AB Bank
ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বন্যার পানি কমলেও বেড়েছে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব, প্রতিরোধে প্রয়োজন সতর্কতা


Ekushey Sangbad
ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
০৫:০৮ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
বন্যার পানি কমলেও বেড়েছে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব, প্রতিরোধে প্রয়োজন সতর্কতা

বন্যা হলো প্রাকৃতিক এবং মানব সৃষ্ট কারণের সংমিশ্রণে সঙ্ঘটিত এক দুর্যোগ। হজরত নূহ আ:-এর সময়কাল থেকে আজ পর্যন্ত যত বন্যার প্রাদুর্ভাব হয়েছে তার অধিকাংশই মূলত এই নিয়মেই ঘটেছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, প্রকৃতিতে যত বিপর্যয়ই ঘটুক না কেন তার প্রত্যেকটিরই দুটি রূপ। তার একটি হলো সৃষ্টি, অপরটি হলো ধ্বংস।

বন্যার পানি কমতে শুরু করায় বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। বানভাসি মানুষের ঘুরে দাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে।কোনো কোনো এলাকায় এখনও পানিবন্দি রয়েছে অনেক মানুষ। টিউবওয়েলগুলো ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে ডায়রিয়া ও চর্মরোগসহ বাড়ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। 

দেশের ১৩ জেলায় সৃষ্ট স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় শিশুসহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭ জনে দাঁড়িয়েছে। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।বন্যা পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,  দেশের ১৩টি জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব জেলা হলো ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙ্গামাটি ও সিলেট।১৩ জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কক্সবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। ইতোমধ্যে মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এছাড়াও সময়ের সঙ্গে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বর্তমানে ৬৮টি উপজেলা বন্যা প্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন/পৌরসভার সংখ্যা ৫০৪টি। পাশাপাশি ৬ লাখ ৫ হাজার ৭৬৭টি পরিবার এখনো পানিবন্দি রয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫১ লাখ ৮ হাজার ২০২ জন।

এদিকে স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় শিশুসহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতদের মধ্যে ১৮ জন শিশু ছাড়াও ৪২ জন পুরুষ ও সাতজন নারী রয়েছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ফেনীতে। দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের এই জেলায় বন্যায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে কুমিল্লায় বন্যায় ১৭ জন মারা গেছেন। পাশাপাশি নোয়াখালীতে ১১ জন, চট্টগ্রামে ৬ জন ও কক্সবাজারে বন্যায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর ও মৌলভীবাজারে বন্যায় একজন করে মোট ৪ জন মারা গেছেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত ৩ হাজার ৬১৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন ৩ লাখ ৬ হাজার ৭৪১ জন। পাশাপাশি বন্যাকবলিত ১১ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে ৪৭২টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। অন্যদিকে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে এখন পর্যন্ত ৩২ হাজার ৮৩০টি গবাদি পশুকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হয়েছে।তবে বন্যাদুর্গত জেলাগুলোতে যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে।

পানি কমতে শুরু করায় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট। নিচু এলাকায় এখনও পানিবন্দি রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। তাদের ঘরবাড়ি কোমরসমান পানির নিচে। প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ শহরের অনেক এলাকায়ও ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ছে বন্যার পানিতে। এতে দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই।

> ডায়রিয়া : বন্যার দূষিত পানি খাবার পানির উৎসগুলোকে দূষিত ও সংক্রমিত করে। এতে স্যানিটারি টয়লেটগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ হতে পারে। পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে খাওয়ার স্যালাইন বা ওআরএস দিতে হয়। স্যালাইন বানানোর জন্য অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে।

> কলেরা : এই সময় পানিবাহিক রোগ কলেরা হতে পারে। এ রোগটি দূষিত পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে ছড়ায়। কলেরায় আক্রান্ত হলে ডায়রিয়া ও বমি হয়। এ ছাড়া জীবাণু ও দূষিত পানি খাবারের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে টাইফয়েড হতে পারে। টাইফয়েড জ্বরে দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, মাথাব্যথা ও পেটে ব্যথা হয়। পানিবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে বিশুদ্ধ পানি পান এবং সচেতনতা অবলম্বন করুন।

