আপনি কি মনে করেন, যদি আপনার কাছে অন্য কারো সাহায্য না থাকে, তবে আপনি কীভাবে জীবন চালাবেন?
কীভাবে নির্ভরশীলতা আপনার জীবনে অগ্রগতির পথ বন্ধ করে দিতে পারে, এবং কীভাবে আপনি নিজেকে এর থেকে মুক্ত করতে পারবেন।
নির্ভরশীলতা এমন এক অভ্যেস, যা আস্তে আস্তে আপনার জীবনকে অদৃশ্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। এক সময় আপনি যদি আপনার সব কিছু অন্যের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলেন, তাহলে আপনার জীবন থেকে স্বাধীনতা হারিয়ে যায়।
আপনি যদি কাউকে বা কোনো কিছুকে আপনার জীবনের জন্য অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করেন, তবে একটা সময় এমন আসবে, যখন আপনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে অক্ষম হয়ে পড়বেন।
ধরি, আপনি আজ পুরোপুরি কাউকে নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছেন, সে আপনার জীবনের পথের দিশারি, সে আপনার পাশে থাকলে আপনি সব কিছু সহজেই করতে পারেন, কিন্তু যদি কোনো কারণে সেই ব্যক্তি চলে যায় বা আর সাহায্য না করতে পারে? তাহলে আপনি কি করবেন? তাকে আপনার পাশে না পেলে, আপনি অন্ধকারে পড়ে যাবেন না?
এটাই নির্ভরশীলতার ভয়ংকর প্রভাব। আপনার সব কিছুর অভ্যন্তরীণ শক্তি হারিয়ে যায়।
আপনি যখন নিজেকে অন্যের সাহায্যে পরিচালিত করতে শুরু করেন, তখন সেই সাহায্য একদিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
যদি সেটা হয়, আপনি নিজেকে কীভাবে সামলাবেন? সেই সময় কি আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন? আপনার স্মৃতির জোর একদিন হয়তো ফুরিয়ে যাবে, এবং আপনি নিজের পথের দিশা হারিয়ে ফেলবেন।
ধরি, আপনার জীবনের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো আপনার কার্যক্রম বা চাকরি। হয়তো আপনি আজ আপনার কাজে অন্যান্য মানুষকে নির্ভরশীল করে রেখেছেন, আপনিও তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। কিন্তু যদি একদিন আপনি সে ব্যক্তির সহযোগিতা না পান, তাহলে কী হবে? সে যদি অপ্রত্যাশিতভাবে চলে যায় বা চলে যায়, তাহলে আপনি নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না, এবং আপনার পেশাগত জীবন হতাশার দিকে চলে যাবে।
এরপর, যদি আপনি পরিবার বা বন্ধুদের ওপর আত্মবিশ্বাসের জন্য নির্ভর করেন, তাদের উপস্থিতি এবং সহায়তায় আপনার মানসিক শান্তি খোঁজেন, কিন্তু যখন আপনি একা হয়ে যাবেন, তখন কি আপনি সে শান্তি খুঁজে পাবেন?
আপনার মানসিক শক্তি কি ততটাই হবে? এটাই হল সেই ভয়ংকর অংশ, যেখানে আপনি একসময় নিজেকে অসহায় মনে করবেন। আপনার শরীরের শক্তি যতই থাকুক না কেন, আপনি অনুভব করবেন, আপনি যেন একটা ভাঙা নৌকা, যেটি কোনও দিকে চলে যাচ্ছে না।
এভাবেই নির্ভরশীলতা আপনাকে বাঁধনহীন করে ফেলে। যখন আপনি কিছু দিনের জন্য অন্যদের হাতের উপর নির্ভরশীল হয়ে যান, তখন আপনার আত্মবিশ্বাস এক দিন একেবারে ভেঙে পড়বে যদি সেই হাত আর না থাকে। তবে, আপনি যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেন, এবং নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনেন, তবে কোনোভাবেই আপনি আর ভেঙে পড়বেন না। আপনার মধ্যে সেই শক্তি থাকবে, যা আপনাকে কোনো বাধা বা সমস্যা মোকাবিলা করতে সক্ষম করবে।
এখনই সময়: নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসুন
তাই, যদি আপনি ভবিষ্যতে সত্যি সত্যি সফল হতে চান, আপনি যদি চান, আপনার জীবনে কারো ওপর নির্ভরশীলতা না রেখে এগিয়ে চলতে, তবে আজ থেকেই এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। নিজের শক্তির উপর বিশ্বাস করুন, এবং ধীরে ধীরে আপনি দেখতে পাবেন যে, আপনার যাত্রা হয়ে উঠবে বেশি স্বাধীন এবং আত্মবিশ্বাসী। নির্ভরশীলতা আপনার পথের জন্য অচিরেই বাধা হয়ে দাঁড়াবে—এটা আপনি আজ থেকেই বুঝতে পারেন এবং নিজেকে বদলানোর কাজ শুরু করে দিন।
নির্ভরশীলতার ভালো দিক
নির্ভরশীলতা কখনও কখনও উপকারী হতে পারে, তবে তা যদি সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়। যখন আপনি অস্থির পরিস্থিতিতে থাকেন, তখন অন্যের সাহায্য নেয়া বা সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়া আপনার জন্য একমাত্র সমাধান হতে পারে। ধরা যাক, আপনি নতুন চাকরি শুরু করেছেন বা নতুন কোনো কাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই অবস্থায় আপনি যদি কারো সহায়তা পেয়ে থাকেন, তাহলে তা আপনার উন্নতির পথে বড় পদক্ষেপ হতে পারে।
