AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

গৌরব ঐতিহ্য সংগ্রাম ও সাফল্যের ৬২ তম মহান শিক্ষা দিবস ২০২৪


Ekushey Sangbad
ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
০২:০৬ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
গৌরব ঐতিহ্য সংগ্রাম ও সাফল্যের ৬২ তম মহান শিক্ষা দিবস ২০২৪

আজ মঙ্গলবার   মহান শিক্ষা দিবস ২০২৪। যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাদেশে আজ এ দিবসটি পালিত হতে যাচ্ছে। পাকিস্তান সরকারের গণবিরোধী, শিক্ষা সংকোচনমূলক শিক্ষানীতি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এবং একটি গণমুখী শিক্ষানীতি প্রবর্তনের দাবিতে ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণআন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত দিন এই শিক্ষা দিবস। শিক্ষার জন্য সংগ্রাম, ত্যাগ, বিজয়, গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক এই শিক্ষা দিবসের এবার ৬২ তম বার্ষিকী।

আজ থেকে ৬২ বছর আগে এই দিনে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক শাসক আইয়ুব খানের চাপিয়ে দেওয়া ‍‍`শরীফ কমিশনে‍‍`র শিক্ষানীতি প্রতিহত করতে গড়ে উঠেছিল ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন। ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন ‍‍`অল-পার্টি স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটি‍‍` দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচির ডাক দেয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা লেলিয়ে দেয় পুলিশ বাহিনী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট মোড়ে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে মোস্তফা, বাবুল, ওয়াজীউল্লাহ প্রমুখ শহীদ হন। সেই থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ছাত্র সংগঠন প্রতিবছর দিনটিকে ‍‍`মহান শিক্ষা দিবস‍‍` হিসেবে পালন করে আসছে।সবাই জানি, যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। শিক্ষা ছাড়া উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণ কল্পনামাত্র। তাই একটি জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে তার শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিলেই হয়।

আগে দেখা গেছে, অনেক বড় বড় যুদ্ধে বিজয়ী শক্তি পরাজিত জাতির লাইব্রেরি ধ্বংস করে দিয়েছে যেন সে জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অবগত না হতে পারে।সেদিন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান গঠিত শিক্ষা কমিশনের শিক্ষানীতির প্রতিবাদে ছাত্রদের আহুত হরতালে পুলিশের দফায় দফায় লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের মাত্র ২ মাস পরেই  (৩০ ডিসেম্বর, ১৯৫৮) এই শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। ‘শরীফ কমিশন’ নামে খ্যাত এসএম শরীফের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিশন ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। এতে শিক্ষা বিষয়ে যেসব প্রস্তাবনা ছিল তা ছিল প্রকারান্তরে শিক্ষা সংকোচনের পক্ষে।

প্রস্তাবিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল- সস্তায় শিক্ষা করা যায় বলে যে ভুল ধারণা রয়েছে তা ত্যাগ করতে হবে। এতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ছাত্র বেতন বর্ধিত করার প্রস্তাব ছিল। ২৭ অধ্যায়ে বিভক্ত শরীফ কমিশনের ওই প্রতিবেদনে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চতর স্তর পর্যন্ত সাধারণ, পেশামূলক শিক্ষা, শিক্ষক প্রসঙ্গ, শিক্ষার মাধ্যম, পাঠ্যপুস্তক, হরফ সমস্যা, প্রশাসন, অর্থবরাদ্দ, শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিষয়ে বিস্তারিত সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। আইয়ুব সরকার এই রিপোর্টের সুপারিশ গ্রহণ এবং তা ১৯৬২ সাল থেকে বাস্তবায়ন করতে শুরু করে।

এই কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসনের পরিবর্তে পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ছাত্র-শিক্ষকদের কার্যকলাপের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখার প্রস্তাব করে। শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রম করাতে ১৫ ঘণ্টা কাজের বিধান রাখা হয়েছিল।রিপোর্টে বর্ণমালা সংস্কারেরও প্রস্তাব ছিল। ছাত্ররা আইয়ুবের এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।সমাবেশ শেষে মিছিল বের হয়। এক পর্যায়ে মিছিলে পুলিশ পেছন থেকে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও গুলি বর্ষণ করে।

সরকারি হিসাবে একজন নিহত, ৭৩ জন আহত এবং ৫৯ জনকে গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়। তবে আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল- ৩ জন নিহত হয়েছেন। সেদিন সারাদেশেই মিছিলের ওপর পুলিশ হামলা চালায়।

শিক্ষা বলতে সেই শৃঙ্খলাকে বোঝায় যা স্কুল বা স্কুলের মতো পরিবেশে শিক্ষাদান এবং শেখার পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত। শিক্ষা হল পদ্ধতিগত নির্দেশনা গ্রহণ বা প্রদানের প্রক্রিয়া, বিশেষ করে একটি স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষা হল শিক্ষাদান, প্রশিক্ষণ এবং শেখার একটি প্রক্রিয়া, বিশেষ করে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানের উন্নতি এবং দক্ষতা বিকাশের জন্য প্রদান করা হয়। শিক্ষা প্রধানত তিন প্রকার, যথা, আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক এবং অপ্রথাগত বা উপানুষ্ঠানিক।আর সবাই জানি, যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। শিক্ষা ছাড়া উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণ কল্পনামাত্র। তাই একটি জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে তার শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিলেই হয়।

