AB Bank
ঢাকা শনিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী
বিশ্ব শিক্ষক দিবস

শিক্ষকদের সর্বক্ষেত্রে মর্যাদা-মূল্যায়ন জরুরি


শিক্ষকদের সর্বক্ষেত্রে মর্যাদা-মূল্যায়ন জরুরি

আজ ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। পৃথিবীর সকল দেশের শিক্ষক সমাজের নিকট এ দিনটি অত্যন্ত গৌরব ও সম্মানের। শিক্ষকদের আদর্শগত মহান কর্মকাণ্ডের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং তাদের পেশাগত অবদানকে স্মরণে-বরণে শ্রদ্ধায় পালন করার জন্য সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন তারিখে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। 

শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘বিশ্ব শিক্ষক’ দিবস পালিত হয়।

জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেসকোর উদ্যোগে ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর এই দিবসটি উদযাপিত হয়। বিশ্বের শিক্ষকদের অবদান স্বীকার, তাদের মূল্যায়ন, এগিয়ে নেওয়াসহ শিক্ষক ও শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় চিহ্নিত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ইউনেসকো দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেয়। 

শিক্ষকতা হচ্ছে সম্মানজনক একটি মহান পেশা এবং পৃথিবীর সকল পেশার সেরা পেশা। শিক্ষকরা হচ্ছেন সভ্যতার ধারক-বাহক। শিক্ষক শুধু শিক্ষাদানই করেন না, তিনি মানুষ গড়ার কারিগরও। পিতা-মাতা আমাদের জীবনদান করেন ঠিকই। শিক্ষকরা সেই জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। শিক্ষকরা স্বমহিমায় বিশুদ্ধ জ্ঞান, মানবিক আর নৈতিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত এবং দিক্ষীত করে গড়ে তুলেন দেশের যোগ্য নাগরিক। শিক্ষা যেহেতেু জাতির মেরুদন্ড শিক্ষকরা হচ্ছেন এই মেরুদন্ড গড়ার কারিগর। এ সমাজের মধ্যে নৈতিক বিচারে শিক্ষকদের চেয়ে সম্মানিত এবং শিক্ষকতার চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পেশা দ্বিতীয়টি নেই। একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, পৃথিবীতে যতগুলো সম্মানজনক পেশা আছে এসব পেশার মধ্যে শিক্ষকতা সর্বোচ্চ সম্মানিত পেশা। একজন শিক্ষক সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কাছে অত্যন্ত মর্যাদা ও সম্মানের পাত্র। 

উন্নত বিশ্বে শিক্ষকতা পেশাকে শ্রেষ্ঠ পেশা হিসেবে গণ্য করা হয়। ন্যায়-বিচার, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং একটি আদর্শ জাতি গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষা আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের হাতিয়ার। শিক্ষকরা হলেন তার সুনিপুণ কারিগর। শিক্ষা ছাড়া আলোকিত মানুষ সৃষ্টি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। শিক্ষক শুধু শিক্ষাদানই করেন না, তিনি মানুষ গড়ার কারিগরও। শিক্ষক ও মা-বাবার অবদান অস্বীকার করে, এমন একজনকেও পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। মা-বাবা যেমন সন্তানদের ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা দিয়ে বড় করেন, ঠিক তেমনি শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার আলো দিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ে দেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করে যান। স্নেহ, মমতা, ভলোবাসা তো বটেই। তাদের শিক্ষার আলো যেমন শিক্ষার্থীদের সামনের পথ চলাকে সুদৃঢ় করে, তেমনি তাদের স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা তাদের অনুপ্রাাণিত করে। 

শিক্ষক সম্পর্কে উইলিয়াম আর্থার ওয়ার্ডের বিশ্লেষণ সত্যিই যথার্থ। তিনি বলেন, একজন সাধারণ শিক্ষক বক্তৃতা করেন, একজন ভালো শিক্ষক বিশ্লেষণ করেন, একজন উত্তম শিক্ষক প্রদর্শন করেন, একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক অনুপ্রাণত করেন। আমেরিকার ইতিহাসবিদ হেনরি এডামস শিক্ষকের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, একজন শিক্ষক সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলেন, কেউ বলতে পারে না তার প্রভাব কোথায় গিয়ে শেষ হয়। 

দার্শনিক বাট্টার্ন্ড রাসেল এ বিষয়ে বলেছেন, শিক্ষক সমাজ হচ্ছেন প্রকৃত সমাজ ও সভ্যতার বিবেক। এ কারণেই শিক্ষকদের বলা হয় সমাজ নির্মাণের স্থপতি। সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী লুনাচারস্কি বলেছিলেন, শিক্ষক হলেন এমন এক ব্যক্তি যিনি নতুন প্রজন্মের কাছে যুগ-যুগান্তরে সঞ্চিত যাবতীয় মূল্যবান সাফল্য হস্তরত করবেন, কিন্তু কুসংস্কার, দোষ ও অশুভকে ওদের হাতে তুলে দেবেন না। 

ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন বলেছেন, সমাজ পরিবতের্নর পূর্বশর্ত মানুষের পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনের অভিভাবকত্ব শিক্ষকদের পেশাগত দায়িত্ব। 

কার্ল জং সুইস মনোবিজ্ঞানী বলেন-ব্রিলিয়ান্ট শিক্ষকদের প্রতি লোকেরা সম্মানের দৃষ্টিতে তাকায়, কিন্তু কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকায় তাদের প্রতি, যারা আমাদের মানবিক অনুভূতিকে স্পর্শ করে। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড আর সেই মেরুদন্ডকে সোজা রাখতে শিক্ষকের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। 