> ঠান্ডা-জ্বর : বৃষ্টির পানিতে ঠা-া লেগে অনেক সময় সর্দি-কাশি ও জ্বর হয়ে থাকে। বন্যার পানির ভেজা ও ঠা-া আবহাওয়া থেকে শ্বাসকষ্ট ও শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ঠা-ার উপসর্গ থেকে দূরে থাকুন।

>চর্মরোগ ও ফাঙ্গাসের সংক্রমণ : বন্যার দূষিত পানি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ সময় ত্বকে খোসপাঁচড়াসহ নানা ধরনের অসুখ হয়। এ ছাড়া বন্যার সময় আবহাওয়া আর্দ্র হয়ে যায়। স্যাঁতসেঁতে ও ভেজা আবহাওয়ায় ফাঙ্গাসের বংশবিস্তার ঘটে। চর্মরোগের ক্ষেত্রে মেডিক্যাল টিম বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

> মশার উপদ্রব : বন্যার পর পানি জমে থাকা জায়গাগুলোতে মশার বংশবৃদ্ধি হয়, যা ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটাতে পারে। মশার জন্মস্থান ধ্বংস করতে জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলতে হবে।

> সাপের কামড় : বন্যার পানি সাপের গর্তে ঢুকে যাওয়ার ফলে সাপ শুকনো জায়গার সন্ধানে মানুষের কাছাকাছি চলে আসে, তাই বন্যার পর লোকালয়ে সাপের চলাচল বেড়ে যায়।বাসস্থানের চারদিকে কার্বলিক এসিড রেখে দিলে সাপের উপদ্রব হ্রাস পায়। 

 তা ছাড়া বন্যপ্রাণী, ইঁদুর ইত্যাদির জন্য বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। তাই এসব ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন ও নিরাপদে থাকা প্রয়োজন। পানিবন্দি মানুষরা চাইলেও সব রকম নিয়মকানুন মেনে চলতে পারে না। তাই যে কোনো অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে। অথবা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

>মানসিক সমস্যা: বন্যায় মানুষের শারীরিক সমস্যাগুলোকে আমরা যেমন গুরুত্ব দিই, মানসিক সমস্যাগুলোকে তেমনি অবহেলা করি বা ভুলে যাই। কিন্তু সহায় সম্পত্তি হারিয়ে বেশির ভাগ মানুষই বন্যা ও বন্যাপরবর্তী সময়ে মন খারাপ, দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, অনিদ্রা, মানসিক বিপর্যয়ে ভোগেন। পরবর্তীকালে একটু বৃষ্টি হলেই অস্থির হয়ে যেতে দেখা যায়।

>অপুষ্টি: বন্যা ও পরবর্তী সময়ে দুর্গত এলাকায় খাবারের অপ্রতুলতা, ফসলের মাঠের ক্ষতি, গবাদিপশু ও পুকুরের মাছে ভেসে যাওয়ায় খাদ্যসংকট দেখা দেয়। ফলস্বরূপ মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে।

 সুতরাং, এ বিষয়ে অধিক সচেতনতা জরুরি।

 বন্যার কারণে সৃষ্ট রোগের অধিকাংশ হয়ে থাকে পানি ও খাবার থেকে। এ সময় পানি পানে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। সম্ভব হলে আধাঘণ্টা ফুটিয়ে পান করতে হবে, ফুটানো সম্ভব না হলে ১০ লিটার পানিতে দুটি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট আধা ঘণ্টা মিশিয়ে রাখলেই ওই পানি পানের উপযোগী হবে। বন্যার সময় স্থানীয়দের শরীরে চর্মরোগ দেখা দেয়। এ সময় যতটা সম্ভব শরীর শুকনো রাখতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে। এসব রোগ প্রতিরোধে সুপেয় পানি নিশ্চিত করার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বন্যাউপদ্রুত এলাকার টিউবওয়েলগুলোকে জীবাণুমুক্ত করা এবং সবার জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা জরুরি। আমরা প্রত্যাশা করি, বন্যাপরবর্তী রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টরা কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন।

 

লেখক: চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক 

প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি। 

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!