AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, সংরক্ষণ ও বাস্তবতা


Ekushey Sangbad
জয়নুল আবেদিন
০৩:০৪ পিএম, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, সংরক্ষণ ও বাস্তবতা

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বিশ্বের ৩০০ বছরের গণতান্ত্রিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে গণতন্ত্র কয়েকটি দেশে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমে জাতিরাষ্ট্রসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সমস্ত দেশেরও মূল লক্ষ্যে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। 
 

মানবাধিকার বিশ্বজুড়ে একটি চর্চিত বিষয়। কষ্টের কথা বিশ্বজুড়ে অহরহ লঙ্ঘিত বিষয়ও মানবাধিকার। মানবাধিকার দুটি শব্দের একত্রিত রূপ; মানব ও অধিকার। সহজ কথায় মানবের অধিকারই মানবাধিকার। মানুষ যখন তার অধিকার ঠিকভাবে পায় না তখনই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া হয়। আর তখনই শোরগোল ওঠে। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী নানা সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়-আসয় নিয়ে চর্চা হয়। কেন মানুষ তার সঠিক অধিকার পায় না তা আজন্ম লালিত জিজ্ঞাসা।


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। আর এর আলোকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে চার মূলনীতির ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংবিধান ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যেখানে সব নাগরিকের সমান অধিকার, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য স্হির করা হয়েছিল।
 

মানবাধিকার নিয়ে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞাগুলো কী বলে? মানব পরিবারের সকল সদস্যের জন্য সার্বজনীন, সহজাত, অহস্তান্তরযোগ্য এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকারই হলো মানবাধিকার। মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এক ধরনের অধিকার যেটি তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষমাত্রই এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সঙ্গে সহজাত ও আইনগত অধিকার। 


এছাড়াও মানবাধিকার হচ্ছে কতগুলো সংবিধিবদ্ধ আইন বা নিয়মের সমষ্টি; যা মানব জাতির সদস্যদের আচার আচরণ ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে বুঝায় এবং যা স্থানীয় ও আর্ন্তজাতিক আইন সমষ্টি দ্বারা সুরক্ষিত যা মৌলিক অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ বিষয় হিসেবে ধর্তব্য। ব্যক্তিগত মত, সজ্ঞানে অনেকে মানবাধিকারের এমন চর্চা করেন যা অন্যের ক্ষতিসাধন ও প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বে আমরা এমনই চর্চা দেখি। ফলে সমাজের অশান্তির সৃষ্টি হয়। বৈষম্য বাড়ে মানুষে মানুষে।

 
মানবাধিকার, জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত ও স্বীকৃত অধিকারসমূহ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার দুইটি পৃথক বিষয়, বৈশিষ্ট্য ও স্বরূপের দিক থেকেও এ দুটি সম্পূর্ণ আলাদা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় মানবাধিকারের সনদ ও জাতিসংঘ। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর বিশ্ব বড় কোনো যুদ্ধের মুখোমুখি হয়নি। বলা যায় এটিই জাতিসংঘের সবচেয়ে বড় অর্জন। তবে বৈশ্বিক শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অন্তরালে জাতিসংঘ সনদ ও মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রই কাজ করেছে। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশ তাদের সংবিধানেও মানবাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরেছে। বিভিন্ন বিষয়ে জাতিসংঘের অনেক সনদ থাকলেও মানবাধিকারের মতো এতো জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ আর কোনো বৈশ্বিক দলিল নেই।


জাতিসংঘ-সনদের চেয়েও মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রটি বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বলে অনেকে মনে করেন। অনেক দেশের মানবাধিকারের মানদণ্ড নির্ণয় ও প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই দলিলটি রেফারেন্স হিসেবে কাজ করে। মানবাধিকারের সনদের মাধ্যমে বিশ্বে মানবাধিকারের ধারণা ও সূচকের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এতসব নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়, ব্যাপক অর্থে মানুষে-মানুষে বৈষম্য কি রোধ করা গেছে? ধনী-দরিদ্রের, ক্ষমতাশালী ও ক্ষমতাহীনের মধ্যে বৈষম্য কি দেখতে পাই আমরা? উত্তর সহজ- হ্যাঁ। সারাবিশ্বে বৈষম্য বিদ্যমান। আর তাই হানাহানি, যুদ্ধ, বিলাপ ও অশান্তি। এক কথায় বলা যায়, মানবাধিকারের সংস্কৃতি এখনো পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। বিশ্বের খুব কম দেশ মানবাধিকারকে একটি সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে পরিপূরক বলা যায়। একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে তোলে। গণতন্ত্র ছাড়া মানবাধিকার কল্পনা করা যায় না। আবার মানবাধিকার অবহেলা করে নিজেকে গণতান্ত্রিক বলেও দাবি করা যায় না।