ইসলাম শিক্ষককে উচ্চমর্যাদায় ভূষিত করেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন-তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব শিষ্টাচার শিখো। তাকে সম্মান করো যার থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন কর। (আল মুজামুল আউসাত : ৬১৮৪)। 

মানবজাতির সবচেয়ে বড় শিক্ষক বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ও শিক্ষক হিসেবে গর্ববোধ করতেন। তিনি তাঁর অন্যতম দোয়ায় বলেছেন, হে আল্লাহ! আপনি শিক্ষকদের ক্ষমা করুন, তাদের দীর্ঘ হায়াত দান করুন। শিক্ষকের মান-মর্যাদা অপরিসীম। খলিফা হারুনুর রশীদ একবার তার সন্তানের শিক্ষার খোঁজখবর নিতে শিক্ষকের বাড়ি যান। সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান, তার সন্তান ওই শিক্ষকের পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছে। শিক্ষক তখন নামাজের জন্য অজু করছিলেন। তার সন্তান এবং শিক্ষকের এ অবস্থা দেখে খলিফা পরদিন শিক্ষককে ডেকে পাঠালেন। শিক্ষক তো ভয়ে অস্থির। তাঁর ধারণা হয়েছিল, রাজপুত্রকে দিয়ে পায়ে পানি ঢালানোর কাজ করিয়েছেন। এ অপরাধে নিশ্চয়ই তার কঠিন সাজা হতে পারে। যাই হোক পরদিন ভয়ে ভয়ে দরবারে উপস্থিত হলে খলিফা শিক্ষককে ভর্ৎসনা করে বলেন, তার সন্তানকে শিক্ষকের কাছে পাঠানো হয়েছে সঠিক আদব শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়ার জন্য। কেন তার সন্তানকে এক হাতে পানি ঢেলে অন্য হাতে পা ধুয়ে দেওয়ার জন্য আদেশ করা হলো না। (তালিমুল মুতাআল্লিম, পৃষ্ঠা ২২)।

শিক্ষকরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। তারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত। তাদের হাত ধরেই মূলত শিক্ষার্থীরা জ্ঞানের মহাসাগর পাড়ি দেয়। শিক্ষকরা প্রদীপের মত নিজেকে জ্বালিয়ে অন্যকে আলো দান করেন, অর্থাৎ শিক্ষক অমর, তিনি বেঁচে থাকেন ছাত্রের আদর্শের মাধ্যমে শিক্ষকরা শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষা দেন তা কিন্তু নয়। তারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেন। 

একজন আদর্শ শিক্ষকের কিছু কাজ ও দায়বদ্ধতা আছে। এ কাজ ও দায়বদ্ধতা সহকর্মীদের কাছে, সমাজের কাছে, দেশ ও জাতির কাছে, আগামি প্রজন্মের কাছে। একজন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। প্রত্যেক শিক্ষকের উচিত শিক্ষার্থীর শিক্ষার প্রতি অনুরাগ জাগ্রত করা। শিক্ষার্থীদের অন্ধকার হতে আলোর পথে নিয়ে যাওয়া এবং বাস্তব ও সত্য অনুসন্ধানে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা। শিক্ষক শুধু সফল নয়, একজন ভালো মানুষ হতে শেখান। 

প্রত্যেক শিক্ষকের উদ্দেশ্য থাকা উচিৎ আদর্শ শিক্ষা। শিক্ষককে হতে হয় নৈতিক আদর্শে উজ্জ্বল। যিনি শিক্ষার্থীর হৃদয়ে জ্ঞান তৃষ্ণা জাগিয়ে মনের সুকুমার বৃৃত্তিগুলোর পরিচর্চা করে শিক্ষার্থীকে আদর্শ মানুষে পরিণত করেন। 

আমাদের দেশে আদর্শ শিক্ষকের বড় অভাব। সততা, নৈতিকতার ঘাটতি সর্বত্রই। শিক্ষার মানোন্নয়নের ঘাটতিও কম নয়। শিক্ষাকে বাণিজ্যে পরিণত করার তৎপরতা লক্ষণীয়। শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি বর্তমান সময়ের অন্যতম দাবি। এটি অর্জনের অন্যতম কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক। প্রত্যেক শিক্ষকের উদ্দেশ্য থাকা উচিত আদর্শ শিক্ষা প্রদান। 

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শিক্ষকতার পেশা উত্তম পেশা হলেও এতোবছর পরেও বাংলাদেশের শিক্ষকদের প্রকৃত মর্যাদা আজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে দক্ষিণ এশিয়ার মাঝে  বাংলাদেশের শিক্ষকরা সবচেয়ে কম বেতন চাকরি করেন। শিক্ষাঙ্গনসহ নানা জায়গায় 

শিক্ষকদের সম্মানহানীর ঘটনাও ঘটছে। আসলে শিক্ষকসহ গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ‍‍`ধর্মীয় মূল্যবোধ‍‍` নামক জিনিসগুলোকে আজ সমাজে অনুপস্থিত। 

মনে রাখতে হবে যে, শিক্ষকরা প্রকৃত মানুষ গড়ার কারিগর। তাঁদের যথাযথ সম্মান দিতে হবে। শুধু সরকারি নয়; ইবতেদায়ি মাদরাসা, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ সর্বস্তরের শিক্ষক সমাজের বেতন বৃদ্ধিসহ নানা সুযোগ সুবিধা আরও বাড়ানো সময়ের দাবি। নানা প্রতিকূলতায় 

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পাশে সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের ঐক্যদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। পরিবেশে বলা যায় সমাজের সাবির্ক উন্নয়ন-অগ্রগতির ক্ষেত্রে শিক্ষা ও শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

লেখক : সাংবাদিক, কলাম লেখক ও প্রিন্সিপাল শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।


একুশে সংবাদ/ এস কে 

সর্বোচ্চ পঠিত - মতামত

Link copied!