‘বাংলা’ বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। গুণীজন বলেন, মাতৃভাষা হলো মনের ভাব প্রকাশ করার সর্বোৎকৃষ্ট বাহন। তাইতো প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের বাণীতে মাহামুদুজ্জামান বাবু গেয়েছেন-
‘আমি বাংলায় গান গাই, আমি বাংলার গান গাই
আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই’।
পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত শিল্পী লোপা মুদ্রা গেয়েছেন-
‘বাংলা আমার সরষে ইলিশ, চিংড়ি, কচি লাউ বাংলা পারসে মাছকে ধুয়ে জিরের বাটায় দাও।
বাংলা আমার বুকের ভেতর বাংলা ভুলি কেমনে!’
আবার কবি আবদুল হাকিম লিখেছেন-
‘যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি’
তাইতো অমিত্রাক্ষর ছন্দের স্রষ্টা মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার ‘বঙ্গ ভাষা’ কবিতায় লিখেছেন-
‘হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন
তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচড়ি।’
এগুলো কবিদের শুধু আবেগতাড়িত স্তুতিবাক্য নয়, এ সবই আপামর বাংলার জনগণের মনের কথা। বাংলা ভাষা নিয়ে আমরা গর্বিত। কারণ এ ভাষার মান রাখতে গিয়েই সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’। এ ভাষা সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বৈজ্ঞানিক ভাষা যার মধ্যে নেই কোনো গড়মিল, নেই কোনো অনিয়মের বেড়াজাল। তাবতো এ ভাষায় গবেষণা করতে গিয়ে এর শত সহস্র শব্দ-সম্ভারের মধ্যে বেরিয়ে এসেছে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ‘পাঁচ’। যার বহুল ব্যবহার ও শ্রুতির সাথে পরিচিত আমরা প্রায় সবাই। এবার পড়ুন তাহলে বাংলা ভাষায় এ ‘পাঁচ’ শব্দটির নানাবিধ ব্যবহারের সাতকাহন।
১. নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত
২. প্রত্যেকের হাতে ও পায়ে পাঁচটি করে আঙ্গুল থাকে
৩. ছাত্র-ছাত্রীরা জিপিএ পাঁচ পেতে চায়।
৪. বিলাসবহুল হোটেল পাঁচ তারা
৫. সাধারণ মানুষ খিলি পান খায় পাঁচ টাকায়
৬. বাঙালি সমাজের খাবারের তালিকায় পাঁচ মিশালি শাকের বেশ কদর
৭. পরীক্ষায় ছাত্রটি পঞ্চম স্থান (মেধা অনুসারে চারজনের পর) অধিকার করল
৮. বাংলাদেশে ‘পাঁচবিবি’ নামে একটি উপজেলা আছে। পাঁচদনা, পাঁচপাইকা, পাঁচরুখি এবং পাঁচকান্দি নামে গ্রামও আছে
৯. বাংলা সাহিত্যে পঞ্চকবি হিসাবে খ্যাত কবিরা হলেন- রবি ঠাকুর, কাজী নজরুল, ডি. এল. রায়, রজনীকান্ত সেন ও অতুল প্রসাদ সেন
১০. ব্রাজিলের সমর্থকরা ব্রাজিলকে সমর্থন করেন, কারণ ব্রাজিল পাঁচবার ফিফা বিশ্বকাপ জিতেছে
১১. পাঞ্জাবকে পঞ্চ নদীর (শতদ্রু, ইরাবতী, বিপাশা, চন্দ্রভাগা, ও বিতস্তা) দেশ বলা হয়
১২, অশত্থ, বিল্ব, বট, অশোক ও আমলকী- এই পাঁচ প্রকার গাছের বনকে পঞ্চবটি বলা হয়
১৩. গ্রামের বিশিষ্ট পাঁচ ব্যক্তির দ্বারা গঠিত বিচার সভাকে পঞ্চায়েত বলা হয়
১৪. জ্যামিতিতে পাঁচটি সরল রেখা দ্বারা বেষ্টিত ক্ষেত্রকে পঞ্চভূজ বলে
১৫. মৃত্যুর মাধ্যমে প্রাণীকূলের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটে অর্থাৎ পঞ্চভূতে (ক্ষিতি/মাটি, অপ/জল, তেজ/তাপ, মরুত/বায়ু ও ব্যোম/আকাশ) বিলীন হয়ে যায়
১৬. ছেলের অপকর্মের জন্য বাবাকে গ্রামের লোকেরা পাঁচকথা (কটু বাক্য) শুনিয়ে দিল
১৭. বাঙালি নারীরা রান্নার কাজে পাঁচ ফোড়ন (জিরা, কালি জিরা, মেথি, মৌরী ও রাঁধুনী সমন্বয়ে গঠিত মসলা) ব্যবহার করেন
১৮. পঞ্চনখ বিশিষ্ট প্রাণী হিসেবে শশক (খরগোস), সজারু, গোসাপ, কূর্ম (কচ্ছপ) ও গণ্ডার প্রসিদ্ধ
১৯. সাত-পাঁচ না ভেবে কোনো কাজ করা উচিত নয়
২০. বাংলা সাহিত্যে পঞ্চাঙ্কবিশিষ্ট নাটকই বেশি
২১. স্বরগ্রামের ‘পা’ নামক স্বরকে বলা হয় পঞ্চম স্বর। এটা স্বরের শেষ ধাপ। আমরা জানি, কোকিল গায় পঞ্চম স্বরে
২২. পঞ্চমী এক প্রকার তিথি যা চন্দ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষ- এ দু পক্ষেই ফিরে ফিরে আসে
২৩. মানুষ অনুভূতির কাজগুলো সম্পন্ন করে তার পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে। আর সেগুলো হলো- চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহবা ও ত্বক
২৪. হিন্দু শাশুড়িরা মেয়ের জামাইকে পঞ্চব্যঞ্জনে আপ্যায়ন করতে ভালোবাসেন।
২৫. হিন্দুদের দুর্গা পূজায় পঞ্চপল্লব প্রয়োজন পড়ে।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
আপনার মতামত লিখুন :