 
পঞ্চাশের দশকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে মানবাধিকার সনদ প্রণয়ন করা হয়। আর তা মানবিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই করা হয়েছিলো। মানবিক উন্নয়নের সঙ্গে শিক্ষার বিকাশ, সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ও রাজনৈতিক সচেতনতার সম্পর্ক গভীর। এগুলোর বিকাশ ঘটলে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা অস্বীকারের সংস্কৃতি গড়ে ওঠতে পারে না। মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- সকল মানুষ স্বাধীনভাবে এবং সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তারা যুক্তি ও বিবেকের অধিকারী এবং ভ্রাতৃত্বের মনোভাব নিয়ে তাদের একে অপরের প্রতি আচরণ করা উচিত। এ অধিকারগুলো মানুষের জন্মগত অধিকার। অথচ সব মানুষের সমান স্বাধীনতা, মর্যাদা ও অধিকার দৃশ্যমান না। কাজেই এই কথাটিকে একটি আদর্শ চেতনা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এটিই ওই অনুচ্ছেদের মূল কথা। সব মানুষ জন্মগতভাবেই স্বাধীন এটি বিশ্বাস করতে পারলে কোনো মানুষ বা জাতিগোষ্ঠীকে পরাধীন করে রাখা যায় না। বর্তমান বিশ্বে যে বৈষম্য তা মানুষের সহজাত স্বাধীনতার অবিশ্বাস থেকে জন্মলাভ করেছে। তাই বিশ্বে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আগে মানবাধিকারের আদর্শপাঠ জরুরি।


মানবাধিকরের চেতনা ও আদর্শ উপলব্ধি ব্যতীত বিচ্ছিন্নভাবে মানবাধিকারের সূচক পরীক্ষা করা ও সে অনুযায়ী বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রকৃত অর্থে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। জাতি-বর্ণ, লিঙ্গ-ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্যান্য মতাদর্শ, জাতীয় বা সামাজিক সূত্র ও অন্যান্য মর্যাদা-নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষই সমান। সব মানুষের সমান ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং সহজাত মর্যাদার স্বীকৃতি ছাড়া বিশ্বে শান্তি-স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তি রচনা করা সম্ভব না। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বিশ্ববাসী মানবাধিকার, মানব দেহের মর্যাদা ও মূল্য এবং নারী-পুরুষের সমান অধিকারের প্রতি তাদের বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছে। এটি একটি বৈশ্বিক অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকারই মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতাসমূহের ভিত্তি তৈরি করে। মানবাধিকারে সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ৩০টি ধারা রয়েছে। মানুষের অধিকার বাস্তবায়নে বিশ্ববাসীর অঙ্গীকারগুলো সুনির্দিষ্টভাবে সেখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। ঘোষণাপত্রটিকে মানবাধিকারের মৌলিক নীতিমালাও বলা যায়।
 

জাতিসংঘের অপরাপর মানবাধিকার-সংক্রান্ত দলিলগুলোও এই সনদকে অনুসমর্থন করে। বিভিন্ন দেশও এই সনদের অনুসমর্থনে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যায়। বাংলাদেশের সংবিধানেও রয়েছে এই ঘোষণাপত্রের ছায়া। এমনকি দেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রেও মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রের আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে। সংবিধানের বাইরেও মানবাধিকার বাস্তবায়নের জন্যে এদেশে বিভিন্ন আইন রয়েছে। মানবাধিকার একটি বিস্তৃত ধারণা। কাজেই, কোনো একটি আইন দিয়ে একে সীমাবদ্ধ বা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সবার মাঝে মানবাধিকারে বোধ জাগ্রত করতে হবে। ভাবতে আমার যেটুকু অধিকার তার বেশি পেতে গেলেই অন্যের অধিকার হরণ হবে; তাতেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে। এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী হচ্ছেও তাই।  


