AB Bank
  • ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল, ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস: বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত: সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ


Ekushey Sangbad
বেলায়েত হোসেন, ঢাকা
০৭:৫৫ পিএম, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস: বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত: সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ

৭ এপ্রিল-বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। ১৯৪৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) প্রতিষ্ঠার স্মরণে এই দিনটি বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পালিত হয়ে আসছে। ২০২৫ সালে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ। এই দীর্ঘ সময়ে স্বাস্থ্যখাত যেমন অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে, তেমনি এখনও রয়েছে কিছু প্রকট চ্যালেঞ্জ ও ব্যর্থতা।

স্বাস্থ্যখাতের শুরুর ইতিহাস

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত। তখন গোটা দেশে মাত্র ৬০০০ চিকিৎসক, ছিল অপ্রতুল হাসপাতাল, ওষুধ এবং জনবল সংকট। সেই সময় থেকেই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়াস শুরু হয়।


স্বাস্থ্যখাতের উল্লেখযোগ্য সাফল্য

১. প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ:
১৯৯৮ সালে প্রায় ১৮,০০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। বর্তমানে সক্রিয় ক্লিনিক সংখ্যা প্রায় ১৪,০০০। গ্রামীণ জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি বিপ্লব।

২. শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস:
১৯৯০ সালে যেখানে প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুহার ছিল ৯৭, তা কমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫। টিকাদান, পরিবার পরিকল্পনা ও সচেতনতা বৃদ্ধির ফলেই এই সাফল্য।

৩. জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি (EPI):
বর্তমানে শিশুদের প্রায় ৯০%-ই টিকাদান কর্মসূচির আওতায় রয়েছে। এর ফলে বহু সংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেক কমেছে।

৪. এনজিও ও বেসরকারি সংস্থার অবদান:
ব্র্যাক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রভৃতি সংস্থা জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

৫. পরিবার পরিকল্পনায় সফলতা:
জন্মহার হ্রাস এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল দেশ।

৬. ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা:
ই-হেলথ, টেলিমেডিসিন এবং হেলথ ইনফরমেশন সিস্টেম চালুর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর হয়েছে।

৭. কোভিড-১৯ মোকাবিলায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া:
স্বল্প সম্পদেও বাংলাদেশ দক্ষভাবে টিকাদান কর্মসূচি, আইসোলেশন ও কন্টাক্ট ট্রেসিং পরিচালনা করে সাফল্য দেখিয়েছে।


স্বাস্থ্যখাতের চ্যালেঞ্জ ও ব্যর্থতা

১. বাজেট ঘাটতি:
স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ১%-এর নিচে, যেখানে WHO-এর সুপারিশ ৫%। ফলে অবকাঠামো ও জনবল উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

২. শহর-গ্রাম বৈষম্য:
শহরে আধুনিক সেবা থাকলেও গ্রামীণ এলাকাগুলো এখনো দুর্বল অবকাঠামো ও ডাক্তার সংকটে ভুগছে।

৩. চিকিৎসার গুণগত মান:
প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্সের অভাব, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ও পরীক্ষার সংস্কৃতি, ও দুর্নীতি স্বাস্থ্যসেবার মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

৪. মানসিক স্বাস্থ্য অবহেলা:
আজও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো দুর্বল। উপযুক্ত মনোরোগ চিকিৎসক ও পরিষেবা সীমিত।

৫. বেসরকারি খাতের অনিয়ন্ত্রিত আচরণ:
অনেক ক্লিনিক অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা, অতিরিক্ত বিল ও প্রতারণামূলক আচরণ করে। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো কার্যকর নয়।

৬. জনবল সংকট:
প্রতি ১০,০০০ জনে প্রয়োজন ২৩ স্বাস্থ্যকর্মী, কিন্তু বাংলাদেশে রয়েছে মাত্র ৯-১১ জন। নার্স ও প্যারামেডিকের অভাব প্রকট।

৭. দুর্বল রেফারেল ব্যবস্থা:
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান থেকে সঠিক সময়ে রোগী রেফার না করার ফলে জটিল রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।


ভবিষ্যৎ করণীয়

  • স্বাস্থ্য বাজেট ৫%-এ উন্নীত করা।
  • গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার পরিকাঠামো ও জনবল শক্তিশালী করা।
  • স্বাস্থ্যশিক্ষা ও জনসচেতনতা কর্মসূচি জোরদার করা।
  • মানসিক স্বাস্থ্য অন্তর্ভুক্তিকরণ ও মানসম্পন্ন জনবল তৈরি।
  • দুর্নীতি দমন ও সুশাসন নিশ্চিত করা।

আজীবন সুস্থ থাকতে ঘরোয়া স্বাস্থ্য পরামর্শ

  • দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন – হাইড্রোথেরাপি।
  • হালকা গরম, দুধ ছাড়া চা পান করুন – অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর।
  • ভিটামিন সি যুক্ত ফলমূল নিয়মিত খান – ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।
  • ধূমপান ও সবধরনের নেশা বর্জন করুন।
  • লাল মাংস (রেড মিট) ও ফার্মের মুরগি এড়িয়ে চলুন।
  • প্রচুর শাকসবজি, সালাদ, সামুদ্রিক মাছ ও টকদই খান।
  • তেল, চর্বি, ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • প্রতিদিন এক চামচ মধু খাওয়া যেতে পারে।
  • রান্নায় সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করুন।

উপসংহার

স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে অগ্রগতি স্পষ্ট, বিশেষ করে শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য, টিকাদান, পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে। তবে এখনো বাজেট ঘাটতি, জনবল সংকট, ও সেবার বৈষম্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা’ অর্জনে সরকার, বেসরকারি খাত এবং নাগরিক সমাজকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে।

 

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলাম লেখক

Link copied!