AB Bank
  • ঢাকা
  • সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

মানব সৃষ্টির সূতিকাগার নারীর নিরাপত্তা কোথায়?


Ekushey Sangbad
এস এম নুর ইসলাম
০৩:০৮ পিএম, ২২ মার্চ, ২০২৫
মানব সৃষ্টির সূতিকাগার নারীর নিরাপত্তা কোথায়?

সৃষ্টির সেরাজীব মানুষ তৈরির সূতিকাগার ও মৌলিক কারখানা হলেন একজন নারী। এই নারী যতক্ষন নিরাপদ থাকেন ততক্ষন সমাজ নিরাপদ থাকে। আর নারী যখন ভূলুণ্ঠিত হয়, তখন ভূলুণ্ঠিত হন গোটা সমাজ, পুরো রাস্ট্র আর পুরো সভ্যতাই! নারীর গর্ভে জন্ম নেয়া এই সমাজের কোটি কোটি বিবেকবানদের আজ এই মহাসত্যটাকে গভীরভাবে অনুধাবন করা দরকার।


হাজার বছরের সুজলা-সুফলা সোনার বাংলার মানুষেরা কি আজ ভুলতে বসেছে? ‘নিরাপদ নারীত্বেই সভ্যতা নিরাপদ’। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি অনেকটাই দৃশ্যমান। ছিনতাই, ডাকাতি, হামলা, লুটপাট ছাড়াও ঘটছে মব সহিংসতার মতো ঘটনা। এর ক্ষতিকর প্রভাব দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর পড়লেও বিশেষত নারীদের নিরাপত্তাহীনতার বহুমাত্রিক চিত্র ফুটে উঠেছে বর্তমান বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় চলমান ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায়। সাম্প্রতিক সময়ে নারীর প্রতি নির্যাতনের প্রধান ধরনের মধ্যে ধর্ষণ সবার শীর্ষে। বর্তমানে দেশে কন্যাশিশুরাও নিরাপদ নয়। 

গতবছর (২০২৪ সালে) সারাদেশে ৫১৬ জন কন্যাশিশু ও নারী ধর্ষণের ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ, অধিকাংশ সময় ভূক্তভোগীরা এ ধরনের ঘটনাগুলো বর্ণনা করতে ভয় পায়। ফেনীর নুসরাত জাহান ও মাগুরার আছিয়ার মত শিশু ধর্ষণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা সবসময় আলোচনায় আসেনা। একই বছরে ধর্ষণের পর ৮১টি কন্যাশিশুর হত্যার ঘটনা ঘটে এবং ১৩৩টি কন্যাশিশু ধর্ষণের পর আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এদিকে ২০২৫ সালের প্রথম দুই মাসেই (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) ৯৭ জন কন্যাশিশু ও নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যা এখন শুধু সামাজিক ব্যাধিই নয়, বরং বর্তমানে এটি জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে। এই পরিসংখ্যান শুধু বাংলাদেশের কিশোরী-বৃদ্ধ বা প্রাপ্তবয়স্ক নারীদেরই নয়, ধর্ষণের শিকার কন্যাশিশুদের বর্তমান পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরছে। তাঁরা পারিবারের বাইরে বের হলেও ধর্ষণ ও সহিংসতার মতো ঘটনার শিকার হচ্ছেন।


বাংলাদেশে নারী নির্যাতন এবং বিশেষ করে ধর্ষণের মতো অপরাধ আশঙ্কাজনকভাবে দিন দিন বেড়ে চলার অন্যতম প্রধান কারণ  অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি না হওয়াকে দায়ী করা হয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষকেরা আইনের দুর্বলতার কারণে পার পেয়ে যায়, যা তাদের আরও অপরাধে জড়াতে উৎসাহিত করে এবং অপ্রতিরোধ্য করে তোলে। একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৪ হাজার ৩৭২টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৫টি মামলায় দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এই পরিসংখ্যানই স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, ধর্ষণের বিচারব্যবস্থা কতটা দুর্বল এবং অপরাধীরা কীভাবে পার পেয়ে যায়। আর একারণেই দেশের সাধারন জনতা ক্ষিপ্ত হচ্ছে এবং মব সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে শুধু নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনাই বৃদ্ধি পাবেনা এ চিত্র দেশের অগ্রযাত্রার পথেও অন্যতম প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। শুধু মানববন্ধন ও মিছিল করেই এ সহিংসতা বন্ধ করা যাবেনা। থাকতে হবে জাতিগতভাবে মিশন-ভিশন ও যথাযথ এ্যাকশান। মানুষকে যেহেতু বলা হয় দ্বিজ যার অর্থ ‘দুই জন্ম’- প্রথম জন্ম শারীরিক, দ্বিতীয় জন্ম আধ্যাত্মিক, আত্মিত বা আত্মগঠন। 

আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে হয়তো অধিকাংশেরই এই দ্বিতীয় জন্ম হয়না, যার ফলশ্রুতিতেই মানব সৃষ্টির সূতিকাগার নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো ঘটনার দিন দিন নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি হয় বাংলাদেশে। নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ নামক এই ভাইরাসকে শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণ ও দমন নয়, গ্রহণ করতে হবে নির্মূল পলিসি। সংগত কারণেই সরকারের পাশাপাশি প্রত্যেক সচেতন নাগরিককে যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিষ্ঠা করতে হবে ধর্মীয় অনুশাসন, রচনা করতে হবে নৈতিক শিক্ষার ভিত্তিমূল ও সামাজিক মূল্যবোধ। মাদকের ক্ষেত্রে গ্রহণ করতে হবে জিরো টলারেন্স নীতি এবং নির্যাতনকারীকে সম্মিলিতভাবে সমাজ থেকে বয়কট করার পাশাপাশি আইনি কাঠামোকে শক্তিশালী করে অপরাধভেদে অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে তবেই নিরাপদ থাকবে আমাদের সভ্যতা অন্যথায় এ প্রশ্ন থেকেই যাবে ‘মানব সৃষ্টির সূতিকাগার নারীর নিরাপত্তা আজ কোথায়’?


লেখক: এস এম নুর ইসলাম
সম্পাদক, সৃজনশীল সাহিত্য সাময়িকী রূপান্তর

Link copied!