AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাত


Ekushey Sangbad
ড. জাহাঙ্গীর আলম
০৭:২৯ পিএম, ১ জুলাই, ২০২৪
প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাত

সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সংসদে নয়া বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি তার প্রথম বাজেট। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার ২১তম বাজেট এটি। বাজেট বরাদ্দের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত কৃষি। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একমাত্র অবলম্বন কৃষি খাত। বর্তমানে দেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১২ শতাংশ। মোট রপ্তানিতে কৃষিজাত পণ্যের শরিকানা প্রায় ৩ শতাংশ। এর সঙ্গে হিমায়িত মত্স্য ও পাটজাত দ্রব্য যোগ করা হলে মোট রপ্তানিতে কৃষির হিস্যা প্রায় ৭ শতাংশ। এখনো দেশের শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ শ্রমিক কৃষি খাতে নিয়োজিত। শিল্প ও সেবা খাতের অগ্রগতি বহুলাংশে নির্ভরশীল কৃষি খাতের অগ্রগতির ওপর। এমতাবস্থায় দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য জাতীয় বাজেটে কৃষি খাত অগ্রাধিকার পাওয়ার দাবি রাখে।

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অনুসারে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের খাদ্য ও পুষ্টি সমস্যার সমাধান করতে হলে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি হতে হবে ৪ থেকে ৫ শতাংশ।  গত ৪ বছর এই খাতে অর্জিত গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল বার্ষিক ৩.২ শতাংশ। এই হার বাড়ানো দরকার। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছে ৬.৫ শতাংশ। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি। গত কয়েক মাস ধরে এ হার ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। গত ১১ মাসে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০.৬৭ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে ৬/৭ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখতে হবে। নতুবা সার্বিক মূল্যস্ফীতির ইস্পিত লক্ষ্য ৬.৫ শতাংশ অর্জন সম্ভব হবে না।

আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য চাল উত্পাদনের প্রবৃদ্ধিতে সম্প্রতি অনেকটা ভাটা পড়েছে। ২০২২-২৩ সালে মোট উত্পাদন ছিল ৩৯০ লাখ মেট্রিক টন। প্রবৃদ্ধির হার ঋণাত্মক ০.৪৫ শতাংশ। অর্থাত্, গত তিন বছরের গড় প্রবৃদ্ধির হার হলো ০.৫২ শতাংশ। এ সময় জনসংখ্যার গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১.৩ শতাংশ। ফলে চালের উত্পাদন বৃদ্ধির হার জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধির হারকে ছাপিয়ে বড় ধরনের উদ্বৃত্ত সৃষ্টি করতে পারেনি। সে কারণে এবং খাদ্যশস্যের আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধির চাপে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম বেড়েছে। তাতে উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি তাড়িত মূল্যস্ফীতি অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কারসাজিও জড়িত আছে। আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য ধান উত্পাদন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো ছাড়া চড়া মূল্যস্ফীতি ঠেকানো খুবই দুষ্কর। এ বছর বাংলাদেশ দীর্ঘ খরা অতিক্রম করেছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাঠের ফসল। এলনিনোর প্রভাবে এবার বিশ্ব জুড়েই বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। ফিলিপিন ও আফ্রিকায় দেখা দিয়েছে তীব্র খরা ও প্রচণ্ড দাবদাহ। বর্তমানে চাল, চিনি, তেল ও গরুর মাংসের দাম এশিয়ার অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি। এসব পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দমিয়ে রাখা খুবই দুরূহ হবে। এ ক্ষেত্রে উত্পাদন বৃদ্ধিই প্রধান শর্ত।

গত প্রায় এক যুগ ধরে জাতীয় বাজেটের আকার দ্রুত বেড়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে মূল বাজেটের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ৪.৮৭ গুণ বেশি। সে তুলনায় কৃষি বাজেট বাড়েনি। এ সময়ে কৃষি বাজেট বেড়েছে ৩.৭৮ গুণ।

আগামী অর্থবছরে কৃষিবিষয়ক পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। এই টাকা মোট বরাদ্দের ৫.৯৪ শতাংশ। এর মধ্যে শস্য কৃষি খাতের জন্য রাখা হয়েছে ২৭ হাজার ২১৪ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩.৪১ শতাংশ। বাকি ২.৪৫ শতাংশ মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ, বন ও পরিবেশ, ভূমি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সমূহের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এটা  অপ্রতুল। ফসল খাতে বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় কম। ভর্তুকি হ্রাস অযৌক্তিক। চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় প্রস্তাবিত নয়া বাজেটে বৃহত্তর কৃষি খাতের বরাদ্দ ৮৬৭০ কোটি টাকা বা ১৫.৪৮ শতাংশ কমে গেছে।

এবার নয়া বাজেটে কৃষি ভর্তুকির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ২৬১ কোটি টাকা, যা গত বছরের মূল বাজেট থেকে ২৭২  কোটি টাকা কম। সংশোধিত বাজেট থেকে তা ৮ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা কম। আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেল ও কৃষিযন্ত্রের দাম বাড়ার কারণে উত্পাদন খরচ বাড়বে। সে ক্ষেত্রে ভর্তুকি হ্রাস অনাকাঙ্ক্ষিত। তাতে বিঘ্নিত হবে কৃষির উত্পাদন। খাদ্যের নিরাপত্তা ব্যাহত হবে। বন, জার্মানি থেকে প্রকাশিত গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২৪ বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথম সারির খাদ্য নিরাপত্তাহীন ১০টি দেশের মধ্যে অষ্টম স্থানে রেখেছে। বিবিএসের তথ্য অনুসারে দেশের প্রায় ২২ শতাংশ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার অভাব আছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক কমোডিটি আউটলুক প্রতিবেদন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সংঘাত ও আবহাওয়ার বৈপরীত্যের কারণে আগামী দিনগুলোতে কৃষির উত্পাদন হ্রাস পাবে। খাদ্যপণ্যের আন্তর্জাতিক মূল্য বাড়বে। তাতে দুর্ভোগ বাড়বে নিম্ন আয়ের মানুষের।

