাঁরা ডায়াবেটিস রোগী তাঁরা হাটে না যাওয়াই উত্তম। হাটে গিয়ে পা থেঁতলে বা কেটে কাদা, গোবর ইত্যাদি লেগে গেলে অবশ্যই সাবান দিয়ে পা ধুয়ে অ্যান্টিসেপটিক মলম লাগাতে হবে। অবস্থা অনুযায়ী টিটেনাসের ভ্যাকসিন নিতে হবে।
প্রয়োজনে অনলাইন: অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন, যা আপনাকে নানা রোগের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে নিরাপদ রাখবে। মনে রাখতে হবে সচেতনতা হবে আপনার পরিবারের সুরক্ষা।
পরিশেষে বলতে চাই, কুরবানির পশুর হাটে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই, এটাই শেষ কথা। সবার জীবনে আনন্দময় ঈদ আসুক এই প্রত্যাশা।
লেখক, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।
কলাম লেখক ও গবেষক
ইমেইল, [email protected]
আপনার মতামত লিখুন :