দেশে মানবাধিকারের উন্নয়ন কতোটুকু হয়েছে- সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য অধিকারহারা মানুষ নানাভাবে প্রতিবাদ করেছে এবং করছে। দেশের মানুষ নানাভাবে অর্থনৈতিক সংকট এবং মুক্তির জন্য তাদের সর্বশক্তি দিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করছে। জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় করতে পারছে না। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার নিরীহ জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গোটা বিশ্বে সাম্প্রতিক সময়ে কোথাও না কোথাও মানবজাতি তার নাগরিক ও মৌলিক রাষ্ট্রীয় অধিকারের জন্য যুদ্ধ-সংগ্রাম করছে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে অব্যাহতভাবে সেই দেশের নিরীহ বিভিন্ন ধর্ম-গোত্রের ওপর জুলুম-হত্যা চালাচ্ছে দেশটির সেনাসমর্থিত জান্তা সরকার। রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বাড়িঘর ধ্বংস করে জুলুম ও হত্যা করে তাদের বসতভিটা ফেলে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। সেসব মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। 


ফিলিস্তিনে মানুষ মার খেয়েছে দেদার ইসরায়েলের আগ্রাসনে। এখন সেখানে সাময়িক যুদ্ধতিরতি চলছে। একে একে বের হচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞের আরো বিভৎস খবর। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ভোগাচ্ছে বিশ্বকে। সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধ বিশ্বকে অস্থির করে রেখেছিল। যুদ্ধ মানেই মানবাধিকারের পরম লঙ্ঘন। নির্বিচারে সাধারণ মানুষ মার খাচ্ছে। জীবনই যেখানে থাকে না সেখানে মানবাধিকার সাধারণ হিসাব আর কি করা যায়? আর এসব বিশ্ব মোড়লদের আজব কূটচাল। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের অন্যরকম ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ। বিশ্ব শাসনের অদ্ভুত এক চলমান খেলা। চারপাশে মানবতা নীরবে-নিভৃতে কাঁদছে; কিন্তু শোনার কিংবা দেখার কেউ নেই। দুনিয়ার নিরীহ নিরস্ত্র মানুষ আজ জালিম শোষক-অস্ত্রবাজ শক্তির হাতে জিম্মি। প্রকৃতপক্ষে নিরীহ জনগণের অধিকার নিয়ে দুনিয়াব্যাপী যাদের কথা বলার সামর্থ্য আছে, তারা কিন্তু জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসছে না। 


শুধু বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ধরলেও ভয়ের কথা আসে। আইন ও সালিস কেন্দ্র বলেছে, ২০২৪ সালে ‘মব জাস্টিস’, অর্থাৎ গণপিটুনিতে মৃত্যু দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০২৪ সালের শেষ দিন, অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশ করা প্রতিবেদনে মানবাধিকার সংস্থা আসক আরো জানায়, বিদায়ী বছরটিতে বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড, সংখ্যালঘু নির্যাতন পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, মাজারে ও বাউলদের ওপর হামলাও বেড়েছে। প্রতিবেদনে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে চরম উদ্বেগজনক হিসেবে বর্ণনা করে আসক জানায়, ২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ১২৮ জন। আসক আরো জানায়, ২০২৩ সালে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিলেন ৫১ জন। ২০২৪ সালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে মানবাধিকার রক্ষায় ১৬ দফা সুপারিশ করেছিল আসক। গত ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে মানবাধিকার রক্ষায় ১৫ দফা দাবিও রাখা হয়েছিল। সুপারিশ ও দাবিগুলো একই রকম। তার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা যেকোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা, যেমন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এখতিয়ারবহির্ভূত আচরণ ইত্যাদির অভিযোগ উঠলে তা দ্রুততার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে হবে এবং সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শাস্তি প্রদান করতে হবে। দেশের যে-কোনো নাগরিককে আটক বা গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সম্পূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। নাগরিকের সমবেত হওয়ার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। 


মব জাস্টিসের মতো ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ধর্মীয় ও জাতীগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিরও উল্লেখ রয়েছে দাবি ও সুপারিশে। বলা হয়েছে, ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি করে কোনো সহিংসতার ঘটনা যেন না ঘটে, তার জন্য পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এসব সুপারিশ কাগজে-কলমে থেকে যায়। বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় চরমমাত্রায়। বলা চলে বিগত বিংশ শতাব্দী এবং বর্তমান একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জটিল মানবীয় বিষয় হলো মানবাধিকার। বর্তমানে তা এক বিরাট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। প্রকৃত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ কেবল তখনই সম্ভব হবে, যখন তা মানুষ সংক্রান্ত প্রকৃত বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শন থেকে উৎসারিত হবে। একইসঙ্গে ক্ষমতাধর ও শাসকদের ভাবনার উদয় হতে হবে বৈষম্য-নির্যাতন দূর করে একটি শোষণহীন শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গঠনের জন্য মানবাধিকার সুরক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

 

জয়নুল আবেদীন 

সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

Link copied!