গত জুলাই ২০২২-এর পর ইউরিয়া ও ডিএপি সারের প্রতি কেজি দাম বাড়ানো হয়েছিল ১৬ টাকা থেকে যথাক্রমে ২৭ ও ২১ টাকা। টিএসপি ২২ থেকে ২৭ এবং এমওপি ১৫ থেকে ২০ টাকা। সম্প্রতি রাসায়নিক সারের দাম বিশ্ববাজারে প্রায় ৫২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে সারের উচ্চমূল্য এখনো বহাল রয়েছে। বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে ২০২২ সালের মধ্যভাগ থেকে পরপর দুবার সারের দাম বাড়ানো হয়েছিল অভ্যন্তরীণ বাজারে। এখন বিশ্ববাজারে দাম কমলেও বাংলাদেশে তা ২০২২ সালের প্রথমার্ধে প্রচলিত মূল্যসীমায় প্রত্যাবর্তন করেনি। সেচের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয় সেচযন্ত্রে ব্যবহূত বিদ্যুতের ওপর। ডিজেলে কোনো ভর্তুকি নেই। অথচ দেশে পানি সেচ প্রদানের কাজে নিয়োজিত শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ সেচযন্ত্রই এখনো ডিজেলনির্ভর। কৃষিযন্ত্র কেনার ক্ষেত্রে সরকার ৫০ শতাংশ এবং ক্ষেত্রবিশেষে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে থাকে। বর্তমানে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সেচযন্ত্রের দাম টাকার অঙ্কে অনেক বেড়ে গেছে। চলমান ভর্তুকিতে আগের তুলনায় অনেক বেশি টাকা খরচ করে কৃষিযন্ত্র কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না অনেক কৃষক। এক্ষেত্রে ভর্তুকি বাড়ানো দরকার।

প্রস্তাবিত বাজেটে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালন ব্যয় হ্রাস পেয়েছে, তবে উন্নয়ন ব্যয় বেড়েছে। এ খাতে মোট বরাদ্দ ৬ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা, বেড়েছে ৬২২ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশে খাদ্যগুদামের ধারণক্ষমতা খুবই কম, ২১.৮৬ লাখ মেট্রিক টন। নতুন অর্থবছরে তা ২৯ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য সংরক্ষণক্ষমতা ৩৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্যের উত্পাদন ৪৬৭ লাখ মেট্রিক টন। এর ন্যূনতম ১০ শতাংশ, অর্থাত্ ৪৭ লাখ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন গুদাম শিগিগর নির্মাণ করা প্রয়োজন।

বাজেটে ৩০টি প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উেস কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা কিছুটা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। কর ও শুল্ক হার কমিয়ে অতীতে পণ্যমূল্যের দাম সহনীয় করা সম্ভব হয়নি। কর ও শুল্কহার হ্রাসের কোনো সুবিধা ভোগ করতে পারেনি দেশের দরিদ্র ভোক্তারা।

আমাদের মোট বাজেটের মাত্র ৩৬ শতাংশ ব্যয় হয় উন্নয়ন খাতে। বাকি ৬৪ শতাংশ ব্যয় হয় সরকার পরিচালন খাতে। ভবিষ্যতে পরিচালন ব্যয় কমিয়ে উন্নয়ন ব্যয় বাড়াতে হবে। তাতে বরাদ্দকৃত খরচের আর্থিক প্রতিদান বাড়বে। নিশ্চিত হবে জনকল্যাণ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকার প্রথম চার বছর মোট বাজেট বরাদ্দের অর্ধেকেরও বেশি বরাদ্দ নিশ্চিত করেছিল উন্নয়ন খাতে। এরপর ক্রমাগতভাবে সেই হিস্যা হ্রাস পেয়েছে। ভবিষ্যতে তা বাড়ানো দরকার। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের জন্য প্রণীত বাজেটে কৃষি উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ছিল মোট উন্নয়ন বরাদ্দের ২০ শতাংশ অর্থ। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৭ শতাংশে। এই হার বাড়াতে হবে।

আমাদের রপ্তানি পণ্য পাট, চামড়া ও শাকসবজি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ হ্রাস পাচ্ছে। এর প্রতিকার দরকার। এর কারণসমূহ চিহ্নিত করে সমস্যা দূরীকরণের সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিশন গঠন করা খুবই প্রয়োজন। গত এক দশক ধরে কৃষিঋণের পরিমাণ বেড়েছে গড়ে প্রায় ৮ শতাংশ হারে। কিন্তু তাতে প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের অন্তর্ভুক্তি  বাড়েনি। এখনো প্রায় ৪০ শতাংশ কৃষক প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের আওতাবহির্ভূত। এদের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। কৃষিবিমা চালু করা প্রয়োজন। দুর্যোগ মোকাবিলা তহবিল গঠন করা প্রয়োজন কৃষি খাতের জন্য।

কৃষির বিভিন্ন উপখাতে ক্রমাগতই উত্পাদন বাড়ছে। কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন এবং সবার জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে এবং তা টেকসই করতে হলে এই প্রবৃদ্ধির হার আরো গতিশীল করা দরকার। সে কারণে কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার।

 

একুশে সংবাদ/ই.ফ.প্র/জাহা

Link copied!