জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি বলেছেন, দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ উর্ধ্বগতি নিন্ম আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকাকে দুর্বিষহ করে তুলছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে নিত্য পণ্যের এমন কোনো দ্রব্য নেই, যার দাম বৃদ্ধি পায়নি? এদের জন্য দেশের গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা আর উন্নয়নের উজ্জ্বলতা ম্লান হয়ে পড়ছে। এতে করে স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের আত্মা কষ্ট পাচ্ছে।
তিনি বলেন, সুবিধাবাদী দুর্নীতিবাজদের জন্য দেশপ্রেমিক জনতার এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়নি। সর্বগ্রাসী দুর্নীতি এখন ক্যান্সারের রূপ নিয়েছে। এদের কঠোর হাতে দমন করুন।
সোমবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর গুলশানে এক হোটেলে জাতীয় পার্টি আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিতির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
সবাইকে মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে নয় মাসের মুক্তি সংগ্রামে লাখ শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত হয় লালসবুজের সার্বভৌম বাংলাদেশ। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অর্ভূথান, ৭১ এর স্বাধীনতাযুদ্ধ বাঙালীর এক গৌরবগাথা অহংকার। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ নানা বিবর্ণ সময় অতিক্রম করে এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত। যার পথধারায় দেশের স্বর্ণউজ্জল উন্নয়ণের ইতিহাসে, নয় বছরের সফল রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাম লিখা রয়েছে।
রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলে গেছেন, "মুক্তিযোদ্ধারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান"। তিনি মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ-ক্ষুধা, দারিদ্রতা ও বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পল্লীবন্ধু মহান স্বাধীনতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনেক কাজ করে গেছেন, যা জাতি আজও স্মরণ করে। সাভারের স্মৃতিসৌধের পূর্ণাঙ্গ রূপ দান, শহীদ মিনার আধুনীকিকরণ, মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে বড় বড় উন্নয়ন কর্মকান্ড পল্লীবন্ধুর হাত ধরেই হয়েছে। জীবন ও মৃত্যুর মাঝে পল্লীবন্ধু এরশাদ অসংখ্য র্কীতি গড়ে গেছেন।
তিনি বলেন, অসহায় হতদ্ররিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেই রাজনীতি ও সরকার পরিচালনা করে গেছেন পল্লীবন্ধু। জাতীয় পার্টির শাসনামলে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এরশাদ ছিলেন কঠোর। আর রমজান মাসে নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে তাঁর ছিল কঠোর নজরদারি। প্রধানমন্ত্রীর চেষ্টায় উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনাকে তোয়াক্কা না করে সব নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে চলছে। তিনি বলেন, সিয়াম সাধনার পবিত্র এই মাসে দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভেদ নেই। এরশাদের রেখে যাওয়া নির্দেশনামতেই চলবে পার্টি। যারা তাঁর নির্দেশনা মানবেন না, তারা পার্টি ও নিজের ক্ষতি ডেকে আনবেন। নতুন পুরাতন নবীন প্রবীণ সব ত্যাগি নেতাকর্মীদের একসঙ্গে নিয়েই দলের কর্মকান্ড পরিচালনা করলে, পার্টি শক্তিশালী হবে। গণতন্ত্রের মূল শর্ত হচ্ছে নির্বাচন, যথা সময় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সাংবিধানিক ধারা মেনেই হবে সেই নির্বাচন। জাতীয় পার্টি বরাবরই নির্বাচনমূখি দল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পার্টি সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। তাই ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে। দলকে তৃণমূল পর্যায়ে আরো সু সংগঠিত করতে হবে। তাই এখন থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ নিজ আসনে গণসংযোগ শুরু করতে হবে। এজন্য সর্তকতার সঙ্গে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
রওশন এরশাদ বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তবে এক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হলে পার্টি সংস্কার করতে দ্রুত কাউন্সিল শেষ করতে হবে। সে জন্য জেলা পর্যায়ের নেতৃত্ব এখনই ঠিক করতে হবে। রমজানের পর জাতীয় পার্টি ব্যাপক সাংগঠনিক কর্মসূচি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমাদের দরজা সব দেশপ্রেমিক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল-মত ও ব্যক্তির জন্য খোলা আছে। তিনি বলেন, মাহে রমজানের পবিত্র এই মাসে চলুন, আমরা সবাই আল্লাহর দরবারে উন্নয়ণের মহাকারিগর পল্লীবন্ধু এরশাদের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ তালা যেনো উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।
এস এম আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পল্লীবন্ধুপুত্র রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ এমপি, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিরোধী দলীয় নেতার মূখপাত্র কাজী. মামুনূর রশীদ, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সরোয়ার মিলন, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, সাবেক উপদেষ্টা রফিকুল হক হাফিজ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আক্তার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রওশন আরা মান্নান এমপি, সাবেক উপদেষ্টা অ্যাড. জিয়াউল হক মৃধা ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নূরু।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সাল চিশতি, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, সাবেক এমপি অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, সাবেক ছাত্র নেতা মনিরুজ্জামান টিটু, সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মামুনূর রশীদ, ইঞ্জিনিয়ার ইকরাম খান, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম তরুণ, অ্যাড. অশোক কুমার ঘোষ, নারী নেত্রী মনোয়ার তাহের মানু, শারমিন পারভিন লিজা, কেয়া চৌধুরী, আব্দুল আজিজ, শ্রমিক নেতা সাখাওয়াত হোসেন, এম জাহের, শাহ জামাল রানা, ডা. সেলিনা, হাসনা হেনা, এজাজ আহমেদ খান, মো. কামাল হোসেন, মঞ্জুরুল হক সাচ্চা, কামাল খন্দকার, নজরুল ইসলাম, শেখ রুনা, জহির উদ্দিন জহির, ইসরাফিল মিয়া, আজমল হোসেন জিতু, ইদ্রিস আলী, ইমদাদুল হক, সাজিউল ইসলাম রকি, জাতীয় ছাত্র সমাজের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক হাফসা সুলতানা, সদস্য সচিবআবু সাঈদ লিয়ন, জাপা নেতা শফিকুল ইসলাম, মিশু আহমেদ, এবি মাসুম রেজা, জিয়াউল হক জুয়েল প্রমূখ।
একুশে সংবাদ.কম/আ.জ.প্র/জাহাঙ্গীর
আপনার মতামত লিখুন :