আগে দেখা গেছে, অনেক বড় বড় যুদ্ধে বিজয়ী শক্তি পরাজিত জাতির লাইব্রেরি ধ্বংস করে দিয়েছে যেন সে জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অবগত না হতে পারে। আর স্বাধীন বাংলাদেশের লক্ষ্য, একটি দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল স্বাধীন ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করে গড়ে তোলার লক্ষ্য ও সুনির্দিষ্ট করণীয় এরই মধ্যে নির্ধারিত হয়েছে। আর আমাদের স্মরণে রাখা উচিত- সেদিন বাবুল, গোলাম মোস্তফাদের রক্ত রাজপথে শুকিয়ে যায়নি, সঞ্চালিত হয়েছিল জাতির ধমনিতে, মস্তিষ্কের শিরা-উপশিরায়। আর ওই রক্তের স্রোত গিয়ে মিশেছিল আরেক রক্তগঙ্গায়। অবশেষে গিয়ে মিলিত হয় স্বাধীনতার মোহনায়।

তাই দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সার্বজনীন মতামতের ভিত্তিতে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা, যেখানে শিক্ষা হবে সবার জন্য অবাধ। ‘শিক্ষা কোনো পণ্য নয়, শিক্ষা সবার অধিকার’ এটি সর্বস্তরে প্রতিফলিত হোক মহান শিক্ষা দিবসে।

তাৎপর্যপূর্ণ মহান শিক্ষা দিবসের ইতিহাস মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিনটি পালনের উদ্যোগ নেয়া উচিত। শিক্ষা দিবসের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে গ্রাম ও শহরের মাঝে শিক্ষা বৈষম্য দূর করতে হবে।

> বাংলাদেশের মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা।
প্রাথমিক  বিদ্যালয়(সরকারী+বেসরকারী)-৮২,৯৮১ টি।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়- ৫৩,৫৮৯ টি।
নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়- ৩,৪৯৪ টি।
মাদ্রাসা- ৯,০৫১ টি।কওমী মাদ্রাসা -১৯১৯৯টি।
মহাবিদ্যালয়- ২,৩০০ টি।
মেডিক্যাল কলেজ (সরকারি)-২২ টি। > আর্মসফোর্স মেডিক্যাল কলেজ- ১ টি।
ডেন্টাল কলেজ (সরকারি)-০৩ টি।
ডেন্টাল ইউনিট- ৯ টি।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়(জতীয়+উন্মুক্ত)- ৩৪ টি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়- ৭১ টি। 
> বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ- ৫৩ টি।হোমিও মেডিক্যাল কলেজ -৬৩ টি।
> দেশের মোট জনসংখ্যা  ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। যেখানে নারী ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার এবং পুরুষ ৮ কোটি ৪২ লাখ জন।বাকিরা তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী। মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ গ্রামে এবং ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ শহরে বাস করেন।প্রতিবেদনে সাক্ষরতার হারের হিসাবে বলা হয়, দেশের নারী-পুরুষ মিলে মোট সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। গত  ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এ হার ছিল ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সেই হিসাবে এক বছরে দেশে সাক্ষরতার হার বেড়েছে ১ দশমিক ৪২ শতাংশ যার মধ্যে অঞ্চলভেদে গ্রামাঞ্চলে ৭১ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ৮১ দশমিক ২৮ শতাংশ।অন্যদিকে নারী-পুরুষ লিঙ্গভিত্তিক বিবেচনায় পুরুষের সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, নারী শিক্ষার হার ৭২ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং তৃতীয় লিঙ্গের সাক্ষরতার হার ৫৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০১১ সালে নারী-পুরুষ মিলে সাক্ষরতার হার ছিল ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

পরিশেষে বলতে চাই, মহান শিক্ষা দিবসের মাস সেপ্টেম্বরে আমাদের শপথ" শহিদদের স্বপ্নসাধ আমরা বৃথা যেতে দেব না। শিক্ষাকে আমরা পণ্য হতে দেব না। সবার জন্য শিক্ষা অবারিত থাকবে। উন্মুক্ত থাকবে সব বয়সের, সব গোত্রের, সর্বজনের জন্য। শিক্ষা এলিট ক্লাসের মধ্যে সীমিত রাখা হবে না। সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে শিক্ষার আলো।শিক্ষার আন্দোলনে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। শিক্ষা দিবস অমর হোক। লক্ষ্য অর্জনে আমাদের যেতে হবে বহুদূর।দিবসটি উপলক্ষে আজ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক দল নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

 

একুশে সংবাদ/ এস কে

 


 

 

 

 

 

Link copied!