এছাড়া, পারিবারিক কিংবা সম্পর্কের দিক থেকে নির্ভরশীলতা কিছুটা স্বাভাবিক। আমরা সবাই একজন বিশেষ মানুষের উপর নির্ভরশীল থাকি, কিন্তু যদি তা ভালোভাবে ব্যালেন্স করা হয়, তখন তা আমাদের জীবনে শান্তি এনে দেয়।
নির্ভরশীলতার খারাপ দিক
তবে, এক সময় আপনি বুঝতে পারবেন যে, নির্ভরশীলতা এক ভয়ংকর জালের মতো। আপনি যদি একজন মানুষের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হন, তখন আপনি নিজের পরিচয় হারিয়ে ফেলতে পারেন। যখন আপনার জীবনে কোনো সঙ্কট বা বিপদ আসে, আপনি দেখতে পাবেন যে আপনি সে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো প্রস্তুত নন।
উদাহরণস্বরূপ, একজন চাকরিজীবী মানুষ যদি তার পুরো জীবন পাল্টাতে চায় বা নতুন ব্যবসা শুরু করতে চায়, কিন্তু সে তার জীবনের পুরো সিদ্ধান্ত অন্যদের উপর নির্ভর করে নিয়ে থাকে, তখন সে নিজের দায়িত্ব নিজের হাতে নেবার সাহস হারিয়ে ফেলে। এই নির্ভরশীলতার কারণে সে নিজের ক্ষমতাও খুঁজে পায় না, এবং শেষ পর্যন্ত সাফল্যের পথে সে একেবারে হোঁচট খায়।
এখানেই আসে সবচেয়ে বড় বিপদ: আত্মবিশ্বাসের অভাব। আপনি যখন নিজের জীবন এবং সিদ্ধান্তের দায়িত্ব অন্যের হাতে দেন, তখন আপনার ভিতরের শক্তি, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়। আপনি যেখানেই যান, ভয় আর সন্দেহ আপনাকে ঘিরে রাখে, কারণ আপনি জানেন, আপনি তাদের উপর নির্ভরশীল।
কীভাবে নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসবেন?
১. আত্মবিশ্বাস তৈরি করুন
আপনি যদি নিজের উপর নির্ভরশীল হতে চান, প্রথমে আপনাকে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে শিখুন, কখনোই অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে ভয় পাবেন না। যখন আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন নিজের আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতাকে গুরুত্ব দিন। নিজের ছোট ছোট সাফল্যগুলোকে মনে রাখুন; এসবই আপনাকে বড় সিদ্ধান্ত নিতে সাহস যোগাবে।
২. লক্ষ্য স্থির করুন
আপনার জীবনে নির্দিষ্ট লক্ষ্য রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য না থাকলে, আপনি শুধু অন্যদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবেন। আপনি যখন আপনার নিজস্ব লক্ষ্য স্থির করবেন, তখন আপনার শক্তি এবং কর্মক্ষমতা দুইই বৃদ্ধি পাবে।
৩. আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টায় থাকুন
নির্ভরশীলতা থেকে বের হতে, প্রথমে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। আপনি কি করতে পারেন, সে বিষয়ে আত্মবিশ্বাস থাকা উচিত। নিজের দক্ষতা বিকাশে মনোযোগ দিন এবং নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন।
৪. জীবনে সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা রাখুন
নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়া শুরু করুন। হয়তো শুরুতে একটু ভয় লাগবে, কিন্তু এই প্রক্রিয়াটি আপনাকে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী এবং শক্তিশালী করে তুলবে। আপনি যখন নিজের পথে চলতে শিখবেন, তখন অন্যদের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
৫. পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে নিশ্চিত থাকুন
আপনি যে পথে হাঁটছেন, তার পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য বিশ্বাস রাখুন। কখনোই নিজের পথ থেকে সরে যাবেন না, শুধুমাত্র অন্যদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলার জন্য। আস্থা রাখুন নিজের ক্ষমতায়, এবং সাফল্য আসবে।
হৃদমের শেষ বার্তা :
নির্ভরশীলতা একটি খারাপ অভ্যাস, কিন্তু এটি বদলানো সম্ভব। জীবনে যদি আপনি সত্যিই সফল হতে চান, তবে আপনাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। অন্যদের সাহায্য নেয়া খারাপ নয়, তবে যদি সেই সাহায্যের ওপর আপনার পুরো জীবন চলে, তবে আপনি কখনোই সত্যিকারের সাফল্য পেতে পারবেন না। নিজের পথে এগিয়ে যান, আর দেখুন কিভাবে আপনার জীবন বদলে যায়।
এখনই সময়, নিজেকে শক্তিশালী করে তোলা এবং নিজের সাফল্য গড়ার।
আপনার পথ নিজেই তৈরি করুন, আর নিজের উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে চলুন।
একুশে সংবাদ//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :