বই পড়ে কী লাভ—এ প্রশ্ন করলে যিনি বই পড়তে অভ্যস্ত নন, তিনিও আপনার দিকে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকাবেন। আসলে বই পড়ার ইতিবাচক দিক এতটাই প্রতিষ্ঠিত একটা ব্যাপার, এটা নিয়ে দ্বিমত করার মানুষ পাওয়া কঠিন।
বই পড়লে জ্ঞান বাড়ে, মান বাড়ে—এটা সত্যি। কিন্তু বই পড়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিজ্ঞান কী বলে? সেটা নিয়ে আমরা কি ভেবেছি? বই পড়ার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো নিজের তথ্যভাণ্ডার সম্মৃদ্ধ করা।
স্কুলের পাঠবইগুলো যেমন আমাদের বিজ্ঞান, ইতিহাস বা অঙ্ক শেখায়, ঠিক তেমনি গল্পের বই আমাদের কল্পনাশক্তি বাড়ায়। বিজ্ঞান, সাহিত্য, সমাজবিজ্ঞানসহ বিচিত্র সব বই পড়লে নতুন তথ্য জানার পাশাপাশি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আরও বিস্তৃত হয়। কানাডার ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী তাঁর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞাতার প্রেক্ষীতে বলেন, ‘যারা বেশি বেশি গল্প-উপন্যাস পড়েন, অন্যদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বোঝা তাঁদের পক্ষে সহজ। এই ব্যাপারটা আমাদের সামাজিক দক্ষতায় উন্নতি ঘটায়।
বই মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। এটাকে মস্তিষ্কের এক ধরনের ব্যায়াম বলা যায়। তাই নিয়মিত বই পড়লে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে, চিন্তা করার ক্ষমতা উন্নত হয় এবং স্মৃতিশক্তি শাণিত হয়ে ওঠে। ফলে অনেক বেশি মনোযোগী ও বিশ্লেষণী দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে বই।
বই মানসিক চাপ কমাতে বড় ভূমিকা রাখে। মজার গল্প বা রোমাঞ্চকর উপন্যাস পড়ার সময় মানুষ সেই গল্পের মধ্যে ডুবে যায়। এটা বাস্তব জীবনের চাপ থেকে মুক্তি দেয়, মনকে প্রশান্ত করে। সুতরাং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বই পড়া খুবই উপকারি একটা অভ্যাস।
কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মনোবিজ্ঞানী কিথ ওকলে সাহিত্য এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন।
তাঁর গবেষণা বলছে, উপন্যাস বা গল্পের বই পড়া মানুষের সহানুভূতিশীলতা এবং সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং বাস্তব জীবনে সম্পর্কগুলোকে আরও সুসংহত করতে সহায়ক হয়।’
বই পড়লে বাড়ে কল্পনাশক্তিও। পাঠক গল্পের চরিত্রগুলোকে কল্পনা করতে শেখে, গল্পের দৃশ্যগুলো মনে মনে তৈরি করে ফেলে। এই কল্পনাশক্তেই পারে সেই পাঠকের ভেতর সৃজনশীলতা গড়ে তুলতে সহায়ক হয়।
বই পড়লে নতুন নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হয় পাঠক। এতে ভাষাগত দক্ষতা বাড়ে। বিশেষ করে যখন অন্য ভাষার বই পড় হয়, তখন সেই ভাষার নিয়ম-কানুনও আমাদের জানা সহজ হয়।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের গবেষক এমিলি শ্যুট দেখিয়েছেন, মাত্র ৬ মিনিট বই পড়লে মানসিক চাপ ৬৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। তিনি বলেন, ‘বই পড়া শুধু মনের প্রশান্তিই দেয় না, এটি আমাদের শারীরিক চাপও কমিয়ে দেয় এবং মস্তিষ্ককে শিথিল রাখে।’
একটি বই শেষ করতে ধৈর্য ও মনোযোগের প্রয়োজন হয়। বই পড়ার অভ্যাস ধীরে ধীরে মানুষের মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বই পড়া ব্যাপরটা নিজের সঙ্গে নিজের সময় কাটানোর সুযোগ করে দেয়। অনেক সময় মানুষ একা একটুখানি সময় কাটাতে চায়। কিন্তু একাকীত্ব আবার একঘেয়েমি ও মানসিকভাবে হমাশগ্রস্ত করে তুলতে পারে। কিন্তু বই পড়লে তেমনটা হয় না কখনো। তাই একাকী মুহূর্তগুলোতে বই ভালো সঙ্গীর ভূমিকা নেয়।
বই পড়ার অভ্যাস জ্ঞান ও বুদ্ধিকে যেমন শাণিত করতে সাহায্য করে, তেমনি ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার প্রেরণাও বই থেকে পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিন একটু হলেও বই পড়ার চেষ্টা করা উচিত।
ধন্যবাদ! শের ই গুল
সাংবাদিক/কলামিস্ট/সম্পাদক
আপনার মতামত লিখুন :