AB Bank
ঢাকা শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বন্যার্তদের পাশে থাকা ও জানমাল রক্ষায় আমাদের করণীয়


Ekushey Sangbad
বেলায়েত হোসেন, ঢাকা
০৮:২৬ পিএম, ২৩ আগস্ট, ২০২৪
বন্যার্তদের পাশে থাকা ও জানমাল রক্ষায় আমাদের করণীয়

ভয়াবহ বন্যার কবলে ফেনী, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কমলগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, সাজেকসহ দেশের সঅনেক অঞ্চল। এইসব জায়গায় বন্যার পরিস্থিতি খুবই খারাপ! মহাবিপর্যয়ে পড়েছে গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, কৃষি ক্ষেত খামার ও মৎস্য খামার। মানুষের জীবন জীবিকাও চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।

কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ দেশের অনেক জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি চরম দুর্যোগ ঘটিয়েছে। কমলগঞ্জ মৌলভীবাজারে অসময়ে বন্যার কারণে গ্রীষ্মকালীন লাখ লাখ জোড় কলমকৃত টমেটোর চারার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে কমলগঞ্জে দেশের বৃহত্তম জোড় কলমকৃত গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চারা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয়।

এদিকে ত্রিপুরায় আরও দুইদিন ভারী বৃষ্টি হবে, আগামীতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা! ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী এবং হালদা নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ফেনী ও কুমিল্লার ২৪ ঘণ্টায় বন্যার পরিস্থিতি উন্নতির সম্ভাবনা নেই। বরং দিন দিন তা আরও খারাপের দিকে যাবে। কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের মানুষদের বন্যার দুর্যোগ কার্যত আরও বৃদ্ধি পাবে। ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর।

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে দিশেহারা পানিবন্দি দুই লাখের বেশি মানুষ। মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে বন্যায় ৭০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। লাগাতার বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে নোয়াখালীর নয়টি উপজেলার ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ সব সড়ক, ফসলের মাঠ ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। বর্তমানে উজান থেকে তীব্র বেগে ঢুকছে পানি, গোমতির নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বিপৎসীমার ১৯৫ সেন্টিমিটার উপরে খোয়াই নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের উজান ঢল ও টানা বৃষ্টিতে ফেনীর কয়েকশ গ্রাম প্লাবিত। ভয়াবহ বন্যায় ডুবে গেছে ঘরবাড়ি। বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় লোকজন। গলা পানিতে ডুবে গেছে ফেনীর রাস্তাঘাট। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে গোটা ফেনীর সাথে। কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী, হুশিয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭টি অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এইসব অংশে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হচ্ছে শতাধিক গ্রাম। ফেনীর আঞ্চলিক সড়ক ও উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল।

বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। মোবাইলের চার্জও শেষ পর্যায়ে। এই অবস্থায় কারও সাথে যোগাযোগ করার কোনো উপায় নেই। ঘরে কোমর সমান পানি, কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। ইতিমধ্যে ঘরবাড়ি, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে শিশু ও নারীসহ সাধারণ জনগণ।

দুইদিনের টানা বৃষ্টি এবং ভারতের ঢলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী মৌলভীবাজার জেলার চারটি নদনদীতে বেড়েছে পানি। কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও জুরি নদীর পানির বাড়তি চাপ দেখা যায়। মৌলভীবাজারে বিপৎসীমার উপরে তিন নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আর পার্বত্য অঞ্চলে সড়ক ডুবে যাওয়ায় সাজেকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। আড়াই শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছে।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টিতে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যা সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে ফেনীতে। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি এবং কক্সবাজার জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। এসব জেলাগুলোতে বন্যায় এখন পর্যন্ত (শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত) ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

এতে জানানো হয়, বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টি (ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মী পুর ও কক্সবাজার)। উপজেলা  ৭৭ উপজেলা বন্যা প্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন/পৌরসভা ৫৮৯টি। ১১ জেলায় মোট ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৯ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯ জন, মারা গেছেন ১৫ জন‌। পুরুষ ১৩ জন, নারী ২ জন। মারা যাওয়ার মধ্যে কুমিল্লায় ৪, ফেনীতে ১, চট্টগ্রামে ৪, নোয়াখালীতে ১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১ এবং কক্সবাজারে ৩ জন রয়েছেন।

নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর দেশের জনগণের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। ২১ আগস্ট ২০২৪ বন্যার্তদের সাহায্যার্থে সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করছে। বর্তমানে সৃষ্ট বন্যার কারণে যে সংকট ও দুর্যোগ দেখা দিয়েছে, তার গুরুত্ব অনুধাবন করে আরও জরুরি কর্মসূচি হাতে নেবে বলে আমরা আশা রাখি। অতি দ্রুত বন্যাকবলিত এলাকায় জনগণকে সম্পৃক্ত করে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র নিশ্চিত করা এবং সার্বিক মানবিক সাহায্য সহযোগিতার এবং পুনর্বাসনের জন্য বিনীত নিবেদন রাখছি।

বন্যার ক্ষতি থেকে জানমাল রক্ষায় যা করণীয়:

১. নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র বা উঁচু কোনো স্থানে দ্রুত চলে যেতে হবে। বন্যা আসার আগেই বাড়ির ভিটা, নলকূপ, টয়লেট যতদূর সম্ভব উঁচু করতে হবে।

২. নিরাপদ স্থানে যাওয়ার পূর্বে বাসা বাড়ির গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে হবে। খাদ্যশস্য ও বীজ নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।

৩. গৃহপালিত পশুপাখি নিরাপদ স্থানে নিতে হবে। শুকনো খাবার মুড়ি, চিড়া, গুড়, চিনি সংরক্ষণ করতে হবে। বিশুদ্ধ খাবার পানি সংরক্ষণ করতে হবে।

৪. চুলা ও রান্নার জন্য শুকনা জ্বালানি সংরক্ষণ করতে হবে। বৃদ্ধ, শিশু, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও গর্ভবতী নারীদের ওপর বিশেষ নজর রাখতে হবে।

৫. শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে। টাকা পয়সা, জমির দলিল, শিক্ষা সনদ, নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। দূষিত পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৬. পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বা ফিটকিরি ব্যবহার করে পানি পান করতে হবে। বন্যার পানিতে গোসল করা, জামা কাপড় ধোয়া যাবে না।

৭. বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে এবং জীবাণুনাশক ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিতে হবে। ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করুন। পয়ঃনিষ্কাশন লাইন মেইন্টেনেন্স করুন।

৮. বিত্তবানদের উচিত বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। বিপদে সবার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

 

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

সর্বোচ্চ পঠিত - মতামত

Link copied!